নিয়াজ আহমেদ সিপন, লালমনিরহাট থেকে: হেমন্তের হালকা শীতের মৃদু বাতাসে দুলছে চাষিদের স্বপ্ন থোকা থোকা শিম। ছোট ছোট ফুল আর থোকা থোকা শিমে ভরে উঠেছে সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাটের সবজি চাষিদের শিম বাগান। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এ বছর বাম্পার ফলন হয়েছে শিমে।
অল্প জমি, স্বল্প পুজি ও একটু পরিচর্যা করলে উঁচু জমিতে শিম চাষ করে বেশ মুনাফা অর্জন করা সম্ভব। আষাঢ় মাসের শেষ দিকে সারিবদ্ধভাবে গর্ত খুড়ে কিছু গোবর সার প্রয়োগ করে শিমের বীজ বপন করতে হয়। এর পর কিছু পরিচর্যা সার সেচ ও কীটনাশক প্রয়োগ করে চারা গাছ বড় হলে একটু মাচাং বানিয়ে দিলে মাত্র আড়াই/ তিন মাসে শিম বাজারে পাঠানো সম্ভব বলে দাবি চাষিদের। স্বল্প পুঁজিতে শিম চাষ করে লালমনিরহাটের অনেকেই নিজেদের ভাগ্য বদল করতে সক্ষম হয়েছেন।
জেলার আদিতমারী উপজেলার বড় কমলাবাড়ি গ্রামের এমন একজন চাষি ফেরদৌস আলম। তিনি গত বছর ৬ হাজার টাকা খরচ করে মাত্র ২০ শতাংশ জমিতে শিম চাষ করে প্রায় অর্ধ লাখ টাকা আয় করেছেন। সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে চলতি মৌসুমে ১৮/২০ হাজার টাকা খরচে ৬৫ শতাংশ জমিতে উচ্চ ফলনশীল শিমের চাষ করেন। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ শুধু বীজ উৎপাদনের জন্য এবং বাকি ৩৫ শতাংশ জমির শিম সবজি হিসেবে গত এক মাস ধরে বাজারে বিক্রি করছেন।
চাষি ফেরদৌস জানান, ৩০ শতাংশের বাগান থেকে প্রতি তিন দিন পরপর ৩/৪ মণ শিম উঠছে। প্রথম দিকে প্রতিমণ ৪ হাজার টাকা বিক্রি হলেও এখন বিক্রি করছেন প্রতিমণ এক/দেড় হাজার টাকা। প্রথম দুই সপ্তাহের উৎপাদিত শিমে তার উৎপাদন খরচ উঠেছে। মন্দা বাজারেও এখন প্রতি সপ্তাহে ৮/১০ হাজার টাকার শিম বিক্রি করছেন তিনি। এভাবে আরো এক/দেড় মাস শিম আসবে তার বাগান থেকে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে ওই ৩৫ শতাংশ জমি থেকে লক্ষাধিক টাকা আয় করার আশা করছেন তিনি। এ ছাড়াও বাকি ৩০ শতাংশের বীজ বিক্রি করেও অর্ধ লাখ টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখছেন তিনি। সব মিলে ৬৫ শতাংশ জমি থেকে চলতি মৌসুমে দেড় লাখ টাকা আয়ের স্বপ্ন তার।
পাশের গ্রামের চাষি সৈয়দ আলীর সম্বল বলতে মাত্র ২০ শতাংশ জমি। যেখানে অন্য ফসলের সাথে শিম মৌসুমে কয়েক বছর ধরে শিম চাষ করছেন তিনি। গত বছরও ৬০ হাজার টাকা আয় করেছেন শিম বিক্রি করে। তিনি জানান, শীতকালে শিমের বেশ চাহিদা থাকে তাই বাজারে এর কদরের মত বেড়ে যায় বাজারমূল্য। বিক্রি করতে ঝামেলা নেই। পাইকাররা ক্ষেত থেকে শিম কিনে নেয় নায্য মূল্যে। অল্প জমিতে বেশি মুনাফা পেতে শিম চাষের বিকল্প নেই বলে তিনি দাবি করেন।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার বড়বাড়ি এলাকার চাষি নজরুল ইসলাম জানান, উঁচু জমিতে ধান চাষ করে তেমন মুনাফা না আসায় কৃষি চাষাবাদ ছেড়ে দেয়ার চিন্তা করেছিলেন। হঠাৎ এক আত্মীয়ের পরামর্শে পাঁচ বছর আগে পরীক্ষামূলক মাত্র ১০ শতাংশ জমিতে শিমের চাষ করে বেশ লাভবান হন তিনি। সেই থেকে শিম চাষে আগ্রহ বাড়ে তার। চলতি মৌসুমে প্রায় ৮০ শতাংশ জমিতে শিমের চাষ করে এ পর্যন্ত প্রায় ৩০ হাজার টাকা আয় করেছেন তিনি। উৎপাদন খরচ উঠে গিয়ে লাভের অংশে পড়েছেন তিনি। আবহাওয়া আর বাজার অনুকুলে থাকলে দুই লাখ টাকা আয় করার আশা করছেন এ কৃষক।
শিম চাষের আয়ে সংসার ও ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ মিটিয়ে প্রতি বছর জমি বন্দক নিচ্ছেন তিনি। করেছেন বাড়ি ও গাড়ি। অভাব নামক দানবকে বিদায় দিয়েছেন। তার অনুকরণে ওই গ্রামের অনেক চাষি এখন বাণিজ্যিকভাবে শিম চাষ শুরু করেছেন।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক বিদু ভূষণ রায় জানান, শিম প্রোটিন সমৃদ্ধ একটি সবজি। এর বিচিও সবজি হিসেবে খাওয়া যায়। তাই দেশে এর চাহিদা ব্যাপক। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় শিমের বাম্পার ফলন হয়েছে। শিম চাষিরা বেশ লাভবান হবেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি। সূত্র:এনবি
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন