এই গাছ ইউরোপ, ভূ মধ্যসাগরীয় অঞ্চল, উত্তর পূর্ব আফ্রিকা, পশ্চিম এশিয়া এবং দক্ষিন -পশ্চিম ভারত ছাড়াও হিমাচল প্রদেশের কিছু অঞ্চলে দেখা যায়। এই উদ্ভিদ মূলত চাষ করা হয় ল্যাভেন্ডার তেল উৎপাদন এর জন্য। এই গাছ থেকে প্রাপ্ত তেল এন্টিসেপটিক হিসাবে ব্যবহার করা হয়। এছাড়া সুগন্ধি দ্রব্য, প্রসাধনী দ্রব্য প্রস্তুতিতে এবং নানান কাজে এর বহুল ব্যবহার হয়। সারা পৃথিবীতে ল্যাভেন্ডার এর প্রায় ৪৭ টি প্রজাতি রয়েছে।
যদিও বাংলাদেশে খুব কম বাড়িতেই এই ল্যাভেন্ডার চাষ করা হয়। এটিকে চাষের জন্যে সুনিষ্কাশিত মাটিতে পুর্ণ রৌদ্রে চারা রোপণ করবেন। এই গাছ বেশী স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ পছন্দ করে না তাই মাটি শুকনো আছে কিনা তা দেখে ভালমত পানি দেবেন।
ফসল সংগ্রহ
কুঁড়ি এলেই ল্যাভেন্ডার সংগ্রহ করে ফেলা উচিৎ এবং তা ফুল ফোঁটার আগেই করতে হয়। এতে আপনি তা থেকে অধিক ভাল রঙ এবং সুগন্ধ পাবেন। একগুচ্ছ ল্যাভেন্ডার ডাঁটা গোড়ার কাছে ধরে ধারালো কাঁচি দিয়ে কাঁটবেন। গাছগুলো আঁটি বেঁধে সরাসরি সূর্যের আলো পড়ে না এমন কোন উষ্ণ-শুষ্ক জায়গায় উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখুন। ২-৪ সপ্তাহ পর এটি ব্যবহার করার উপযোগী হবে। পাতা এবং ফুলের পাপড়ি ঝেড়ে একটি বায়ুরোধি বয়ামে ভরে রাখুন।
ল্যাভেন্ডার বিশেষ পাঁচটা গুণ যা বহুলভাবে ব্যবহৃত।
১. ফাংগাল ইনফেকশন
মেডিকেল মাইক্রোবায়োলজির এক জার্নালে এটা জানা গেছে যে এই ল্যাভেন্ডার অয়েল ছত্রাক ঘটিত যেকোনো রোগের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী। মানবদেহের শরীরে বিশেষত আমাদের ত্বকে যে সমস্ত ছত্রাক ঘটিত ইনফেকশন সৃষ্টি হয়ে থাকে তার মোকাবিলায় এই তেল যথেষ্ট কার্যকরী। এই প্রেম শুধুমাত্র আমাদের দেহের ছত্রাকের আক্রমণ কে কমায় না, সাথে ফাংগাল ইনফেকশন না হওয়ার জন্য প্রতিরোধক ক্ষমতা ও আমাদের ত্বকে কিছুটা গড়ে তোলে।
২. আঘাত এবং চুল পড়া
অল্টারনেটিভ মেডিসিনের এক জার্নাল বলছে যে ত্বকের আঘাতের মোকাবিলার ক্ষেত্রেও এই তেল এর ভূমিকা রয়েছে। বিজ্ঞানীরা ল্যাবরেটরি তে ইঁদুরের উপর পভিডন আয়োডিন সলিউশন, ল্যাভেন্ডার অয়েল, এবং স্যালাইন সলিউশন ব্যবহার করেন। দেখা গেছে যে ল্যাভেন্ডার অয়েল অনেকটাই বেশি কার্যকর হয়েছে। এর থেকে জানা যায় যে ল্যাভেন্ডার অয়েল আঘাতপ্রাপ্ত জায়গা ঠিক হবার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করার ক্ষমতা রাখে। একইভাবে এই ল্যাভেন্ডার অয়েল চুল পড়া প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রেও সমানভাবে কার্যকরী। অনেকেই চুল পড়া বা এলোপেসিয়া রোগে ভুগতে থাকেন যে রোগে মাথার কিছুটা অংশ থেকে চুল ঝরে পড়ে যায়। ল্যাভেন্ডার অয়েল এই রোগকেও প্রতিহত করে।
৩. অবসাদ
এই তেল সব থেকে বেশি ব্যবহার করা হয় অবসাদ, স্ট্রেস বা দুশ্চিন্তা থেকে সাময়িক বা সম্পূর্ণ মুক্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে। ল্যাভেন্ডার তেল থেকে পাওয়া যায়। মেডিকেল জার্নাল বলে যারা সাময়িক অবসাদে ভুগছেন, তাদের ক্ষেত্রে এই তেল অধিকভাবে কার্যকরী। অল্পেতে যারা নার্ভাস হয়ে যান, তাদের জন্যেও এই তেলের উপকার আছে।
৪. ঘুম বাড়ায় এবং পেশীর ব্যাথা কমায়
অনেকেই আছে যারা রাতে ঠিকঠাক ঘুমাতে পারেন না। তাদের অনেককেই ঘুমের জন্যে চিকিৎসকেরা ঘুমের হালকা ওষুধ দিয়ে থাকেন। নিয়মিত এই ওষুধ খেয়ে নিজের নির্ভরশীলতা বাড়ানোর থেকে ল্যাভেন্ডার অয়েলকে বেছে নিতে পারেন। হালকা করে এই তেল ম্যাসাজ করে বা এক ফোঁটা নিজের বালিশে ফেলে দেখুন, অবসাদ কাটার সাথে সাথে নিজের থেকেই ঘুম এসে যাবে। সুগন্ধি থেরাপিতে এই ব্যবহার বারবার বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন। অনেকে শরীরচর্চার ক্ষেত্রে জিমে গিয়ে থাকেন। শুরুতে বা প্রাকটিসের সময় অল্প বিস্তর গা, হাত, পা ব্যাথা সবার হয়। ব্যাথা কমাতে ওষুধ খাওয়ার আগে এই ল্যাভেন্ডার অয়েল দিয়ে ম্যাসেজ করতে পারেন। কাজ দেবে।
৫. পোকামাকড় তাড়ানোর ক্ষেত্রে
গরমকাল চলে এসেছে। এই সময় পোকামাকড়ের উপদ্রব বাড়তে থাকে। এই সময় পোকামাকড়ের হাত থেকে বাঁচতে সাধারণ গায়ে মাখার তেলের সাথে এক দু ফোঁটা ল্যাভেন্ডার অয়েল মিশিয়ে গায়ে মাখুন। উপকার পাবেন। সহজে পোকামাকড় আসবে না বা কামড়াবে না।
ফার্মসএন্ডফার্মার/০৫মে২০