শতভাগ ধান চাল সংগ্রহে ব্যর্থ রংপুর খাদ্য বিভাগ

87

রংপুর বিভাগে গত মে মাসে শুরু হয় সরকারের বোরো সংগ্রহ অভিযান। এ বছর মিলারদের কাছে ৩ লাখ ১৬ হাজার টন চাল আর কৃষকদের কাছ থেকে ৬৫ হাজার ৯৮৪ মেট্রিক টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু পর পর দুইবার সময় বাড়িয়েও শতভাগ ধানচাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে রংপুর খাদ্য বিভাগ। এ বছর রংপুর বিভাগে লক্ষ্যমাত্রার ৯৮ ভাগ চাল ও ৭১ ভাগ ধান সংগ্রহ হয়েছে। বিভাগের ৯১টি খাদ্যগুদামের ধারণক্ষমতা ২ লাখ ৮৫ হাজার টন, যা প্রয়োজনের চেয়ে অপ্রতুল। খবর : ঢাকা পোস্ট

খাদ্য বিভাগ জানিয়েছে, দুই দফায় বাড়ানো হয় চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা। সবশেষ চালের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৮৫৩ টন। অনেক তোড়জোড় করে মিলারদের কাছ থেকে চাল সংগ্রহ করা সম্ভব হলে সাড়া দেয়নি কৃষকেরা।

যদিও মিলাররা দাবি করছেন, লোকসান হলেও তারা অনেকটা বাধ্য হয়েই সরকারকে চাল দিয়েছেন। ধানের অভাবে এখন ধানের অনেকের মিল বন্ধ রয়েছে। এতে বছরের পর বছর লোকসান গুনতে গুনতে কেউ কেউ বাধ্য হয়ে গুটিয়ে নিয়েছেন এ ব্যবসা।

রংপুর মহানগরীর মাহিগঞ্জ অটো রাইস মিলের ব্যবস্থাপক আবদুল মতিন বলেন, সরকার ৪৪ টাকা চালের দাম নির্ধারণ দিয়েছে। বেশি দামে ধান কিনে চাল উৎপাদনে প্রতি কেজিতে খরচ পরে প্রায় ৪৮-৫০ টাকা। তাতে আমাদের ক্ষতি হয়। তারপরও ব্যাংক ঋণের কারণে আমরা বাধ্য হয়েই সরকারকে চাল দিয়েছি।

আলম অটো রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী লোকমান হোসেন বলেন, ‘তিন দফায় আমার মিল থেকে প্রায় দেড় হাজার টন চাল নিয়েছে সরকার। প্রথম দফায় চাল সরবরাহে কিছুটা লাভ হলেও পরের দুই দফায় আমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। এখন ধানের অভাবে আমার মিল বন্ধ হয়ে আছে।’

এদিকে রংপুর জেলায় ধান সংগ্রহ হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ১৬ শতাংশ। ৮ হাজার ৬২ টন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও অর্জন হয়েছে ১ হাজার ২৬২ টন। জেলায় বোরো সংগ্রহ অভিযানে চুক্তিভুক্ত মিলার হচ্ছেন ৪৪১ জন। এর মধ্যে অটোরাইস মিল ২৩টি। চলতি বোরো সংগ্রহ অভিযানে সরকারিভাবে ধান-চালের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে যথাক্রমে ৩০ এবং ৪৪ টাকা। গত বছর ধান ছিল ২৮ ও চাল ৪২ টাকা।

কৃষকরা বলছে, সংগ্রহ প্রক্রিয়া জটিল হওয়ায় ধান দিতে পায় না তারা। একই সঙ্গে দালাল ও ফড়িয়াদের দৌরাত্ম্যে সরকার নির্ধারিত দাম থেকে বঞ্চিত হন। এ কারণে কৃষকরা অভিযানের শুরু থেকেই ধান সংগ্রহ প্রক্রিয়া সহজ করার দাবি জানিয়ে আসছেন।

কৃষক সাত্তার প্রামাণিক বলেন, এক মণ ধানের মূল্যের চেয়ে একজন দিনমজুরের মজুরি বেশি। এক মণ ধান বিক্রি করে এক কেজি গরুর মাংস কিনতে পারি না।

কৃষক আবু তালেব বলেন, কৃষকের দুঃখ দেখার কেউ নেই। হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে ফসল উৎপাদন করেও আমরা লাভের মুখ দেখি না। আবাদ খরচ যেভাবে বাড়ছে আমাদের আবাদ করাই কষ্টকর হয়ে গেছে। সরকার তো উৎপাদনের সময় আমাদের কোনো প্রকার কৃষিঋণ কিংবা ভর্তুকি কিছুই দেয় না।

ধানের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত এবং সরকারি উদ্যোগে হাটে হাটে ক্রয়কেন্দ্র খুলে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয়ের দাবি জানিয়েছে কৃষক সংগ্রাম পরিষদের নেতা পলাশ কান্তি নাগ।

রংপুর আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. আশরাফুল আলম বলেন, ভালো দাম দেয়ায় গেল বারের তুলনায় এবার বেড়েছে সংগ্রহের পরিমাণ। সরকার দুটো বিষয় লক্ষ্য রেখে ধানের সংগ্রহ মূল্যটা নির্ধারণ করে। একটা হলো নিরাপদ মজুত গড়ে তোলা। পাশাপাশি কৃষকদের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা। সরকার যদি ন্যায্য মূল্য ঘোষণা করে সেখানে বাজারটাও কিছুটা রাইজ থাকে এবং কৃষকরা লাভবান হয়। আমরা সেই জন্য ধান কম কিনেছি কিন্তু শতভাগ চাল কিনেছি। আমরা চাই কৃষকদের জন্য যেহেতু সরকার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে, কৃষকরাই এখানে উপকৃত হোক। মাঝখান থেকে কোনো ব্যবসায়ী বা কোনো ফড়িয়া কৃষকদের নাম বলে ধান দিয়ে এ সুবিধাটা না নেয়।

তিনি আরও বলেন, রংপুর অঞ্চলে ২ লাখ ৮৫ হাজার টন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন গুদাম আছে। যেহেতু রংপুর অঞ্চল উৎপাদন ও সংগ্রহ প্রবণ এলাকা তাই আমার ধারণক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যে রংপুর, কুড়িগ্রাম ও দিনাজপুরে আমরা সিএসডি গুদাম ও সাইলো করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আশা করছি শিগগিরই রংপুর বিভাগে খাদ্য সংগ্রহের ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।