শীত আসছে,সাথে নিয়ে আসছে গবাদিপশুর নানান রোগ. আসছে শীতে তাই খামারী ভাই বা যারা গরু লালন পালন করেন তাদের কিছু শীত মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। কারণ শীতের শুরুতে গবাদিপশুর আবহাওয়াজনিত কারণে নানান রোগ দেখা দিতে পারে এবং এর জন্য প্রতিরোধ মুলক ব্যবস্থা না দিলে গবাদিপশুর স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকির সৃষ্টি হতে পারে।
শীতে গবাদিপশুর যে রোগ গুলি সাধারণত দেখা দেয় সেগুলি হল ক্ষুরারোগ,গলাফুলা,তড়কা,বাদলা, ফ্যসিওলিওসিস,নিউমোনিয়া ইত্যাদি। তাই এসব রোগ থেকে গবাদিপশুকে রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। নিচে এই ব্যপারে কিছু দিক নির্দেশনা দেয়া হল।
খাদ্য অভ্যাস : শীতকালে প্রাণী শরীরে হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, ফলে দুধের উৎপাদন ও বৃদ্ধি পায়। কিন্তু বাড়তি উৎপাদনের জন্য চাই বাড়তি শক্তি। তাই শীতকালে গরুকে অধিক খাবার দেয়া জরুরি। তবে একই সাথে এটাও মনে রাখতে হবে শীতকালে গরুর শরীরে কোষ্ঠ্যকাঠিন্যের প্রবলতা দেখা যায়। কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে থেকে রক্ষা করতে গরুকে অধিক আশযুক্ত খাবার যেমন ঘাস খড় দেয়া আবশ্যক।
পানি : শরীরবৃত্তীয় কাজে কম পানি দরকার হওয়ায় এবং অধিক ঠান্ডা হওয়ায় শীতকালে সকল প্রাণী পানি পানের পরিমান কমিয়ে দেয়। এই সমস্যা উত্তরণের জন্য গরুকে ট্যাংকে সংরক্ষিত বাসি ঠান্ডা পরিবেশন থেকে বিরত থাকতে হবে। গরুর জন্য বিশুদ্ধ ফ্রেশ পানির ব্যবস্থা করতে হবে।
বাসস্থান : শীতকালে ঠান্ডা বাতাস যেন সরাসরি গরুর গায়ে না লাগে এইজন্য ঠান্ডা বাতাস প্রবেশের রাস্তা গুলো চটের বস্তা অথবা পলিথিন বা অন্য কোন উপায়ে বন্ধ করে দিতে হবে। ঠান্ডা বাতাসে গরুর নিউমোনিয়া সহ ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হতে পারে। প্রয়োজনে গরুকে পুরান কম্বল বা পাটের বস্তা এই জাতীয় জিনিস দিয়ে রাতে জড়িয়ে রাখতে হবে।
পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা: ঠান্ডায় গরুর শেডে যেন পানি জমে না থাকে অথবা গরুর প্রস্রাব জমে না থাকে এবং ফ্লোর যেন অধিক শুষ্ক থাকে সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। দরকার হলে ফ্লোর ম্যাট ব্যবহার করতে হবে।
রোগ ব্যাধি : শীতকালে গরু নিউমোনিয়া, কাশি সহ ঠান্ডা জনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই এই রোগের বিষয়ে বিশেষ সচেতন থাকতে হবে। ঠান্ডা জনিত কোনো সমস্যার লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত প্রাথমিক চিকিৎসা করতে হবে। প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য হাতের কাছে বিশুদ্ধ মধু এবং তুলসী গাছ রাখতে হবে।
বাছুরের যত্ন : ঠান্ডায় সবচে বেশি আক্রান্ত হয় নবজাতক বাছুর। যেহেতু বাছুরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে তাই ঠাণ্ডাজনিত রোগের শিকার ও সবচে বেশি হয়। তাই শীতকালে অবশ্যই বাছুরকে গরম কাপড় দিয়ে জড়িয়ে রাখতে হবে এবং গরম এবং শুষ্ক জায়গা রাখতে হবে। কোনো প্রকার ঠান্ডা জনিত সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
শীতে আপনার বিশেষ যত্নই আপনার খামারকে শীতকালীন সমস্যা থেকে মুক্ত রাখতে সাহায্য করবে। আর এজন্য আপনার সচেতনতা সবচে বেশি জরুরি।
এই শীতে আপনার করণীয়
খামারের চারদিকে দেওয়াল না থাকলে বা ফাঁকা থাকলে চট দিয়ে নয়তো মোটা কাপড় দিয়ে ঢেকে দিতে হবে যাতে বাহিরের ঠান্ডা হাওয়া ভিতরে প্রবেশ না করে। বাহিরে ঠান্ডা হাওয়া বা বাতাস থাকলে খামারের গরুগুলো কে বাহির করবেন না, খামারের ভিতরে রেখেই খাদ্য দিতে হবে।
শীত বা ঠান্ডা বেশি থাকলে গরুকে কুসুম গরম পানির সাথে খাদ্য খেতে দিতে হবে। শীতে গরুর যাতে করে ঠান্ডা না লাগে সে দিকে খেয়াল করতে হবে তাই রাবার মেট ব্যবহার করতে হবে গরু রাবার মেটে শুইলে কিছুটা ঠান্ডা থেকে রক্ষা পাবে।
অথবা নিচে খড় বিছিয়ে দিতে হবে।
শীত অতিরক্ত বেশি হলে খামারে তাপমাত্রা বাড়াতে হবে বৈদ্যুতিক বাল্ব ব্যবহারের মাধ্যমে। খামারের প্রতিটি গরুকে ভ্যাকসিনের কাজ সম্পূর্ণ করতে হবে কারণ শীতে রোগব্যাধি বেশি দেখা দেয়। খামারে কোন দূবল’ গাভী থাকলে ঐ গাভীর দিকে শীতে সু নজর রাখেন এবং প্রাণীসম্পদ হাসপাতালে ভেটেরিনারি অফিসারের সাথে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিবেন। খামার সবসময় পরিস্কার রাখুন, যাতে করে প্রসাব পায়খানা গরুর শরীলে মিশে শরীল না মাখে, কারণ ঠান্ডা বেশি থাকলে প্রতিদিন গরুকে গোসল করানো ঠিক হবে না।তাই শরীল পরিস্কার থাকলে সপ্তাহে ২/৩ দিন গোসল করালেই চলে। তবে অতিরিক্ত শীতে নয়।
প্রতিদিন সকাল বিকালে আপনার খামারের প্রতিটি গরুর ৪ পা ও পায়ের তলদেশে এবং খামারের আশেপাশে জীবনুনাশক স্প্রে ব্যবহার করুন।
জীবাণু নাশকঃ GPC 8 অথবা FAM 30
ব্যবহারঃ ১ মুখ ঔষধ ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে ব্যবহার করবেন।
ফার্মসএন্ডফার্মার/ ১৩ ডিসেম্বর, ২০২২