সেক্স ফেরোমন ফাঁদ পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে সীতাকুন্ডের পৌরসভা ও দুটি ইউনিয়নের ৫ হাজার হেক্টর কৃষি জমিতে বিষমুক্ত নিরাপদ সবজির চাষ করা হয়েছে। সবজিতে পোকা দমনে ক্ষতিকর কীটনাশকের পরিবর্তে কৃষি জমিতে স্থাপন করা হয়েছে আট হাজার ফেরোমন ফাঁদ। এতে ফেরোমন ফাঁদ ও জৈব বালাইনাশক ব্যবহারে একদিকে যেমন কৃষকদের উৎপাদন খরচ অর্ধেকে নেমেছে, অন্যদিকে পরিবেশেরও কোনো ক্ষতি হচ্ছে না।
ফেরোমন ফাঁদ হচ্ছে- এক ধরনের কীটপতঙ্গের দমন ফাঁদ যাতে ক্ষতিকর পোকামাকড়দের নিয়ন্ত্রণ করতে সেক্স ফেরোমন ব্যবহার করা হয়। পুরুষ পোকাকে আকৃষ্ট করার জন্য স্ত্রী পোকা কর্তৃক নিঃসৃত এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ নির্গত করে যা সেক্স ফেরোমন নামে পরিচিত। এ পদ্ধতির চমকপ্রদ কার্যকারিতার জন্য কৃষকদের মধ্যে এটি জাদুর ফাঁদ নামে পরিচিতি পেয়েছে। এ ফাঁদ তৈরি করতে তার, গুঁড়া সাবান, পানি ও বাঁশের খুঁটি উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
সীতাকুন্ড উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাফকাত রিয়াদ বলেন, তিন লিটার পানি ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ও ২২ সেমি. লম্বা চার কোণাকৃতি বা গোলাকার একটি পস্নাস্টিক পাত্র দিয়ে এই ফাঁদ তৈরি করা হয়। পাত্রটি উভয় পার্শ্বে ১০-১২ সেমি. উচ্চতা সম্পন্ন এবং নিচের দিকে ১০-১২ সেমি. পরিমাণ অংশ ত্রিভুজাকারে কেটে ফেলতে হয়। পাত্রের তলা হতে কাটা অংশের নিচের দিক কমপক্ষে ৪-৫ সেমি. উঁচু। ফাঁদ পাতা অবস্থায় পাত্রের তলা হতে উপরের দিকে কমপক্ষে ৩-৪ সেমি. পর্যন্ত সাবান মিশ্রিত পানি ভরে রাখতে হয়। পস্নাস্টিক পাত্রের মুখ থেকে সেক্স ফেরোমন টোপটি একটি সরু তার দিয়ে এমনভাবে ঝুলিয়ে রাখা হয় যেন সেটি পানি থেকে মাত্র ২-৩ সেমি. ওপরে থাকে। সেই সেক্স ফেরোমনের গন্ধে আকৃষ্ট হয়ে পুরুষ মাছি পোকা পস্নাস্টিক পাত্রের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে ও সাবান পানিতে পড়ে আটকে যায় এবং পরে মারা পড়ে।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে তিনটি ইউনিয়নে ৫ হাজার হেক্টর জমিতে বিষমুক্ত নিরাপদ এ সবজির চাষ করতে আট হাজার ফেরোমন ফাঁদ বসানো হয়েছে। এটি পোকা দমনে খুবই কার্যকর। ক্ষতিকারক কীটনাশকের পরিবর্তে ফেরোমন ফাঁদ ও জৈব বালাইনাশক ব্যবহারে একদিকে যেমন কৃষকদের উৎপাদন খরচ অর্ধেকে নেমেছে অন্যদিকে পরিবেশেরও কোনো ক্ষতি হচ্ছে না। পোকা দমনে ৮ হাজার ফেরোমন ফাঁদ স্থাপন করা হয়েছে। এটি পর্যায়ক্রমে উপজেলার অন্যান্য ইউনিয়নেও স্থাপন করা হবে। কৃষক পরিবার নিরাপদ বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন ও বিক্রি করে আর্থিকভাবে অনেক লাভবান হচ্ছেন বলে জানান তিনি।
সীতাকুন্ড সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র নাথ বলেন, নিরাপদ সবজি উৎপাদনে কৃষকদের আগ্রহী করণের মাধ্যমে বিভিন্ন ফসল উৎপাদনে এই ফাঁদ খুবই কার্যকর। এ অঞ্চলের কৃষক প্রতিবছর পাহাড়ের পাদদেশে ও সাগরের বেড়িবাঁধ এলাকায় শীত ও গ্রীষ্মকালীন সময়ে প্রচুর পরিমাণ জায়গায় বিভিন্ন রকম সবজির চাষ করে থাকেন। তারই ধারাবাহিকতায় চলতি মৌসুমেও ঢেঁড়শ, লাউ, বেগুন, তিতকরলা, শশাসহ প্রভৃতি সবজির চাষ করেছে কৃষক।
টেরিয়াইল বস্নকে দায়িত্বরত উপজেলা সহকারী কৃষি কর্মকর্তা পিপাস কান্তি চৌধুরী বলেন, ফসলে পোকা দমনে ফেরোমন ফাঁদ ও জৈব বালাইনাশক ব্যবহার শুরু করেছে কৃষক। এতে করে একদিকে যেমন স্বাস্থ্যসম্মত বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন হবে, অন্যদিকে ফসল উৎপাদনেও ভালো ভূমিকা রাখতে পারবে কৃষক।
ফার্মসএন্ডফার্মার২৪/জেডএইচ