শখের কবুতর পালন ঃ বর্তমানে অনেকেই হাঁস-মুরগি পালনের পাশাপাশি কবুতরও পালন করছেন। কবুতর পোষা অনেকের প্রিয় শখ হলেও একটু চেষ্টা করলে একে লাভজনক শখে পরিণত করা যায়। অন্যান্য পোষা পাখিদের মধ্যে কবুতর পালন অনেক সহজ এবং অপেক্ষাকৃত কম শ্রম কিন্তু ব্যয় সাপেক্ষ। কবুতরের মাংসে প্রচুর আমিষ থাকায় এটার বাজারমূল্য ও বেশি পাওয়া যায়। তাই ইচ্ছে আর চেষ্টা থাকলে আপনি খুব সহজে স্বল্প পুঁজিতে লাভবান হতে পারেন। এতে করে আপনি পোষার আনন্দও পাবেন আবার পরিবারেরও একটা বাড়তি আয়ের উৎস হবে।
কেন পালন করবেন ঃ পোষা পাখির মধ্যে কবুতর পালন খুবই সহজ। কবুতর পালন আনন্দদায়কও বটে। এর রোগ-বালাই খুব কম। তেমন যতœ আত্তি নিতে হয় না। কবুতর নিজেই খাবার সংগ্রত করে নিতে পারে বলে এর জন্য বাড়তি ব্যয়ের প্রয়োজন খুব বেশি হয় না। কবুতরের মাংস সুস্বাদু ও পুষ্টিকর বলে এর বাজার মূল্য ও চাহিদা সবসময়ই থাকে। স্বল্প পুঁজি ও শ্রমে সহজেই লাভবান হওয়া যায়। প্রতি মাসে গড়ে দুটি বাচ্চা পাওয়া যায় এবং তিন-চার সপ্তাহের মধ্যে বাচ্চা খাওয়ার উপযোগী হয়।
কবুতরের জাত ঃ পক্ষী বিশারদদের মতে পৃথিবীতে এ পর্যন্ত প্রায় ২০০ জাতের কবুতরের সন্ধান মিলেছে। মাংস উৎপাদনের জন্য হোয়াইট কিং, টেক্সেনা, লিভার কিং, হাম কাচ্চা, ডাউকা, কাউরা, গোলা, পক্কা ও লম্বা জাতের কবুতর উল্লেখযোগ্য। চিত্তবিনোদনের জন্য ময়ূর পক্ষী, সিরাজি, লাহোরি, ফ্যানটেইল, জেকোভিন, গিরিবাজ, টেম্পলার, লোটন ইত্যাদি জাতের কবুতর রয়েছে।
জালালী কবুতর আমাদের দেশের অতি পরিচিত একটি জাত। এটি হজরত শাহ জালাল (রঃ) পূণ্য স্মৃতি বিজড়িত।
কবুতরের বাসস্থান কেমন হবে ঃ কবুতরের থাকার ঘরটি যথাসম্ভব উচু করে তৈরি করতে হবে যাতে ক্ষতিকর প্রাণী ও বন্য পাখিদের নাগালের বাইরে থাকে। ঘরটি প্রচুর আলো-বাতাস ও মুক্ত জায়গায় রাখতে হবে। আবার বৃষ্টির পানি যাতে না ঢোকে সেদিকেও বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হবে। পাতলা কাঠ বা টিন, বাঁশ বা প্যাকিং কাঠ দিয়ে কবুতরের ঘর তৈরি করতে হবে প্রতি জোড়া কবুতরের জন্য তৈরি খোপের দৈর্ঘ্য হবে ৩০ সেমি, প্রস্থ ৩০ সেমি, এবং উচ্চতা ৩০ সেমি। কবুতরের ঘর পাশাপাশি বা কয়েক তলাবিশিষ্ট হতে পারে । প্রতি তলায় ১২.৭০সেমিবিশিষ্ট বারান্দা এবং প্রতিটি খোপের জন্য ১০.১৬১০.১৬ সেমি মাপের একটি করে দরজা থাকতে হবে। মনে রাখবেন অধিক কবুতর পুষতে হলে প্রয়োজনের তুলনায় কয়েকটি খোপ বেশি রাখতে হবে।
কবুতরের যত্ন-আত্তি ঃ প্রতি মাসে অন্তর দুবার কবুতরের থাকার ঘর পরিস্কার করতে হবে। ঘর যাতে সবসময় পরিস্কার ও শুকনা থাকে সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। খাবার ও পানির পাত্র ঘরের থারে কাছে রাখতে হবে। এ ছাড়া গোসলের জন্য পানি ও ধুলি এবং বাসা তৈরির জন্য খড়ের ব্যবস্থা ও রাখতে হবে।
১২ মাসে ১৩ জোড়া বাচ্চা ঃ সাধরণত কবুতরের জীবনকাল ১২ থেকে ১৫ বছর। পাঁচ থেকে ছয় মাস বয়সে স্ত্রী কবুতর ডিম পাড়া শুরু করে। এরা ২৮ দিন অন্তর ৪৮ ঘন্টার ব্যবধানে দুটি ডিম পাডে এবং পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত দেওয়া ডিমে বাচ্চা উৎপাদনক্ষমতা স্িক্রয় থাকে।ডিম থেকে বাচ্চা হতে ১৭ থেকে ২০ দিন সময় লাগে। প্রজননক্ষম হওয়ার পর প্রতি মাসেই কবুতর ডিম ও বাচ্চা উৎপাদন করে।
খাবার-দাবার ঃ কবুতরের স্বাস্থ্য রক্ষা, দৈহিক ও বংশ বুদ্ধির জন্য খাবার ১৫ থেকে ১৬ শতাংশ আমিষ থাকা প্রয়োজন। প্রতিটি কবুতর দৈনিক গড়ে ৩৫ থেকে ৬০ গ্রাম দানাদার খাবার গ্রহণ করে থাকে। কবুতর সাধারণত গম, মটর, খেশারি, সরিষা, ভুট্টা, কলাই, ধান, চাল, কাউন, জোয়ার এসব শস্যদানা খেয়ে থাকে। কবুতর ছানার দ্রুত বয়স্ক, হাড় শক্ত ও পুষ্টির জন্য এবং বয়স্ক কবুতরের ডিমের খোলস শক্ত হওয়ার জন্য ঝিনুকের খোসা চূর্ণ,চুনাপাথর, হাড়ের গুঁড়া, লবণ ইত্যাদি মিশিয়ে গ্রিট মিক্সার তৈরি করে খাওয়াতে হবে। এ ছাড়া প্রতিদিন কিছু কিছু কাঁচা শাকসবজি কবুতরকে খেতে দেওয়া ভালো।
বিভিন্ন রোগবালই ও প্রতিকার ঃ কবুতরের বিভিন্ন ধরনের রোগ হতে পারে। তার মধ্যে বসন্ত, কলেরা ও ককসিডওসিস রোগ উল্লেখযোগ্য। এসব রোগ দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিকটস্থ পশুসম্পদ অফিসে যোগাযোগ করে পশু চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
সম্ভাব্য আয়-ব্যয় ঃ আপনি ১০ জোড়া কবুতর দিয়ে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে কবুতর পালন শুরু করতে চান। এর জন্য আপনার ১৮ শ থেকে ২ বাজার টাকার পুজি যথেষ্ট। ১০ জোড়া কবুতরের জন্য একটি ঘর তৈরি (খাবারের পাত্র, পানির পাত্রসহ)করতে খরচ পড়বে আনুমানিক ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। প্রাপ্ত বয়স্ক ১০ জোড়া কবুতরের ক্রয়মুল্য ৭০০-৮০০ টাকা। প্রয়োজনমতো যেকোনো সময় এসব কবুতর ক্রয়মুল্যেই বিক্রয় করতে পারবেন। ১০ জড়া কবুতরের খাবার খরচ পড়বে প্রতি মাসে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। ১০ জোড়া কবুতা থেকে প্রতি মাসে আট থেকে নয় জোড়া বাচ্চা পাওয়া যাবে। প্রতি জোড়া বাচ্চার দাম ৭০ টাকা। এ হিসাবে নয় জোড়া বাচ্চা বিক্রয় করে প্রতি মাসে গড়ে (৯৭০)= ৬৩০ টাকা আয় করা সম্ভব। এভাবে আপনি ১০ জোড়া থেকে ৫০ জোড়া কবুতর পালন করলে ৩১৫০ টাকা আয় করতে পারবেন। একই পবিারকে ও কবুতরের পুষ্টিকর মাংস খাওয়াতে পারেন। এতে বাড়তি তেমন কেন শ্রমিকের ও প্রয়োজন পড়ে না।
ফার্মসএন্ডফার্মার/১১সেপ্টেম্বর২০