শীতের সবজিতে হবে রোগ প্রতিরোধ

669

vigitable20191225093155
বকুল হাসান খান
এখনও শীতের বাজাওে পাওয়া যা্েচছ। এসব সবজির মধ্যে রয়েছে টমেটো, বাঁধাকপি, মটরশুুঁটি, ফুলকপি, গাজর, সিম, বরবটি, করলা ইত্যাদিসহ নানান ধরনের শাকসবজি। এসব শাকসবজি শরীরের বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ও নিরাময়ে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এবার শীতের কয়েকটি সবজি’র গুণাগুণ তুলে ধরা হলো।

টমেটো: টমেটো এ সময়ের একটি আলোচিত সবজি। প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধে টমেটো ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। টমেটোর মধ্যে রয়েছে এন্টি অক্সিডেন্ট উপাদান লাইকোপেন। এ লাইকোপেন দেহকোষ থেকে বিষাক্ত ফ্রিরেডিক্যালকে সরিয়ে প্রোস্টেট ক্যান্সারসহ মূত্রথলি, অগ্নাশয় ও অন্নানালীর ক্যান্সার প্রতিরোধ সহায়তা করে, গবেষকরা বলেছেন, যারা সপ্তাহে অন্তত ৪ বার টমেটো খায়। তাদের ক্ষেত্রে প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি শতকরা ২০ ভাগ কমে যায়। আর সপ্তাহে ১০ বার খেলে ঝুঁকি ৫০ ভাগ কমে আসে। তবে এ উপকার পেতে হলে তারা পাকা টমেটো এবং রান্না করা কিংবা সস করা টমেটো খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

ফুলকপি ও মটরশুঁটি: ফুলকপি উল্লেখ যোগ্য পুষ্টি উপাদান হচ্ছে- ক্যালসিয়াম, লৌহ, খনিজসহ ভিটামিন বি-১ ও বি-২, ক্যালসিয়াম হাড়ের গঠনে, মাংসপেশির সংকোচনজনিত ব্যথা দূরীকরণে আর লৌহ রক্ত তৈরির সাহায্য করে। বাজারে উপস্থিত আরেকটি পছন্দের শস্য দানাজাতীয় সবজি হচ্ছে মটরশুঁটি। মটরশুঁটিতে ও রয়েছে ফুলকপির মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান ও ভিটামিন। প্রতি ১০০ গ্রাম ফুলকপি ও মটরশুটিতে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ যথাক্রমে ৪১ মিলিগ্রাম ও ২৬ মিলিগ্রাম এবং লৌহের পরিমাণ উভয় ক্ষেত্রেই ১.৫ মিলিগ্রাম।

গাজর: গাজর রূপেগুণে অনন্য একটি সবজি খাবার হিসাবে গাজরের ব্যবহারও নানাবিধ। কাঁচা ও রান্না করা উভয় অবস্থাতেই গ্রহণ করা যায়। মূলজাতীয় সবজির মধ্যে গাজরে রয়েছে সর্বোচ্চ পরিমাণ বিটাক্যারোটিন। প্রতি ১০০ গ্রাম গাজরে এই বিটাক্যারোটিনের পরিমাণ প্রায় ১৮৯০ মাইক্রোগ্রাম (সূত্র: বিদেশী ম্যাগাজিন) এবং ক্যালসিয়াম প্রায় ৮০ মিলিগ্রাম। তাছাড়া গাজরে রয়েছে লাইকোপেন নামক উপাদান যা ক্যান্সার প্রতিরোধে বিশেষভাবে সহায়ক। গাজরের গুণ অনেক। গাজর ত্বক ও চুলকে সূর্যরশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে। গাজর মহিলাদের ছত্রাক সংক্রমণের ঝুকি কমায়। চোখের ছানি, রাতকানা,হৃদরোগসহ ক্যান্সার প্রতিরোধে গাজর অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।

সিম ও ঢেঁড়স: সিম ও ঢেঁড়সের মধ্যে অন্যান্য সবজির মতো পুষ্টি ও উপাদান এবং ভিটামিন রয়েছে। তবে সিম ও ঢেঁড়সে রয়েছে প্রচুর ক্যালসিয়াম। প্রতি ১০০ গ্রাম সিম ও ঢেঁড়সে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ যথাক্রমে ২১০ ও ১১৬ মিলিগ্রাম। উল্লেখ্য, সবজির মধ্যে সর্বোচ্চ ক্যালসিয়াম রয়েছে ডাটাত প্রতি ১০০ গ্রাম ডাটাতে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ ২৬০ মিলিগ্রাম।

ধনিয়া ও লেটুস: শীতকালীন পাতার মধ্যে এই দুটি পাতাই সহজে কাঁচা অবস্থায় খাওয়া যায়। ফলে প্রকৃত পুষ্টিগুণ প্রায় পুরোটাই এ ক্ষেত্রে বজায় থাকে। বিশেষ করে ভিটামিন সি’র গুণাগুণ অক্ষুন্ন থাকে। এ দুটি পাতাতেই রয়েছে প্রচুর পরিমাণ বিটাক্যারোটিন, ক্যালসিয়াম, লৌহ এবং ভিটামিন বি-১ বি-২ ইত্যাদি।

সবজি ও শাকপাতার একই ধরনের কিছু গুণাগুণ: শাকসবজিতে থাকে প্রচুর পরিমাণে আশ। এ আশ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সক্রিয়ভাবে সাহায্য করে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে শাকসবজির কোন বিকল্প নেই। শাকসবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ. সি এবং বি-১ ও বি-২ যা শরীরের ভিটামিন চাহিদা মিটিয়ে রাতকানা রোগসহ বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে ভিটামিন- এ লিভারে ছয়মাস পর্যন্ত সঞ্চিত থাকে বলে শীতের সময় নিয়মিত শাকসবজি খেলে তা বছরের বাকি সময়ের ভিটামিন- এ’র চাহিদা পূরণে সক্ষম হতে পারে।

শাকসবজিতে থাকে প্রচুর পরিমাণ এন্টি অক্সিডেন্ট উপাদান, যা ত্বকের বার্ধক্যরোধে ভূমিকা রাখে। ত্বকের সজীব রাখে। এছাড়া শাকসবজির এন্টি অক্সিডেন্ট হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক। শাকসবজির আঁশ ও এন্টি অক্সিডেন্ট ইপাদান অন্ননালীর ক্যান্সারসহ বিভিন্ন ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। আঁশ জাতীয় খাবার শরীরে খাদ্যের চর্বি শোষণে বাধা প্রদান করে। তাই শাকসবজি গ্রহণে শরীর মুটিয়ে যাওয়ার থেকে রক্ষা পায়। শাকসবজিতে থাকে ভিটামিন-ই যা শরীর ঠিক রাখে। ভিটামিন-ই হৃদরোগ প্রতিরোধসহ যৌবন শক্তি অটুট রাখতে সাহায্য করে।

ফার্মসএন্ডফার্মার/০২মার্চ২০