রণজিৎ সরকার, টাঙ্গাইল থেকে: শখের বসে টার্কি পালন করে এখন সফলতার মুখ দেখছেন টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার যাদবপুর ইউনিয়নের বোয়ালী পশ্চিমপাড়া গ্রামের মো. আলাউদ্দিন। সংসারিক কাজের ফাকে টার্কি খামার গড়ে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন তিনি।
তার খামার দেখতে ছুটে আসছেন ঢাকা, টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহসহ জেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রতিদিনই শত শত টার্কি পালনে উৎসাহী লোকজন।
উপজেলার বোয়ালী পশ্চিমপাড়া গ্রামের কৃষক শামসুল হকের ছেলে মো. আলাউদ্দিন নিজ বসত বাড়ির আঙ্গিনায় বাণিজ্যিকভাবে চার শতাধিক আমেরিকান টার্কি মুরগি নিয়ে গড়ে তুলেছেন খামার। টার্কি মুরগি বিক্রি, বাচ্চা উৎপাদন ও ডিম বিক্রি করে মাসে লাখ লাখ টাকা আয় করছেন তিনি।
এছাড়া বসতবাড়িতে আলাউদ্দিন তিতি মুরগি, ফ্রান্সের দেশি মুরগি, দেশি ও বিদেশি জাতের কবুতরের খামারও গড়ে তুলেছেন। আর এ কাজে তাকে সহযোগিতা করছেন তার স্ত্রী মিনা আক্তার।
সরেজমিনে জানা গেছে, ২০১৫ সালে পৈত্রিক সম্পত্তির ২০ শতাংশ জায়গার ওপর বোয়ালী পশ্চিমপাড়া গ্রামে নিরিবিলি পরিবেশে ‘আলাউদ্দিন টার্কি ফার্ম’ নামে একটি খামার গড়ে তোলেন বিদেশ ফেরত আলাউদ্দিন। প্রথমে তিনি ঢাকা থেকে ২০০ বাচ্চা এনে খামার শুরু করেন। দেড় বছরের মাথায় প্রায় ৪০০ টার্কি হয়েছে এ খামারে।
প্রতিটি মুরগি একটানা ২২টি ডিম দেয়। দানাদার খাদ্য ছাড়াও কলমির শাক, বাঁধাকপি ও সবজি জাতীয় খাবার খায় এসব জাতের মুরগি। ৪ মাস পর থেকে খাওয়ার উপযোগী হয় তারা। একটি টার্কির ওজন ৩০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। প্রতি কেজি মুরগি বিক্রি হয় ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায়। ১ মাস বয়সী বাচ্চা বিক্রি হয় জোড়া প্রতি প্রায় তিন হাজার টাকা। প্রতি হালি ডিম বিক্রি করা হচ্ছে ৮০০ টাকা।
টার্কি একটি বড় আকারের গৃহ পালিত পাখি। টার্কি পাখা মেললে অনেকটা ময়ুরের মতোই দেখা যায়। সুস্বাদু এই মুরগির রোগ বালাই তেমন হয়না। এর মাংসে অধিক পরিমাণে প্রোটিন ও কম পরিমাণে চর্বি রয়েছে। অনেকটা খাসির মাংসের স্বাদ হওয়ায় এটির মাংসও বাজারে একই দামে বিক্রি করা হচ্ছে।
টার্কি ফার্ম মালিক মো. আলাউদ্দিন বলেন, “টেলিভিশনে বিভিন্ন সময় টার্কি মুরগির ওপর প্রতিবেদন দেখতাম। এতে আমার উৎসাহ বেড়ে যেতো। ২০১৫ সালের শেষের দিকে দেশে ফিরে ঢাকা থেকে প্রথমে ২০০ টার্কির বাচ্চা এনে খামার গড়ে তুলি। এখন আমার খামারে প্রায় ৪০০ ছোটবড় টার্কি মুরগি রয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “কলমির শাক ও বাঁধা কপি টার্কিদের বেশি পছন্দ। মাংস উৎপাদনের জন্য তাদের দানাদার খাবার দেয়া হয়। টার্কির রোগাবালাই খুবই কম। ডিম থেকে বাচ্চা হওয়ার ৬ মাসের মধ্যে টার্কি ডিম দিতে শুরু করে। ৬ মাস বয়সী একটি মেয়ে টার্কির ওজন হয় ৬ তেকে ৭ কেজি আর পুরুষ টার্কির ওজন হয় প্রায় ৮ কেজি।”
সারা দেশে বাণিজ্যিকভাবে এই খামারের পরিকল্পনা ছড়িয়ে দিতে তিনি নিজেও এখন অন্যদেরকে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন এবং উদ্বুদ্ধ করছেন।
তিনি মনে করেন, বেকারত্ব দূর করতে টার্কি পালন খুবই ভাল পরিকল্পনা। তিনি তার ফার্মের পরিধি ও বাচ্চা ফুটানোর ব্যবস্থা করতে সরকারি ঋণ সহায়তা দাবি করেন।
সখীপুর উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. ওকিল উদ্দিন জানান, আলাউদ্দিনের দেখাদেখি সখীপুরে এখন অনেকেই টার্কি পালনে উৎসাহ দেখাচ্ছেন। রোগবালাই ও উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় এটি পালন করে সহজেই লাভবান হওয়া যায়।
জানা গেছে, ১৭০০ সালে যুক্তরাজ্য ক্রস ব্রিডিংয়ের মাধ্যমে টার্কি মুরগির জাত উৎপাদন করা হয়। উত্তর আমেরিকা টার্কির উৎপত্তিস্থল। ইউরোপসহ পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই এখন টার্কি মুরগি পালন করা হচ্ছে। বাংলাদেশের অনুকুল আবহাওয়া ও পরিবেশে পশু-পাখি পালন অন্যান্য দেশের তুলনায় সহজ। টার্কি প্রাণী সেরকম একটি সহনশীল জাত, যেকোন পরিবেশে দ্রুত এরা নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে।
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/এম