খাবার টেবিলে সবজি একটি অন্যতম খাদ্য। শীতকালে সবজির কদর অন্য যে কোনো সময়ের থেকে একটু বেশিই থাকে। শরীরকে ঠিক রাখতে সবজি একটু বেশি খাওয়া প্রয়োজন। তবে পুষ্টি অনুযায়ী রকমারি সবজি শরীরের জন্য বেশি উপকারী। আসুন জেনে নিই শীতকালীন কয়েকটি শাকসবজি ও পুষ্টিগুণ।
লাউ: লাউ মূলত পানিপূর্ণ ঠান্ডা জাতীয় একটি সবজি। এতে সবচেয়ে বেশি রয়েছে পানি। এ ছাড়াও রয়েছে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ভিটামিন কে, ভিটামিন ই, ফাইবার, ফসফরাস, আয়রন, ক্যালসিয়াম, জিংক ইত্যাদি। লাউয়ের জিংক উপাদানটি আমাদের দেহকে হৃদরোগ থেকে রক্ষা করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে লাউকে পথ্য হিসেবে ধরা হয়। এটি রক্তে গস্নুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে। লাউ খেলে স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়। লাউয়ে বিদ্যমান ক্যালসিয়াম আমাদের দাঁত ও হাড়ের মজবুত গঠনে সহায়তা করে। লাউ একটি পানি জাতীয় সবজি বলে এটি সহজেই আমাদের দেহের পানিশূন্যতা দূর করে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে আমাদের রক্ষা করে। লাউ খেলে ঘুম ভালো হয়- এমনকি এটি ইনসোমনিয়া বা অনিদ্রার জন্য বেশ উপকারি একটি সবজি।
ধনেপাতা : ধনেপাতায় রয়েছে ভিটামিন ‘সি’, ভিটামিন ‘এ’ ও ফলিক এসিড যা ত্বকের জন্য যথেষ্ট প্রয়োজনীয়। এই ভিটামিনগুলো ত্বকে প্রতিদিনের পুষ্টি জোগায়, চুলের ক্ষয়রোধ করে, মুখের ভেতরের নরম অংশগুলোকে রক্ষা করে। মুখ গহ্বরের ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করে। ধনেপাতার ভিটামিন ‘এ’ চোখের পুষ্টি জোগায়, রাতকানা রোগ দূর করতে ভূমিকা রাখে। কোলেস্টেরলমুক্ত ধনেপাতা দেহের চর্বির বিরুদ্ধে লড়াই করে। ধনেপাতায় উপস্থিত আয়রন রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে এবং রক্ত পরিষ্কার রাখতেও অবদান রাখে। এ ছাড়া ভিটামিন ‘কে’তে ভরপুর ধনেপাতা হাড়ের ভঙ্গুরতা দূর করে শরীরকে শক্ত-সামর্থ্য করে। তবে ধনেপাতা রান্নার চেয়ে কাঁচা খেলে উপকার বেশি পাওয়া যায়। মস্তিষ্কের এক ধরনের রোগ রয়েছে- যা নিরাময়ে ধনে পাতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ধনেপাতা শীতকালীন ঠোঁট ফাঁটা, ঠান্ডা লেগে যাওয়া, জ্বর জ্বরভাব দূর করতে যথেষ্ট অবদান রাখে। ধনেপাতায় রয়েছে ভিটামিন ‘সি’তে ভরপুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট নামের এক উপাদান। যা নানাবিধ ঔষধি ভূমিকা পালন করে।
শিম: শিম সুস্বাদু, পুষ্টিকর, আমিষের একটি ভালো উৎস। এটি সবজি হিসেবে এবং এর শুকনো বীজ ডাল হিসেবে খাওয়া হয়। শিমের পরিপক্ব বীজে প্রচুর আমিষ ও স্নেহজাতীয় পদার্থ আছে। এটির আঁশ-জাতীয় অংশ খাবার পরিপাকে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। ডায়রিয়ার প্রকোপ কমায়। রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়- যা হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে পাকস্থলী ও পিস্নহার শক্তি বাড়ায়। লিউকোমিয়াসহ মেয়েদের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে, শিশুদের অপুষ্টি দূরীভূত করে। শিমের ফুল রক্ত আমাশয়ের চিকিৎসায় ব্যবহার করা যায়।
শেষ কথা, সকল প্রকার শাকসবজিতেই থাকে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান- যা ত্বকের বার্ধক্যরোধে ভূমিকা রাখে, ত্বকের সজীবতা ধরে রাখে। এ ছাড়া শাকসবজিতে থাকে প্রচুর পানি- যা দেহে পানির ঘাটতি পূরণ করে। শাকসবজির অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক। শাকসবজির আঁশ ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান খাদ্যনালির ক্যান্সারসহ বিভিন্ন ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। আঁশজাতীয় খাবার শাকসবজি গ্রহণে শরীর মুটিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা পায়। তাই আজই বাড়িতে নিয়ে আসুন অধিক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ শীতের সবজি।