শ্রীপুরে উৎপাদিত অধিকাংশ সবজিই বিষমুক্ত

322

2018-01-11_4_902586

গাজীপুর: গাজীপুরের শ্রীপুরের কয়েক হাজার কৃষক শীতের বিভিন্ন সবজি চাষ করে লাভজনক হওয়ায় তাদের মুখে হাসি দেখা গেছে। তীব্র শীতের শুভ্র কুয়াশার চাদর উপেক্ষা করে সবজি চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। শীতের পাশাপাশি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে কৃষকের সবজি চাষ। লতা-পাতা আর ঘাসে চকচক করছে ভোরের শিশির। কৃষকের বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন সবুজ আর সবজির বাহারি খেলা। দেখা যায় ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, লাউ, টমেটো ও ধনেপাতা চারদিকে। মাঠে শীতের সবজির সমারোহ প্রকৃতিকে জানান দিচ্ছে এখন চলছে পৌষ মাস। এবার শীতের সবজির ভালো দাম ও বাম্পার ফলন পাওয়ায় কয়েক হাজার কৃষক এবার নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে।

শ্রীপুর উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, উপজেলার আটটি ইউনিয়ন ও একটি পৌর এলাকার এক হাজার ২৮৬ হেক্টর জমিতে এবার শীতকালীন সবজির চাষ হয়েছে। যার মধ্যে ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, শিম, লাউ, টমেটো ও বিভিন্ন জাতের শাক রয়েছে। স্থানীয় কৃষি অফিসের তত্ত্বাবধানে গত কয়েক বছর যাবৎ কৃষকদের বিষমুক্ত সবজি চাষে প্রশিক্ষণ দেয়ায় এখন শ্রীপুরে উৎপাদিত অধিকাংশ সবজিই বিষমুক্ত। এছাড়াও গত কয়েক বছর ধরে দেশে কোনো হরতাল অবরোধের মতো কর্মসূচি না থাকায়, পণ্য পরিবহনে কৃষক বাড়তি সুবিধার মাধ্যমে ভালো দাম পাচ্ছেন।

কৃষকের উৎপাদিত সবজি রাতে রাতেই গাজীপুর ও মাওনা চৌরাস্তার কয়েকটি আড়ৎ হয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ হচ্ছে। এছাড়াও গ্রামীণ অনেক পরিবার শখের বসে বাড়ির আঙিনায় বিষমুক্ত নানা ধরনের শাক সবজি চাষ করে পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে অধিকাংশ বাজারে বিক্রি করে বাড়তি আয় করছেন।
শ্রীপুরের মাওনা ইউনিয়নের শিরিশগুঁড়ি গ্রামে নিজের ভাড়াকৃত ২৫ বিঘা জমিতে লক্ষাধিক বাঁধাকপির চাষ করে এবার তাক লাগিয়ে দিয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য জিল্লুর রহমান।

২০১২ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩২ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারি বিভাগ থেকে অবসর নিয়ে একই বিভাগের মেজর (অব.) তানভীর হায়দারের বিষমুক্ত সবজি চাষের উৎসাহে তিনি কৃষিতে নিজের সবকিছু বিনিয়োগ করেছেন। প্রথমে পেঁপে চাষের মাধ্যমে কৃষি কাজ শুরু করলেও চলতি মৌসুমে বাঁধাকপির চাষ করেছেন। তিনি জানালেন, লক্ষাধিক বাঁধাকপি এখন বিক্রির উপযোগী। এজন্য তাঁর খরচ হয়েছে পাঁচ লাখ টাকা। বর্তমান বাজারে সবজির ভালো দাম থাকায় আশা করা হচ্ছে লাভের অংক পাঁচ লাখ টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

মুলাইদ গ্রামের কৃষক সিরাজউদ্দিন জানান, বিভিন্ন কারণে নিঃস্ব হওয়ার পথেই আবারো ধার দেনা করে কয়েক বছর কোনো রকমে কৃষিতে টিকে থেকেছেন। এবার সাত বিঘা জমিতে লাউ ও ফুলকপি চাষ করেছেন। দেড় লাখ টাকা খরচ হলেও এখন পর্যন্ত বিক্রি তিন লাখ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। আরো এক লাখ টাকা বিক্রির আশা তাঁর। তিনি আরো জানান, নিজের শ্রমেই বাড়ির পাশের অব্যবহৃত দশ শতাংশ শীত লাউয়ের চাষ করেছেন। এখন পর্যন্ত বাজারে ৫০ টাকা দরে প্রায় ৮শ’ পিস লাউ বিক্রি করেছেন। এতে তাঁর মাচা তৈরি ও আনুষাঙ্গিক খরচ বাদ দিয়ে ২০ হাজার টাকা আয় হয়েছে।

উপজেলা কৃষি অফিসে কমর্রত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবু সাইদ জানান, বিষমুক্ত ও বিজ্ঞানভিত্তিক উপায়ে সবজি চাষে কৃষকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে গড়ে তোলা হচ্ছে। কৃষি একটি লাভজনক ব্যবসা বিধায় এখানে লোকসানের কোনো ধরনের আশঙ্কা নেই। ভালো দাম ও সবজির চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায়, দিন দিন সবজি চাষে কৃষকের আগ্রহ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এ বিষয়ে সার্বক্ষণিক আমরা মাঠে থেকে কৃষকদের বিনামূল্যে পরামর্শ দিচ্ছি। তিনি আরো জানান, কৃষি বিভাগের নজরদারিতে শ্রীপুরে উৎপাদিত অধিকাংশ সবজিই বিষমুক্ত।

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন