শীতকালে বাংলাদেশের কোনো কোনো অঞ্চলের তাপমাত্রা সর্বনিম্ন ৪-৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত নেমে যায়। এ কারণে শীতকালে মুরগির খামারে বিশেষ পরিচর্যার দরকার হয়। তাই লাভজনক খামার ব্যবস্থাপনার জন্য খামারি ভাইদের নিচের বিষয়গুলোর ওপর বিশেষ নজর দিতে হবে।
মুরগির বাসস্থান : শীতকালে বয়সভেদে মুরগির ঘরের ভেতরের পরিবেশ ঠিক করতে হবে। যে বয়সের মুরগি পালন করা হবে সে বয়সের মুরগির জন্য ঘরে উপযোগী পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। ঘরের আশপাশের ঝোপ-জঙ্গল কেটে পরিষ্কার করতে হবে, যাতে দিনের আলো পরিপূর্ণভাবে ঘরের চালার ওপর পড়ে। ঘরের দরজা-জানালার ফাঁক বন্ধ করে দিতে হবে যেন ঠান্ডা বাতাস ঘরে প্রবেশ করতে না পারে। মুরগির ঘরে উপযোগী পরিবেশ তৈরিতে নিচের বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে হবে।
লিটার ব্যবস্থাপনা : শীতকালে লিটার হিসেবে ধানের শুকনা তুষ সবচেয়ে ভালো। তুষ মুরগিকে গরম রাখে। ব্রম্নডার হাউজে ৫-১০ সেন্টিমিটার পুরু করে লিটারসামগ্রী বিছাতে হবে। মুরগি যদি ফ্লোরে পালন করা হয়, তাহলে বড় মুরগির জন্য লিটারের পুরুত্ব ৪ ইঞ্চির কম হবে না। লিটারসামগ্রী হতে হবে পরিচ্ছন্ন ও দূষণমুক্ত। কোনো কারণে পানি পড়ে লিটার ভিজে গেলে ভিজা লিটার বদলে ওই স্থানে শুকনা লিটার বিছাতে হবে। লিটার যেন খুব শুকনা ধুলাময় না হয়।
খামারের তাপমাত্রা : মুরগির ঘরে স্বাভাবিক তাপমাত্রা দরকার ৬৫-৭৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট। তবে ব্রম্নডার হাউজে প্রাথমিক তাপমাত্রা দরকার ২৩-৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যখন পরিবেশের তাপমাত্রা খুব বেশি কমে যায়, তখন ব্র“ম্নডারে বৈদ্যুতিক বাল্ব সংখ্যা বাড়িয়ে দিতে হবে। ঘরের চালা টিনের হলে হার্ডবোর্ড বা এই জাতীয় পদার্থ দিয়ে সিলিং দিতে হবে। ঘর উষ্ণ রাখতে টিনের বা ছাদের ওপর খড় বিছিয়ে দিতে হবে। ঘরে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকতে হবে। ব্রম্নডিং পিরিয়ডে বাচ্চা যাতে সমভাবে তাপ পায় এ জন্য ৫০০ বাচ্চার জন্য ১০০ ওয়াটের তিনটি বাল্ব সংযুক্ত একটি ব্রম্লডার হার্ডবোর্ড স্থাপন করতে হবে। খামারের আলো চলাচল : মুরগির ঘরে আলো এমনভাবে দিতে হবে যেন তা ঘরে সমভাবে ছড়িয়ে পড়ে। ব্রম্নডিং পিরিয়ডে প্রথম তিন দিন নিরবচ্ছিন্ন আলো রাখা দরকার।
প্রতি বর্গমিটারে বাচ্চার ঘনত্ব: ব্রম্নডার হাউজে প্রতি বর্গমিটারে প্রথমে ৫০টি বাচ্চা রাখতে হবে এবং চার দিন বয়সের পর থেকে ক্রমান্বয়ে জায়গা বাড়িয়ে দিতে হবে। ১৪ দিন বয়সের পর ঘরের তাপমাত্রা ঠিক রেখে বাচ্চা যাতে পুরো ঘরে বিচরণ করতে পারে সে অনুযায়ী জায়গা বাড়াতে হবে। ডিমপাড়া মুরগি বা লেয়ারের শরীরের তাপমাত্রা ঘরের তাপকে কিছুটা প্রশমিত করলেও বেশি ডিম উৎপাদনের জন্য এটা ভালো নয়। তাই ঘরে মুরগির ঘনত্ব কেমন হবে তা নির্ভর করবে ঘরের ধরন, ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি, মুরগির বয়স, জাত ও পালন পদ্ধতির ওপর, পরিবেশের তাপমাত্রার ওপর নয়।
হভেন্টিলেশন : মুরগির ঘরে ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা বাতাস প্রবাহের মাধ্যমে ঘরে উৎপন্ন বিষাক্ত বাতাস বের করে এবং বিশুদ্ধ বাতাস প্রবেশে সহায়তা করে। শীতকালে ঘরে ঠান্ডা বাতাস যাতে প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য সব দরজা-জানালা বন্ধ রাখলেও ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা অবশ্যই চালু রাখতে হবে।
ভ্যাক্সিনেশন : সঠিক খামার ব্যবস্থাপনার জন্য একটি ভ্যাক্সিনেশন কর্মসূচি প্রণয়ন করতে হবে। ব্রয়লারের জন্য রানিক্ষেত এবং গামবোরো এই দু’টি ভ্যাক্সিনই যথেষ্ট। তবে খামারের জন্য সম্পূর্ণ ভ্যাক্সিনেশন কর্মসূচি অনুসরণ করতে হবে। শীতকালে পরিবেশের তাপমাত্রা কমে যাওয়ার কারণ বিশেষ করে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ও রানিক্ষেত রোগ সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে। ধারণা করা হয় রানিক্ষেত রোগ প্রতিরোধ করার মাধ্যমে এভিয়ান ইনফস্নুয়েঞ্জা সংক্রমণ কমানো যায়। এ জন্য সময় মতো রানিক্ষেত রোগের ভ্যাক্সিন দিতে হবে।
শীতকালের খাদ্য ব্যবস্থাপনা : শীতকালে ঠান্ডা আবহাওয়ায় মুরগি খাবার বেশি খায়। অতিরিক্ত খাবার খেয়ে শরীরে তাপ উৎপাদন করে। অর্থাৎ শীতকালে শরীরে বেশি ক্যালরি দরকার হয়। এ জন্য খাবারে শর্করা-চর্বি উৎপাদনের উৎস কিছুটা বাড়িয়ে দিতে হবে। তবে সব খাদ্য উপাদানের পরিমাণগুলো ঠিক রেখে কিছু পরিমাণ তেল মিশিয়ে ক্যালরির পরিমাণ বাড়ানো যায়। ব্রম্নডিং অবস্থায় প্রথম তিন দিন লিটারের ওপর চট বা কাগজ বিছিয়ে তার ওপর খাদ্য ছিটিয়ে দিলে ভালো হয়। বাচ্চা মুরগিকে অল্প অল্প করে বারবার খাবার দিতে হবে। ফলে খাবার খাওয়ার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়। শীতকালে সব বয়সের মুরগির উৎপাদন (গোশত, ডিম) কমে যায়। তাই সরবরাহকৃত খাবারে পর্যাপ্ত পুষ্টি উপাদান নিশ্চিত করতে হবে।
পানি : মুরগি যা খাবার গ্রহণ করে তার দ্বিগুণ পানি পান করে। তবে শীতকালে ঠান্ডার কারণে পানি গ্রহণের পরিমাণ কমে যায়। তাই পানি গ্রহণের পরিমাণ ঠিক রাখতে প্রচন্ড শীতের সময় সকালে ঠান্ডা পানি না দিয়ে হালকা গরম দিতে হবে। পানি ভরার আগে পাত্র ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে।
ফার্মসএন্ডফার্মার/২০জানু২০২০