শখ করে কবুতর পালন রাজিবের, এখন খামারের মালিক

632

razib-1নাম রাজিব মাহমুদ। তার বাড়ি টা্ঙ্গাইল উপজেলার সাগদীঘিতে। নিজ বাড়িতে কবুতরের খামার তার। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ কবুতর কিনতে আসে। শিক্ষার্থীদের কাছে কবুতরের দাম কম নিয়ে থাকেন তিনি। অনলাইনেও (রাজিব পিজন, টাঙ্গাইল) ফেসবুক আইডিতে বেশ ভালো কবুতর ক্রেতার চাহিদা রয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে সফল একজন কবুতর খামারি। কবুতর প্রেমীদের কাছে পরিচিত এক মুখ।

কৈশোর কাল থেকে তার কবুতর পালনের ইচ্ছে ছিল প্রবল মাহমুদের। বাধা উপেক্ষা করে সর্বদাই কবুতর পালনের ঝোঁক ছিল সর্বদাই। একবার ঈদ সালামির টাকা জমালেন। এক প্রতিবেশী নিয়ে গেলেন পাড়ার কবুতর পালকের কাছে। ১০০ টাকা দিয়ে এক জোড়া বাচ্চা কিনলেন তিনি। নানান রোগের কারণে তা মারা যায়। তবুও থেমে যাননি রাজিব। দিনে দিনে তার কবুতর পালনের নেশা আসক্তিতে পরিণত হলো। অন্যদিকে পড়ালেখার চাপ আর বাবার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দেখাশুনা করাটা ছিল অত্যন্ত জরুরি। তবুও কবুতরের নেশা তাকে দূরে রাখতে পারেনি। এক বন্ধুকে নিয়ে গেলেন ঢাকার মিরপুর কবুতরের হাটে। সেদিন পাঁচ জোড়া ফেঞ্চি কবুতর কিনলেন। শুরুটা পাঁচ জোড়া দিয়ে হলেও এখন তার কবুতরের সংখ্যা প্রায় ১৫০ জোড়া। প্রথমে দেশের বিভিন্ন জেলার বড় বড় খামারিদের কাছ থেকে বাচ্চা সংগ্রহ করেন। প্রায় ১০ বছর আগে শুরু করা শখের কবুতর পালন এখন আর শুধু শখই নয়। পরিণত হয়েছে পেশায়। রাজিব এখন একটি বাণিজ্যিক ফেঞ্চি কবুতরের খামারের মালিক। সব খরচ বাদে তার মাসিক আয় প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা।

কবুতর হচ্ছে শান্তির প্রতীক। কবুতর বিভিন্ন প্রজাতির হয়ে থাকে। রাজিব পালন করেন ফেঞ্চি কবুতর- যা একদিকে সাইজে বড়। অন্যদিকে দেখতে অত্যন্ত আকর্ষণীয়। বাহারি রং। লাইফস্টাইলও ভিন্ন। চমকপ্রদ। উৎপাদন ক্ষমতা অনেক ভালো। খাঁচার মধ্যে এই কবুতর পালন করা যায়। ফেঞ্চি কবুতর পালন করার কারণ জানান, বাংলাদেশে এই কবুতরগুলোর চাহিদা অনেক বেশি। এরা খুব ভালো ডিম পাড়ে। মাত্র ৬০ দিনে বাচ্চা বিক্রির উপযোগী হয়। অবশ্য অনেকে একমাসের বাচ্চাও বিক্রি করে থাকেন। তার কাছে ২ হাজার থেকে ২৫-৩০ হাজার টাকা দামের কবুতর রয়েছে। এর মধ্যে- ডেনিশ, কুবার্গ লার্ক, কালো বিউটি হুমা, মুর হেড, লাহোর সিরাজি, বারানবার টাম্বপিটার, বস্নম্ন-পটার, বুখারা, এরাবিয়ান টাম্বপিটার, বাঁশিরাজ কোকা, হলেন্ড জেকোবিন, আমেরিকান সো কিং, লাল বোম্বাই, করমনা, ইন্ডিয়ান লোটন, রেন, সাদা বিউটি হুমা, সাদা লক্ষ্যা, সাদা ফ্রিলবেক, আমেরিকান লক্ষ্যা, রেছার, ইস্টেচার, ঝর্না সার্ডিং, ছোঁয়া চন্দনসহ ইত্যাদি প্রজাতির কবুতর রয়েছে।

রাজিব মাহমুদের কবুতরের খামারের নাম রাজিব পিজন, টাঙ্গাইল। তিনি আলাদা ঘরে খাঁচায় কবুতর পালন করেন। প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি আরও বলেন, দেশের গ্রামগঞ্জের বাড়ির আঙিনায় বহু জায়গা খালি পড়ে আছে। এসব জায়গায় ঘর তুলে যে কেউ অনায়াসে কবুতর পালন করতে পারেন। আমার মতে, বিদেশ ফেরত অনেকেই হতাশ হয়ে মাদক নেশায় জড়িয়ে পড়ে। তারা দুয়েক জোড়া কবুতর দিয়ে শুরু করতে পারেন।

সৎভাবে ইনকামের জন্য সবাই রাজিবকে বাহবা দেয় বলে জানান। তার মতে, কবুতর বিনোদনের অন্যতম উৎস। খুব শান্ত, মায়াবী পাখি। মানুষের সহচার্য পছন্দ করে। ছেলেমেয়েদের গ্যাজেট আসক্তি কবুতর পালনে দূর হতে পারে। অবসর সময়ে বাজে নেশায় যুব সমাজ না জড়িয়ে কবুতর পালন করতে পারে। রাজিবের কবুতরের খামারের আয় দিয়ে ভবিষ্যতে গরুর খামার করবেন বলে জানান তিনি।

বাণিজ্যিকভাবে এই কবুতর পালন করা সম্ভব। বেকার যুবকরা কবুতর পালন করে স্বনির্ভর হতে পারে। তবে এ জন্য একটু জেনে শুনে নেয়া ভালো। ভালো কোয়ালিটির লাহোর বা ফান্টেল কবুতর বেশ লাভজনক, কারণ এরা খুব ভালো ডিম দেয়। সবসময় এসব প্রজাতিগুলোর চাহিদা বেশি থাকে। বর্তমানেও একজোড়া ভালো কোয়ালিটির ফেঞ্চি কবুতরের দাম প্রায় ১ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত আছে।

কবুতর অসুস্থ হলে নিজেই চিকিৎসা করেন। তবে নতুন যখন ছিলেন তখন কবুতরের ঠান্ডা, জ্বর, পাতলা-পায়খানা হতো। বেশ ঝামেলায় পড়তেন তিনি। তার পরিচিত চাচা ওষুধ কোম্পানির মার্কেটিং অফিসার মো. মনির হোসেন তাকে কবুতর পালনে বিভিন্ন পরামর্শ দিতেন। কবুতরের সবচেয়ে মারাত্মক রোগ হলো পক্স, ব্যাকটেরিয়া, রানিক্ষেত ও সাল্মুনেলস্না।

কবুতর খামারিদের মতে বাংলাদেশে ফেঞ্চি কবুতর পালনে অমৃত সম্ভাবনা রয়েছে। তাদের কথার সত্যতা মিলেছে কবুতর রপ্তানির চিত্র থেকে। কিছুদিন আগে বাংলাদেশ থেকে জর্দানে ফ্রিলবেক রপ্তানি করা হয়েছে। আরো জানা যায়, বাংলাদেশে অনেক কবুতর ব্রিডার আছেন। যারা নির্দিষ্ট প্রজাতির কবুতরের ব্রিড নিয়ে কাজ করেন।

ভবিষ্যতে খামার আরো বড় করবেন বলে রাজিবের পরিকল্পনা আছে। তিনি জানান, এ সেক্টরে সরকারি সহযোগিতা পেলে কবুতর রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এই কবুতরের প্রচুর চাহিদা রয়েছে বলে জানা যায়।

ফার্মসএন্ডফার্মার/২৭জানু২০২০