শরীয়তপুর: জেলায় বোরো ধানের ক্ষতিকর পোকা দমনে জৈব বালাই দমন অভিযান শুরু হয়েছে। ১৪ ফেব্রুয়ারি একযোগে জেলার ৬ উপজেলায় এ অভিযান উৎসবে পরিণত হয়েছে।
বিষমুক্তভাবে পোকা দমন অভিযানে অংশ নেন জেলা প্রশাসক, কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের ৮৫ জন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাসহ সকল পর্যায়ের কর্মকর্তারা।
বিগত ৬ বছর থেকেই ডাল পোতা বা পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার করে সুফল পাচ্ছেন শরীয়তপুরের কৃষকরা। এ পদ্ধতি ব্যবহারে কীটনাশক খরচ কম হওয়ার পাশাপাশি বেড়েছে উৎপাদনও বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিগত ছয় বছর ধরে বোরো ক্ষেতে ডাল পুতে বা পার্চিং পদ্ধতিতে ক্ষতিকর পোকা দমন করে কার্যকর ফলাফল পেয়েছেন শরয়িতপুরের কতিপয় কৃষকরা। তাদের ভালো ফলন ও উৎপাদন ব্যয় কম হওয়ায় এখন জেলার অধিকাংশ কৃষক এবার এ পদ্ধতি শুরু করেছেন। পার্চিংয়ের ফলে কোন কীটনাশক ব্যবহার না করে অতি সহজেই ধানের ক্ষতিকর পোকা দমন করতে পারায় উৎপাদন খরচ সাশ্রয় হওয়ার পাশাপাশি বৃদ্ধি পাচ্ছে উৎপাদনও।
শরীয়তপুর সদর উপজেলার চিতলিয়া ইউনিয়নের কাশিপুর হিন্দুপাড়া গ্রামের বোরোর ব্লক ম্যানেজার আকুল চন্দ্র মন্ডল বলেন, গত পাঁচ বছর ধরে কৃষি বিভাগের পরামর্শে কৃষকরা পার্চিং বা জৈব বালাই দমন পদ্ধতি ব্যবহার শুরু করেছেন। প্রথম পর্যায়ে কৃষকরা তেমন একটা উৎসাহ না দেখালেও গত দুই বছর ধরে অন্য কৃষকের উৎপাদন ব্যয় সাশ্রয় ও বেশি ফলন দেখে এখানকার অধিকাংশ বোরো আবাদীরাই এখন এ পদ্ধতি ব্যবহার করছেন। এর ফলে উৎপাদন ব্যয় সাশ্রয়ের পাশাপাশি নিরাপদ ধান উৎপাদন করতে পারছেন তারা। এতে কৃষকদের ও আমাদের ধানে এখন লাভ হচ্ছে আগের তুলনায় বেশি।
ভেদরগঞ্জ উপজেলার পাপরাইল গ্রামের কৃষক আব্দুল গণি মাদবর বলেন, পাঁচ বছর আগে যখন মাঠে কৃষি কর্মকর্তারা আমাদের পার্চিং ও লাইন সুইংয়ের কথা বলতেন তখন তেমন একটা গুরুত্ব দিতাম না। তবে গত কয়েক বছর থেকে এ পদ্ধতিতে বোরোর ক্ষতিকর পোকা দমন করে অন্য কৃষকদের যখন উৎপাদন খরচ কম ও ভাল ফলন দেখেছে তখন থেকে আমি ও অন্যান্য প্রায় সকল কৃষকই পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার করছেন।
শরীয়তপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. রিফাতুল হোসাইন বলেন, বিষমুক্তভাবে বোরো ধানের পোকা দমন পদ্ধতি (পার্চিং) অত্যন্ত লাভ জনক। এ পরিবেশ বান্ধব পদ্ধতিতে পোকা দমন করার ফলে কৃষকদের কীটনাশক ব্যয় সাশ্রয়সহ বৃদ্ধি পাচ্ছে উৎপাদন। গত কয়েক বছর থেকে এ পদ্ধতি চালু থাকলেও এ বছর জেলার সকল পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাসহ কৃষকদের আমরা উদ্বুদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছি। ফলে এটি এখন বোরো মৌসুমে একটি উৎসবে পরিণত হয়েছে।
এ বছর জেলায় ২৭ হাজার চারশ ৯৩ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিগত এক মাস আগে রোপণ শুরু হয়ে ইতোমধ্যে ৯৮ ভাগ রোপণ কাজ শেষ হয়েছে। আশা করছি কৃষকরা কোন প্রাকৃতিক সংকটে না পড়লে ভাল ফলন পেয়ে অর্থনৈতিকভাবে বেশ লাভবান হবেন।
শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল হোসাইন খান বলেন, জৈব বালাই দমন পদ্ধতি বোরো ধানের পোকা দমনের একটি লাগসই প্রযুক্তি। যা সরকারের নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন অভিযানকে বেগবান করবে। দেশের মোট লোক সংখ্যার প্রায় অর্ধেকই কৃষি জীবিকা নির্ভর। তাই কৃষকরা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হলে আমরাও দ্রুত উন্নয়নের শিখরে পৌঁছতে পারব। আর দেশের সার্বিক উন্নয়ন অনেকটাই কৃষদের ভাল থাকার ওপর নির্ভরশীল।
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন