শীতকালে পোল্ট্রি ফার্মের যত্ন নেওয়ার কৌশল

48

ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার আমিষের চাহিদা পূরণে পোলট্রি ফার্মের ভূমিকা অপরিসীম। তাই সরকার দেশের যুব সমাজের জন্য স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণ ও ঋণ দিয়ে পোল্ট্রি পালনে উৎসাহিত করছে। দিন দিন এটিকে আরও ব্যাপকভাবে করা হচ্ছে।

পোলট্রি ফার্ম থেকে ভালো আয় করতে হলে সব নিয়ম মানতে হবে। বিশেষ করে শীতকালে পোল্ট্রি খামারের বিশেষ যত্ন না নিলে কমে যেতে পারে ব্রয়লারের ওজন বৃদ্ধি, লেয়ার খামারে ডিমের সংখ্যা এবং বেড়ে যেতে পারে মৃত্যু ঝুঁকি। তাই শীতকালে মুরগির বাচ্চার সঠিক তাপমাত্রা সরবরাহ করা একটি প্রধান সমস্যা।

এছাড়াও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য খামারিরা মুরগির ঘরে পলিথিন বা মোটা কাপড়ের পর্দা ঝুলিয়ে রাখেন। এ কারণে মুরগির বাচ্চার ঘরে মুক্ত বাতাস বিশেষ করে অক্সিজেন সরবরাহে অপ্রতুলতা, এমোনিয়া গ্যাস বৃদ্ধির কারণে শ্বাসকষ্ট, মুখমণ্ডল ফুলে যাওয়াসহ অন্যান্য উপসর্গ দেখা যায়। ফলে প্রতিদিনই বাচ্চা মারা যায়। এ অবস্থা কাটিয়ে ওঠার জন্য ফার্মের মুরগি ভালো রাখার জন্য যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে,-

ঘরে অবশ্যই ছালার বা চটের পর্দা ঝুলাতে হবে। তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য ডাবল করে চটের পর্দা সেলাই করে তবেই পর্দা ঝুলাতে হবে। অতিরিক্ত শীতে চিক গার্ডের চারদিকে এবং উপরে মশারীর মতো করে চটের পর্দা ঝুলানো যেতে পারে।

ব্রুডার বক্সে ২০০ ওয়াটের বাল্ব লাগিয়ে ব্রুডিং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এছাড়াও তাপ দেওয়ার ঘরে অতিরিক্ত কিছু বাল্ব রিফ্লেকটারসহ নিচু করে ঝুলানো যেতে পারে এবং প্রয়োজন অনুসারে এগুলো জ্বালাতে হবে।

লোডশেডিং এবং তীব্র শীতের সময় তাপ দেয়ার ঘরে চিক গার্ডের চারদিকে প্রয়োজনমতো কেরোসিনের স্টোভ জ্বালিয়ে ব্রুডিং তাপমাত্রা ধরে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। কেরোসিনের স্টোভের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যেগুলো নীলাভ আগুন বের হয় এবং যেগুলো হোটেল রেস্তরাঁয় ব্যবহৃত হয়।

শীতকালে পোল্ট্রি ফার্মের যত্ন নেবেন যেভাবে

ব্রুডিং তাপমাত্রা কম হলে বাচ্চা এক জায়গায় জড়ো হয়ে গাদাগাদি করে থাকে, বিশেষ করে রাতের বেলায় এবং এতে করে নিচে চাপে পড়ে শ্বাস বন্ধ হয়ে অনেক বাচ্চা মরে যেতে দেখা যায়। এ অবস্থা কাটিয়ে ওঠার জন্য ঘরের তাপমাত্রা অবশ্যই নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে এবং মাঝে মাঝে বাচ্চাগুলোকে নাড়িয়ে দিতে হবে যেন অনেকক্ষণ একসাথে গাদাগাদি করতে না পারে।

সবসময় মনে রাখতে হবে ইলেকট্রিক ব্রুডারের মাধ্যমে তাপ সরবরাহ করার চেয়ে গ্যাস ব্রুডার ব্যবহার করাই সবচেয়ে বিজ্ঞানসম্মত। কারণ ইলেকট্রিক ব্রুডার ব্যবহারের মাধ্যমে মুরগির ঘরে আলোর কর্মসূচি সঠিকভাবে পালন করা সম্ভব হয় না।

বিশেষ করে শীতকালে ইলেকট্রিক ব্রুডারের পাশাপাশি গ্যাস ব্রুডার ব্যবহার করলে সঠিকভাবে আলোর কর্মসূচি পালন করা যাবে, সেইসাথে ব্রুডিং তাপমাত্রাও যখন যা প্রয়োজন সেভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।

যেমন,- প্রথম সপ্তাহে ব্রুডিং তাপমাত্রা ৯৫ ডিগ্রি ফারেনহাইড, দ্বিতীয় সপ্তাহে ব্রুডিং তাপমাত্রা ৯০ ডিগ্রি ফারেনহাইড, তৃতীয় সপ্তাহে ব্রুডিং তাপমাত্রা ৮৫ ডিগ্রি ফারেনহাইড, চতুর্থ সপ্তাহে ব্রুডিং তাপমাত্রা ৮০ ডিগ্রি ফারেনহাইড, পঞ্চম সপ্তাহে ব্রুডিং তাপমাত্রা ৮০ ডিগ্রি ফারেনহাইড রাখতে হবে তবে চিক গার্ড খুলে দিতে হবে। ব্রুডিংয়ের সময় প্রথম ১০ থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত দৈনিক একবেলা প্রতি লিটার পানিতে ১ গ্রাম করে ইলেক্ট্রোলাইট খাওয়ালে ভালো ফল পাওয়া যাবে।