শখের কোয়েল পালন বদলে দিয়েছে নাঈমের ভাগ্য

480

600002

জাহিদ রিপন, পটুয়াখালী থেকে: অনেকটা শখের বসেই শুরু করেছিলেন কোয়েল চাষ। মাত্র নয় মাসেই দেখেন লাভের মুখ। মাথায় চলে বাণিজ্যিক চিন্তা। আর সে থেকেই পথ চলা শুরু নাঈমের ‘নূরজাহান লাইভস্টক অ্যান্ড এগ্রো খামারে’র। আর এটিই হল পটুয়াখালীর কলাপাড়ার প্রথম বাণিজ্যিক কোয়েল পাখির খামার।

মাহাবুবুল আলম নাঈমের কোয়েল পালনের শুরুটা ছিল অন্য রকম। ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স পাশ করার পর একটি ইন্টারন্যাশনাল এনজিও’র প্রজেক্টে চাকরি শুরু করেন। প্রকল্প মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় বেকারত্ব নিয়ে চলে আসেন বাড়ি। সে সময় স্থানীয় বাজার থেকে শখ করে মাত্র দু’টি কোয়েল পাখি ক্রয় করে পালন শুরু করেন। তখন মাথায় চলে আসে বাণিজ্যিকভাবে এ পাখি পালনের চিন্তা। বেকারত্ব থেকে নিজেকে মুক্ত করে আর্থিক সাবলম্বী হওয়ার পথ খুঁজে পেতে শুরু করেছিলেন কোয়েল পালন।

কলাপাড়া পৌর শহরের সিকদার সড়ক এলাকায় নিজ বাড়িতে গড়ে তোলেন কোয়েলের খামার। সেই থেকেই তার পথ চলা শুরু হয়। শুধু কোয়েল পাখি নয় এখন তার খামারে রয়েছে দেশি হাঁস, মুরগি, কবুতর। এছাড়াও নিজ পুকুরে চাষ করেছেন পাঙ্গাস মাছসহ নানা প্রজাতির মাছের চাষ করছেন।

কোয়েল খামারী নাঈম জানান, এক বছর আগে নরসিংদীর একটি খামার থেকে ৬শ কোয়েলের বাচ্চা পাখি কিনে নিয়ে আসেন। তখন স্থানীয়রা বলেন, বাচ্চাগুলো রাখতে পারবে না, মরে যাবে। তখন তাদের কথা শুনে কষ্ট হয়ে ছিল তার। যখন একটু বড় হয়ে ডিম পাড়া শুরু করেছে তখন সেই কষ্ট দূর হয়ে গেছে। এতে তার সর্বমোট খরচ হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। এখন তার খামারে ১২শ কোয়ের পাখি রয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ৮শ ডিম সংগ্রহ করছেন। এ ডিমগুলো স্থানীয় বাজারে বিক্রি করছেন।

নাঈম আরো জানান, কোয়েলের আকার ছোট বলে এদের লালন পালনের জন্য জায়গা কম লাগে। একটি মুরগি পালনের স্থানে কমপক্ষে ১০ থেকে ১২টি কোয়েল পালন করা যায়। এ পাখির রোগব্যাধি নেই বলেই চলে। সাধারণত ৬ থেকে ৭ সপ্তাহ বয়সেই প্রতিটি কোয়েল ডিম দিতে শুরু করে। বছরের ৩৬৫ দিনের ৩২০ দিনই ডিম দিয়ে থাকে। দিন দিন কোয়েলের ডিম এবং মাংসের চাহিদা বাড়ছে। চাহিদার বিপরীতে সরবারহ করতে খুব বেগ পেতে হচ্ছে তাকে।

কোয়েল পাখি এবং ডিম বিক্রি করে বেশ লাভবান হয়েছেন। এমন তথ্য জানিয়ে বেকার যুবকদের উদ্দ্যেশে নাঈম বলেন, অল্প পুঁজি, স্বল্প পরিসর এবং কম শ্রমে কোয়েল পালন করা যায়। তাই কোয়েলের খামার করে বেকার যুবকেরা কর্মসংস্থানের সুযোগ করতে পারে।

স্থানীয় বাসিন্দা ফোরকানুল ইসলাম জানান, নাঈমের কোয়েল চাষ দেখে অনেকে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। এ পাখির ডিম ও মাংস পুষ্টিকর হওয়ায় এলাকার আনেক লোকজন খাওয়ার জন্য কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। দামও খুব কম। নতুন নতুন যারা কোয়েল পাখি চাষ করছেন তাদেরও পরামর্শ দিচ্ছেন নাঈম।

কলাপাড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে খামারের বিষয়ে নিয়মিত পরামর্শ নিতে আসেন নাঈম। এমন তথ্য জানিয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, কোয়েল পাখির আদি জন্মস্থান জাপান। পরবর্তীতে এটা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশসহ বাংলাদেশেও খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশের আবহাওয়া গৃহপালিত পাখি কোয়েল পালনে উপযোগী। কোয়েলের মাংস ও ডিম মুরগির মাংস ও ডিমের মতো পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। এ কারণে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে কোয়েল পালন।

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন