শীতের আগে মাছের বিশেষ পরিচর্যায় নজর

638

বর্ষা শেষ হয়ে শীত প্রায় আসন্ন। এই সময় কোনও পুকুরে ছোট ছোট ধানী পোনা, আঙুলে পোনা (২-৪ সেমি) রয়েছে— যেগুলো বর্ষার শেষে ডিম ফুটে বের হয়েছে। কোনও পুকুরে চারা পোনার চাষ (প্রায় ৪ ইঞ্চি) হচ্ছে।

এই সময় পুকুরের বদ্ধ জলে মাছ চলাফেরা খুবই কম করে। ফলে মাছের খিদে কম পায়, রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ে। দিন ছোট হওয়ায় রোদ অল্প সময় পুকুরের জলে পড়ে। ফলে জলের চরিত্রগত পরিবর্তন শুরু হয়—

১) জলের তাপমাত্রা কমতে থাকে। জলের তাপমাত্রা ২৮-৩২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড হলে মাছের বিপাক ক্রিয়া ভাল হয়। এর কম হলে বিপাক ক্রিয়া কমে যাওয়ায় বৃদ্ধির হার কমে।

২) অক্সিজেন উৎপাদন কমে যাওয়ায় মাছের শ্বাসকার্য চালাতে কষ্ট হয়। মাছ জলের উপরের দিকে ভাসতে থাকে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে মারা যায়।

৩) পুকুরের মধ্যস্থিত উদ্ভিদকণার প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরির প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়ায় জলে দ্রবীভূত কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যায়। এর ফলেও মাছের শ্বাস নিতে অসুবিধা হয়।

৪) উদ্ভিদকণা ও প্রাণিকণা কমে যাওয়ায় মাছের খাবার কমে আসে।

৫) জলের পিএইচ স্বাভাবিক থাকে না। মাছের বৃদ্ধির জন্য পিএইচের মান ৬-৮ এর মধ্যে থাকা উচিত। যদি এর থেকে কম হয়, তাহলে জল অম্ল হবে এবং মাছ খাবার খেতে অনীহা দেখাবে। আবার বেশি হয়ে গেলে জল ক্ষারীয় হবে এবং কিছু ক্ষেত্রে মড়ক দেখা দিতে পারে।

ক্ষতি এড়াতে এই সমস্ত সমস্যার সমাধানে উদ্যোগী হতে হবে মাছচাষিদের।

১) পুকুড়ের পাড় যথাসম্ভব পরিষ্কার রাখতে হবে। যাতে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পুকুরে সূর্যের আলো পড়ে।

২) পুকুরের জলে পিএইচ ৬-৮ এর মধ্যে থাকলে বিঘা প্রতি প্রতি মাসে ৫-১০ কেজি চুন প্রয়োগ করতে হবে। পিএইচ কম থাকলে চুনের পরিমাণ বাড়াতে হবে। পিএইচ বেশি থাকলে চুন দেওয়ার দরকার নেই।

৩) জৈব সার দিতে হবে। কিন্তু খেয়াল রাখবেন, জৈব সার পচনের জন্য প্রচুর অক্সিজেনের খরচ হয়। তাই মেঘলা দিনে বা সূর্ষের আলো তেমন না পড়লে জৈব সার দেওয়া চলবে না।

৪) পুকুরে উদ্ভিদকণা বৃদ্ধির জন্য অজৈব সার বিশেষ করে ইউরিয়া (বিঘা প্রতি মাসে ৪-৫ কেজি) ও সিঙ্গল সুপার ফসফেট (বিঘা প্রতি মাসে ৫-৬ কেজি) প্রয়োগ করতে হবে। কিন্তু পুকুরের জলের উপর থেকে দৃশ্যতা ২৫-৩০ সেমির কম হলে বা জল ঘন সবুজ রঙের হয়ে গেলে অজৈব সার দেওয়া চলবে না।

৫) মাছের দ্রুত বৃদ্ধির জন্য চালের কুঁড়ো, ভূট্টার গুঁড়ো ইত্যাদির সঙ্গে সমপরিমাণে খোল যেমন, সর্ষে, বাদাম, তিল ইত্যাদি মেশাতে হবে। মূল খাবারের সঙ্গে অতি অবশ্যই ১% খনিজ লবণ বা ২% সাধারণ লবণ মেশাতে হবে।

৬) মাছের হজমশক্তি বাড়ানোর জন্য প্রতি কুইন্ট্যাল খাবারে ৫০-১০০ গ্রাম উপযুক্ত উৎসেচক বা এনজাইম বা হজমি প্রয়োগ করা যেতে পারে। যখনই হজমশক্তি বাড়বে তখনই মাছ খাওয়ার জন্য ছোটাছুটি করবে।

৭) প্রতি ১০-১৫ দিন অন্তর পুকুরে জাল টানতে হবে ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে। জাল টানলে মাছের সংখ্যা ও ওজন সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যাবে। এছাড়া জাল টানার ফলে পুকুর থেকে বিভিন্ন ক্ষতিকারক গ্যাস বেরিয়ে যাবে যা মাছের বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে।

৮) জল কম থাকলে গোসাপ, উদবিড়ালরা মাছ খেয়ে ফেলতে পারে। এদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

প্রয়োজনে স্ট্রেপটোসাইক্লিন (৫০ পিপিএম) জাতীয় অ্যান্টিবায়োটিক বা পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট (২০০-২৫০পিপিএম) জলে মেশানো যেতে পারে।

লেখক মালদহ কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্রের বিশেষজ্ঞ।

ফার্মসএন্ডফার্মার/১০সেপ্টেম্বর২০