শেরপুরে জনপ্রিয় হচ্ছে বেগুনি ধানের চাষ

343

বেগুনি-ধান
শেরপুর: জেলায় বেগুনি ধানের চাষ ধীরে ধীরে কৃষকদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। সবুজ মাঠে বেগুনি ধানগাছের ঝলকানি কৃষকসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে।

জেলার নকলা উপজেলার বারইকান্দি ও নালিতাবাড়ী উপজেলার ভেদিকুড়া গ্রামে দুইকৃষকের দু’টি ধানক্ষেতে বেগুনি রঙের স্থানীয় বাসিন্দা ও পথচারীদের মধ্যে কৌতূহলের জন্ম দিয়েছে। চারদিকে বিস্তৃত সবুজ ধানক্ষেতের মধ্যে বেগুনি রঙের ধানগাছ দেখে কেউ কেউ থমকে দাঁড়াচ্ছেন।

জেলা কৃষি বিভাগের মতে, নতুন চাষ শুরু হওয়া এ ধানের নাম ‘পার্পল লিফ রাইস’। দেশে সর্বপ্রথম এ জাতের ধানের আবাদ শুরু হয় গাইবান্ধা জেলায়। সৌন্দর্য ও পুষ্টিগুণে ভরপুর এ ধানের চালের রং বেগুনি।
উফশী জাতের এ ধানে রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ অনেকটাই কম হয়। রোপণ থেকে ধান পাকতে সময় লাগে ১৪৫ থেকে ১৫৫ দিন। ফলনও ভালো। একর প্রতি ফলন ৫৫ থেকে ৬০ মণ। অন্যসব ধানের তুলনায় এ ধান মোটা তবে পুষ্টিগুণ অনেক। এ চালের ভাত খেতেও সুস্বাদু।

চলতি বছর শেরপুরের নকলা ও নালিতাবাড়ী উপজেলার দু’টি গ্রামে বেগুনি রঙের এ ধানের চাষ পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হয়েছে।

নালিতাবাড়ী উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে পরীক্ষামূলকভাবে কাকরকান্দি সড়কসংলগ্ন ভেদিকুড়া গ্রামের কৃষক শহীদুল আলমের ৫ শতক জমিতে এই বেগুনি ধান চাষ করা হয়।

কৃষক শহিদুল আলম বলেন, নতুন এই ধান দেখতে প্রতিদিন মানুষ ভিড় করছে। অনেক কৃষক এই ধান চাষ করার জন্য বীজ সংগ্রহ করতে কৃষি বিভাগের কাছে যোগাযোগ করছেন।

নকলার গণপদ্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শামছুর রহমান আবুল জানান, গতবছর পত্রিকায় বেগুনি রঙের ধানের আবাদে সফলতার খবর দেখে ওই ধান চাষ করার প্রতি তার আগ্রহ সৃষ্টি হয়। পরে নকলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ পরেশ চন্দ্র দাসের মাধ্যমে কুমিল্লা থেকে ৫ কেজি বেগুনি রঙের ধানবীজ সংগ্রহ করে এক বিঘা জমিতে আবাদ করেন।

তিনি জানান, বারইকান্দি গ্রামের সড়কের ধারে তার ওই বেগুনি ধানক্ষেতটির পাশে প্রতিদিনই লেগে থাকে পথচারীদের ভিড়। তিনি বলেন, ‘পরীক্ষামূলক এ ধান চাষে আমাকে নকলা উপজেলা কৃষি বিভাগ সার্বিক পরামর্শ প্রদান করছে। ধানক্ষেতটি বিশেষ পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। গাছের আকার-আকৃতি বেশ ভালো দেখা যাচ্ছে। আশা করছি, অন্যান্য ধানের তুলনায় ফলন ভালো হবে।’

নকলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ পরেশ চন্দ্র দাস বলেন, মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা বেগুনি রঙের ধান চাষিকে সবধরনের পরামর্শসহ নিয়মিত ধানক্ষেতটি তদারকি করছেন।ফলন ভালো হলে এর বিস্তার ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্য কৃষকরাও বেগুনি রঙের এ ধান সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে খোঁজখবর নিচ্ছে।

বেগুনি রঙের নতুন এই ধান কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে উল্লেখ করে নালিতাবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শরীফ ইকবাল বলেন, চলতি বোরো মৌসুমে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করা হয়েছে। ফসল কাটা শেষে এর পুষ্টিগুণ যাচাই করে আগামীতে কৃষকদের মধ্যে এর সম্প্রসারন ঘটানো হবে।

জেলায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ আশরাফ উদ্দিন বলেন, ‘বেগুনি রঙের এই ধান বিদেশি নয়। এটা আমাদের দেশিজাতের ধান। আগে অন্যান্য জেলায় চাষ হয়েছে, এবার শেরপুরে আবাদ হচ্ছে। ফলন ভালো হলে উৎপাদিত ধানগুলো বীজ আকারে রাখা হবে।’

তিনি জানান, পরীক্ষামূলক ধানক্ষেতগুলো নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। এখন এর ফলন কী রকম হবে, তা জানতে ধান কাটা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন