সংকট কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে সাতক্ষীরার পোলট্রি শিল্প

115

 

দীর্ঘ সময় ধরে সংকট কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে সাতক্ষীরার পোলট্রি শিল্প। সাতক্ষীরায় খামারে উৎপাদিত মুরগি ও ডিমের দাম বর্তমানে বেশি পাওয়ায় লাভবান হচ্ছেন খামারিরা। এর ফলে গত কয়েক বছরের লোকসান কাটিয়ে সম্প্রতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে এখানকার পোলট্রি শিল্প। জেলায় নতুন করে বাড়ছে পোলট্রি খামার। এসব খামারে উৎপাদিত মুরগি ও ডিম স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে সরবরাহ হচ্ছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। কারণ হিসেবে খামারিরা বলছেন, অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় এসময় মুরগি ও ডিমের ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জেলার সাতটি উপজেলায় উৎপাদনমুখী পোলট্রি খামার রয়েছে তিন হাজার ৭৯৫টি। এর মধ্যে ব্রয়লার এক হাজার ৪২৮টি, সোনালি এক হাজার ৩৯৯টি এবং লেয়ার ৯৬৮টি। এর মধ্যে নিবন্ধিত খামারের সংখ্যা ৭২৬টি। আর নিবন্ধন ছাড়া খামার পরিচালনা হচ্ছে তিন হাজার ৬৯টি। জেলার নিবন্ধিত খামারিদের সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।

সদর উপজেলার ধুলিহর গ্রামের ব্রয়লার খামার মালিক কাসেদ আলী বলেন, আট-দশ বছর ধরে ব্রয়লার মুরগির খামার পরিচালনা করে আসছি। করোনা মহামারির পর থেকে গত কয়েক বছর লোকসানে পড়ে খামার বন্ধ করে দেয়ার চিন্তা করেছিলাম। তবে আবার নতুন করে শুরু করে বর্তমানে লাভের মুখ দেখছি। কয়েক বছর লোকসানের পর সম্প্রতি খামারে লাভ হচ্ছে।

লোকসানের কারণ হিসেবে কাসেদ আলী বলেন, অন্য সময়ের তুলনায় বর্তমানে মুরগির দাম বাজারে বেশি পাচ্ছি। মুরগি, খাদ্য, ওষুধ ও কর্মচারীদের মজুরি বাদ দিয়ে বছরে লাভের টাকা পকেটে আসছে।

একই উপজেলার মাছখোলা গ্রামের আমিনুর রহিম বলেন, ১৫-১৬ বছর ধরে পোলট্রি খামার করেছি। বর্তমানে খামারে ছয় হাজার ব্রয়লার মুরগি রয়েছে। ৪০-৪৫ দিন পরপর ছয়-সাত হাজার মুরগি বিক্রি করছি। বাজারে মুরগির যে দাম, তা খামারিরা সঠিকভাবে পান না। অসম প্রতিযোগিতায় ভালো লাভ করতে পারেন না এখানকার খামারিরা। বাজারে মুরগি বিক্রি হয় ২০০ টাকা কেজি দরে। সেখানে খামারিরা পান ১৫০-১৫৫ টাকা। জেলার বাইরের পাইকাররা এসব মুরগি কিনে নিয়ে যান। তারা জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে মুরগি ক্রয় করেন, যা অনেকটা খামারিদের জিম্মি করার মতো। বাইরের এসব ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে। ফলে মুরগির দাম বাড়লেও তার সুফল পাচ্ছেন না খামারিরা। অন্যদিকে পোলট্রি খাদ্যের দামও বেড়েছে। জেলায় যেসব পোলট্রি খামার রয়েছে, সেগুলো টিকিয়ে রাখতে সরকারিভাবে ভ্যাকসিন সরবরাহ ও খাদ্যের দাম নির্ধারণে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।

সদর উপজেলার সুলতানপুর বড়বাজারের ব্রয়লার মুরগি ব্যবসায়ী আমিরুল ইসলাম বলেন, অন্য সময়ের তুলনায় বর্তমানে সব ধরনের মুরগির দাম বেশি। গত বছর এই সময়ে যে ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল প্রতি কেজি ১৩০-১৩৫ টাকা, তা এখন বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়। এছাড়া ২১০ টাকার সোনালি মুরগি ২৭০ থেকে ২৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহে তিন-চার হাজার কেজি মুরগি বিক্রি করছি।

জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ডাক্তার এসএম মাহবুবর রহমান বলেন, জেলায় তিন হাজারের অধিক পোলট্রি খামারে মুরগি ও ডিম উৎপাদিত হচ্ছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এসব মুরগি ও ডিম সরবরাহ করা হচ্ছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। উৎপাদন বাড়াতে জেলার খামারিদের সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা ও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। তাছাড়া মুরগির ভ্যাকসিন ও অন্যান্য ওষুধও সরবরাহ করা হচ্ছে। এই জেলায় পোলট্রি খামারের সঙ্গে সরাসরি জড়িত লক্ষাধিক মানুষ। বিকল্প কর্মসংস্থান হিসেবে তারা একে বেছে নিয়েছেন। ভবিষ্যতে জেলায় পোলট্রি শিল্প সম্প্রসারিত হবে।