মুরগির ঠান্ডা কারণ
লক্ষণ, চিকিৎসা ও ঔষধ ব্যবস্থাপনা। মুরগির ঠান্ডার ঔষধ ও চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে আলোচনার পূর্বে মাইকোপ্লাজমোসিস তথা সি আর ডি রোগ ও সি সি আর ডি নিয়ে একটু আলোচনা করতে চাই।
মোরগ মুরগির ঠান্ডা বা মাইকোপ্লাজমার বিভিন্ন প্রজাতি দ্বারা আক্রান্ত হলেও আমাদের দেশে সাধারণত সবচেয়ে মারাত্মক ভাবে মোরগ-মুরগি আক্রান্ত হয়ে থাকে মাইকোপ্লাজমা গেলিসেপটিকাম নামক প্রজাতির মাধ্যমে। যা নিম্নে আলোচনা করা হলো।
মাইকোপ্লাজমোসিস হচ্ছে মাইকোপ্লাজমা নামক জীবাণু হতে সৃষ্ট একটি সংক্রামক রোগ। সব বয়সের মুরগি এবং টার্কি এ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। এ রোগে শ্বাসতন্ত্রের বায়ুথলি আক্রান্ত হলে বলে এ রোগের অপর নাম এয়ার সেকুলাইটিস। মাইকোপ্লাজমার বিভিন্ন প্রজাতি হাঁস-মুরগি ও টার্কিতে প্রধানত নিম্নলিখিত রোগগুলো সৃষ্টি করে। এগুলো সবই মুরগির ঠান্ডা জনিত রোগ।
চিকিৎসা
চিকিৎসায় রোগ সম্পূর্ণরূপে ভালো হয়।
মাইকোপ্লাজমা কি?
মাইকোপ্লাজমা হলো এমন একপ্রকার অনুজীব যা কিনা ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস থেকে আলাদা। আর এই মাইকোপ্লাজমা দ্বারা সৃষ্ট রোগ কে বলা হয় মাইকোপ্লাজমোসিস।
ক্রনিক রেসপিরেটরি ডিজিজ
মাইকোপ্লাজমা গেলিসেপটিকাম ইনফেকশন/ ক্রনিক রেসপিরেটরি ডিজিজ মোরগ-মুরগির শ্বাসতন্ত্রের একটি জটিল রোগ। দুই থেকে ছয় সপ্তাহ বয়সের মুরগি এ রোগে সংক্রমিত হয় তবে। ব্রয়লার মুরগিতে এই ঠান্ডা জনিত রোগের প্রকোপ অত্যন্ত বেশি থাকে। শীতকালে এ রোগের প্রকোপ বেশি দেখা যায়। প্রধানত মাইকোপ্লাজমা গ্যালিসেপটিকাম জীবাণু এ রোগের কারণ হলেও শ্বাসতন্ত্রের অন্যান্য ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের জটিলতায় দীর্ঘস্থায়ী রোগের সৃষ্টি হয়। তাই এ রোগের অপর নাম ক্রনিক রেসপিরেটরি ডিজিজ বা সি আর ডি।
বাতাসের মাধ্যমে এ রোগের জীবাণু ছড়াতে পারে। আক্রান্ত মুরগির ডিম হতে বাঁচাতে এই রোগ সংক্রমিত হয়। রোগাক্রান্ত এবং বাহক মুরগির দেহ হতে নিঃশ্বাসের মাধ্যমে রোগের জীবাণু বের হয়ে আসে। ফলে খাদ্য, পানি এবং লিটার দূষিত হয় এবং এগুলোর মাধ্যমে সুস্থ মুরগির রোগ সংক্রমিত হয়। ইঁদুর, আঠালির সাহায্যে ও এ রোগ সংক্রমিত হতে পারে।
মুরগির ঠান্ডা রোগের লক্ষণ
মুরগির ঠান্ডা বা মাইকোপ্লাজমোসিস হলে নিম্নক্ত লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়। শ্বাসনালীর ভেতর ঘড় ঘড় শব্দ, নাক দিয়ে তরল পদার্থ বের হওয়া ও কাশি হওয়া। আক্রান্ত মুরগির খাদ্য গ্রহণে অনীহা, ওজন কমে যাওয়া এবং ডিম পাড়া বন্ধ হয়ে যাওয়া। ডিম উৎপাদন 15 থেকে 20 পার্সেন্ট নেমে আসে। এ রোগে মৃত্যুর হার কম হলেও জটিল ও দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি হয়।
পোস্টমর্টেম রিপোর্ট
এ সময়ের মধ্যেই সিরিঞ্জের রক্ত জমাট বেধে যাবে এবং সম্মুখভাগে রক্তের সাদা শ্রীরাম পাওয়া যাবে। এখন একটি সাদা প্লেটে একফোঁটা সিরাম ও এক ফোটা রঙিন অ্যান্টিজেন মিশিয়ে নারান। কাঠের সাহায্যে ভালোভাবে মেশাতে হবে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে যদি মিশ্রণটি দুধের ছানার নেয় জমাট অবস্থা ধারণ করে তবে অবশ্যই বুঝতে হবে ওই মুরগি মাইকোপ্লাজমা জীবাণুর দিয়ে রোগে আক্রান্ত হয়েছে বা মাইকোপ্লাজমার জীবাণু বহন করছে।
আর যদি মিশ্রণটি পূর্বের অবস্থায় থেকে যায় তবে বুঝতে হবে ওই মুরগিটি মাইকোপ্লাজমার জীবাণু দিয়ে আক্রান্ত নয় বা মাইকোপ্লাজমার জীবাণু বহন করছে না। মাইকোপ্লাজমা ক্রনিক রেসপিরেটরি রোগের এটি একটি নিশ্চিত পরীক্ষা।
নিচে উল্লেখিত যেকোনো একটি ঔষধ প্রয়োগ করে চিকিৎসা দেওয়া যেতে পারে ঔষধ প্রয়োগের পূর্বে অবশ্যই অভিজ্ঞ কনসালটেন্ট প্রাণী চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া আবশ্যক। মুরগির ঠান্ডা লাগলে যা করণীয়।
মুরগির ঠান্ডার ঔষধ
ব্রয়লার, লেয়ার ও সোনালী মুরগির ঠান্ডার ঔষধ।
টাইলোসিন– প্রতি লিটার খাবার পানিতে ২ গ্রাম মিশিয়ে তিন থেকে পাঁচ দিন খাওয়াতে হবে।
টিয়ামুলিন ৪৫%- প্রতি লিটার খাবার পানিতে ১ গ্রাম মিশিয়ে তিন থেকে পাঁচ দিন খাওয়াতে হবে।
মাইক্রো স্টপ– প্রতি লিটার খাবার পানিতে ১ গ্রাম মিশিয়ে দুই থেকে পাঁচ দিন খাওয়াতে হবে।
টাইলোভেট ২০০– প্রতি লিটার খাবার পানিতে ২ গ্রাম মিশিয়ে তিন থেকে পাঁচ দিন খাওয়াতে হবে।
দেশি মুরগির ঠান্ডার ঔষধ।
রোনামাইসিন ট্যাবলেট- ১ টি ট্যাবলেট গুড়ো করে ভাতের সাথে মিশিয়ে প্রতি দিন ৩ বার খাওয়াতে হবে। ৩-৫ দিন।
রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা
ব্রিডার ও লেয়ার মুরগির নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা করা উচিত। রক্ত পরীক্ষা করে যে শেডে এ রোগের জীবাণু পাওয়া যাবে সে খামার থেকে মুরগির ডিম ফোটানো উচিত নয় এবং আক্রান্ত মুরগি সরিয়ে ফেলে চিকিৎসা করা উচিত। সর্বদা মুরগির খামারে স্বাস্থ্যসম্মত অবস্থা বজায় রাখা উচিত।
সময়মতো মুরগির সকল প্রকার ভ্যাকসিন বা টিকা প্রয়োগ করা উচিত।