শরীয়তপুরে বারোমাসি বেবি তরমুজ চাষে সাফল্য

420

তরমুজশরীয়তপুর: জেলার জাজিরা ও ভেদরগঞ্চ উপজেলায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল টেকনোলজি প্রোগ্রাম-২ (এনএটিপি) ও পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে জাজিরা ও ভেদরগঞ্চ উপজেলায় প্রথম বারের মতো ৩ জন কৃষক বারোমাসি বেবি তরমুজের আবাদ করে সাড়া জাগিয়েছেন।

উপজেলা প্রশাসন, জনপ্রাতিনিধি, এনজিও প্রতিনিধি ও কৃষি বিভাগসহ সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, সরকারি বেসরকারি সমন্বিত সহযোগিতায় কৃষি বাণিজ্যিকীকরণের এ সময়ে উচ্চ মূল্যের ফসল আবাদ করে কৃষিকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। তাই বারোমাসি বেবি তরমুজের আবাদে কৃষকদের আগ্রহী করতে সরকারি বেসরকারি পর্যায়ে আয়োজন করা হচ্ছে মাঠ দিবসেরও।

জাজিরা উপজেলার মুলনা ইউনিয়নের লাউখোলা গ্রামের কৃষক দাদন মিয়া বলেন, কৃষি বিভাগের পরামর্শে ২০ শতক জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে ২০ হাজার টাকা ব্যয়ে আমি বারোমাসি জাতের বেবী তরমুজ আবাদ করেছি। ফলন খুবই ভাল হয়েছিল। কিন্তু ফলন ঘরে তোলার সময়ে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে বেশি লাভ করতে পারিনি। তবে আবহাওয়য়া অনুকূলে থাকলে আমি খরচের তুলনায় তিন-চারগুন লাভবান হতে পারতাম।

একই উপজেলার সেনেরচর ইউনিয়নের ছোট কৃষ্ণনগর গ্রামের কৃষক লুৎফর রহমান আকন বলেন, এসডিএস এনজিও’র মাধ্যমে এ বছর আমি ২০ শতক জমিতে ২৫ হাজার টাকা ব্যয়ে বারোমাসি বেবি তরমুজ আবাদ করেছি। চারা লাগানোর দুই মাসের মাথায় তরমুজ বাজারে বিক্রি করা যায়। ফলনের মাঝামাঝি সময়ে অতি বৃষ্টির কারণে কাংখিত ফলন না পেলেও ইতিমধ্যে আমি ৬৫ হাজার টাকা বিক্রি করেছি। আশা করছি আরও ১৫-২০ হাজার টাকা বিক্রি হবে। প্রতি কেজি তরমুজ ক্ষেত থেকে ৪০-৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বেবী তরমুজ আবাদ করে আমি অন্য ফসলের চেয়ে বেশি লাভবান হয়েছি।

একই গ্রামের কৃষক হাশেম আকন বলেন, লুৎফর ভাইয়ের বেবি তরমুজের ফলন ও দাম দেখে আমরা খুবই আশাবাদী। আগামী মৌসুমে আমিও আশপাশের অনেক কৃষকই এ বেশি দামের ফসল আবাদ করব। এতে অন্য ফসলের চেয়ে লাভ অনেক বেশি হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

এসডিএস এর পরিচালক কামরুল হাসান বাদল বলেন, পিকেএসএফ এর অর্থায়নে এসডিএস এর কৃষি ও প্রাণি সম্পদ ইউনিট উচ্চমূল্যের ফসল আবাদের মাধ্যমে কৃষকের আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করছে। এরই ধারাবাহিকতায় কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় জাজিরায় ২০ শতক জমিতে ১ জন কৃষকের মাধ্যমে বেবি তরমুজ আবাদ হয়েছে। ইতোমধ্যে কৃষক ব্যয়ের তুলনায় দ্বিগুণ লাভ করেছেন। তার এ সাফল্য দেখে আশপাশের অনেক কৃষকই আগামীতে বেবি তরমুজ আবাদের জন্য আমাদের কৃষি ইউনিটের কর্মীদের সাথে যোগাযোগ করছেন। আশা করছি আগামী মৌসুমে বেবী তরমুজের আবাদ অনেক বৃদ্ধি পাবে।

জাজিরা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রশান্ত বৈদ্য বলেন, কৃষির বাণিজ্যিকীকরণ ও ফসলের নিবীড়তা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এনএপিপি-২ প্রকল্প বিভিন্ন উচ্চমূল্যের ফসল আবাদে কৃষকদেরকে উদ্বুদ্ধ করছে। তারই ধারাবাহিকতায় সুইটব্লাক বা কালো জাতের বারোমাসি তরমুজ প্রতম বারের মতো আবাদ করা হয়েছে। এ মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় কৃষক কাংখিত ফলন পায়নি। তবে আগামীতে সুইটব্লাক বা কালো জাতসহ নতুন গোল্ডেনক্রাউন বা হলুদ জাতের বারোমাসি বেবি তরমুজ সংযোজনের মাধ্যমে কৃষি বাণিজ্যিকীকরণ ও ফসলের নিবীড়তা বৃদ্ধিতে সক্ষম হবো বলে আমরা আশাবাদী।

জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাহেলা রহমতুল্লাহ বলেন, বারোমাসি বেবি তরমুজ কৃষির জন্য এক অনন্য সংযোজন। আগে এ জাতের তরমুজ আমাদেরকে বিদেশ থেকে আমাদানি করতে হতো। কৃষি বাণিজ্যিকীকরণের এ লগ্নে সরকারি বেসরকারি সমন্বিত প্রচেষ্টার ফলে এখন এ নতুন জাতের উচ্চমূল্যের ফসল বেবি তরমুজ দেশেই উৎপাদন হচ্ছে। নতুন জাতের এ বেবি তরমুজ কৃষিতে এক অনন্য সমৃদ্ধ ফসল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। যার মাধ্যমে কৃষকদের ব্যক্তিগত অর্থনৈতিক সাবলম্বিতার পাশাপাশি জাতীয় উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমরা আশাবাদী। বিএসএস

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন