শরীয়তপুরে বোরোর ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি

389

ধান-কাটা

শরীয়তপুর: জেলার ছয় উপজেলার রোরো আবাদীদের ধান গোলায় তোলা এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে। আবাদ মৌসুম থেকে ধান কাটা পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভালো ফলন পেয়ে কৃষকেরা বেশ খুশি।

গত ৩-৪ মৌসুম থেকে এবার ধানের ফলন বেশ ভালো বলে বলছেন কৃষক ও স্থানীয় কৃষি বিভাগ। ফলে এ বছর জেলায় ৬৭৬ কোটি টাকার চাল উৎপাদনের আশা কৃষক ও কৃষি বিভাগের। তবে ধান কাটা মৌসুমে ব্যাপক বৃষ্টিপাতের ফলে কিছু কিছু নিম্নাঞ্চলের কৃষকদের বেশ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। আগামী সপ্তাহখানেক বৃষ্টিপূর্ণ আবহাওয়া না থাকলে কৃষকরা নির্বিঘ্নে ধান গোলায় তুলতে সক্ষম হবেন।

জেলার কৃষকরা তাদের অনেক কষ্টে ফলানো ধান কেটে ঘরে তোলার কাজে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। ইতোমধ্যে শতকরা ৮৫ ভাগ বোরো ধান কাটা ও মাড়াই সম্পন্ন হয়েছে বলে কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।

রোপণ থেকে ফলন পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন হয়েছে জাত ভেদে হেক্টর ৫.৫ মে. টন থেকে ৪ মে. টন চাল। আবাদকৃত ধানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে উচ্চ ফলনশীল (উফশী) জাতের মধ্যে রয়েছে ব্রি-ধান- ২৯, ৫৮, ৬২, ৬৩ এবং ৭৪, হাইব্রিড জাতের এস এলএইচ-৮ এবং স্থানীয় জাতের ধানের আবাদ করেছেন কৃষক। তবে জেলায় উফশী জাতের ব্রি ধান ২৯ এ ফলন বেশি হওয়ায় এ ধানের আবাদ হয়েছে ৮৫ শতাংশ জমিতে।

কৃষকরা জানান, সার, বীজ, কীটনাশক, পানি সেচ ও শ্রমিকসহ বিঘা প্রতি গড়ে ৫-৬ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। জেলার বিভিন্ন বাজারে ধানের আদ্রতা ও প্রকার ভেদে প্রতিমণ ধান বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৭শ’ থেকে ৮শ’ টাকা। দাম ভাল পাওয়ায় কৃষকরা আনন্দিত। ফলে উৎপাদন খরচের তুলনায় বিঘা প্রতি ৯-১০ হাজার টাকা লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। যা বিগত ৩-৪ মৌসুমের তুলনায় সর্বোচ্চ।

শরীয়তপুর সদর উপজেলার বালুচড়া গ্রামের কৃষক শাহজাহান মোল্লা জানান, গত ৩-৪ বছরের তুলনায় এবার ধানের ফলন বেশি হয়েছে। ধানের বাজার দর ভাল থাকায় উৎপাদন খরচের তুলনায় বিঘাপ্রতি ৮-৯ হাজার টাকা লাভবান হচ্ছি। সরকার ধানের বাজার যদি ঠিক রাখে তবে আগামীতে ধানের উৎপাদন আরও বাড়বে।

একই উপজেলার আংগারিয়া ইউনিয়নের ভাষানচর গ্রামের কৃষক মো. সালাম হাওলাদার বলেন, রোপণ থেকে ধান পাকা পর্যন্ত আবহাওয়া ভাল থাকায় ধানের উৎপাদন কয়েক বছরের তুলনায় বেশি হয়েছে। কৃষি বিভাগের পরামর্শে পার্সিং, লাইন সুইং ও লোগো পদ্ধতি ব্যবহার করে এবং উন্নত জাতের ধান রোপণ করে আমরা কয়েক বছর আগের তুলনায় বেশি ফলন পাচ্ছি। এছাড়া ধানের বাজার দরও এখন ভাল। তবে ধান কাটার শেষ সময়ে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে ধান গোলায় তুলতে পারলেও ধানের খড় কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

শরীয়তপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মো. রিফাতুল হোসাইন বলেন, চলতি ২০১৭-২০১৮ মৌসুমে জেলায় ২৭ হাজার ৪শ’ ৯৩ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে আবাদ হয়েছে ২৮ হাজার ১শ’ ৮০ হেক্টরে। এতে চাল উৎপাদন হবে প্রায় ১ লাখ ১২ হাজার ৭২০ মে.টন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভাল ফলন পেয়ে কৃষকরাও বেশ খুশি।

ইতোমধ্যে জেলার প্রায় ৮৫ ভাগ বোরো আবাদী কৃষকরা তাদের ধান গোলায় তুলতে সক্ষম হয়েছেন। তবে শেষ দিকে অতি বৃষ্টি পাতের কারণে ধানের খড়ের কিছুটা ক্ষতি সাধন হয়েছে। আমাদের হিসেব অনুযায়ী এ বছর শরীয়তপুর জেলায় ১ লাখ ১২ হাজার ৭২০ মে. টন চাল উৎপাদন হবে। যার বাজার মূল প্রায় ৬৭৬ কোটি টাকা।

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন