সবজির ভালো দামে খুশি চাষি-ব্যবসায়ীরা, দিশেহারা ক্রেতা

72

এখনও প্রকৃতিতে শীতের উপস্থিতি পুরোপুরি জানান দেয়নি। তবে হাঁটে-বাজারে উঠতে শুরু করেছে শীতের সবজি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এগুলো শীতের আগাম সবজি। দাম ভালো পাওয়ায় আগাম সবজি চাষে ঝুঁকছেন চাষিরা। যদি এই চাষিকে গুণতে হয় সার, কীটনাশক, শ্রমিক খরচ বাবদ অতিরিক্ত টাকা। সব খরচ বাদ দিয়ে আগাম সবজি বিক্রি করে ভালো লাভের কথাই বলছেন চাষিরা।

 

পৌষ, মাঘ শীত হলেও আশ্বিন থেকে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে শীতের সবজি। অসময়ে শীতের সবজি কেনা নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতাদের আগ্রহ আছে, আবার নাইও বলা চলে। বেশি দাম হলেও নতুন সবজি হিসেবে কিছুসংখ্যক ক্রেতার আগ্রহ রয়েছে। তবে বেশিরভাগ ক্রেতার তেমন আগ্রহ না থাকার কারণে হিসেবে জানা গেছে বেশি দাম ও স্বাদে কমতি থাকার কথা।

 

তবে ক্রেতা বিক্রেতাদের যোগ বিয়োগের মধ্যে সবজি চাষিরা বলছেন, প্রত্যেক ফসলে মৌসুম রয়েছে। মৌসুম অনুযায়ী চাষ করলে আবহাওয়া অনুকূলে থাকে। তাই খরচ কম হয়। ফলনও ভালো পাওয়া যায়। আগাম সবজি চাষে খরচ বেশি হয়। ফলন মোটামুটি হলেও দামে পুষিয়ে যায় চাষিদের।

 

শীতের সবজির মধ্যে রয়েছে, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, মটরশুঁটি, ব্রকলি, শালগম, মূলা, টমেটো, পালংশাক, পেঁয়াজকলি। এসব সবজি যেমন সুস্বাদু, তেমনি এর পুষ্টিও বেশি। তবে শীত না এলেও বাজারে এসেছে শীতের সবজি। বর্তমানে বাজারে মিলছে, ফুলকপি, শিম, পালংশাক, টমেটো, মূলা। শীতের আগাম সবজি হওয়ায় বাজারে এগুলো দাম তুলনামূলক বেশি।

 

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, জেলায় গত বছরের তুলনায় ১ হাজার ৭৫০ হেক্টর বেশি জমিতে সবজি চাষ হয়েছে। এবছরের (২০২৩-২৪) চলতি মৌসুমে ৫ হাজার ৬৪০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন সবজি চাষ হয়েছে। ২০২২-২৩ মৌসুমে সবজির চাষ হয়েছে ৩ হাজার ৮৯০ হেক্টর জমিতে। বর্তমানে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে এমন ২০২২-২৩ মৌসুমে শীতের সবজির মধ্যে শিম চাষ হয়েছে ২৩০ হেক্টর, পালংশাক ৪৪ হেক্টর, টমেটো ৩১ হেক্টর, ফুলকপি ২৭৫ হেক্টর, মূলা ৩২৮ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। ২০২৩-২৪ মৌসুমে ফুলকপি চাষ হয়েছে ৩৮৭ হেক্টর, টমেটো চাষ হয়েছে ৬৪ হেক্টর, মূলা ৪৩৫ হেক্টর, শিম ২৪১ হেক্টর, পালংশাক ৬৬ হেক্টর ও ধনিয়াপাড়া ৩৪ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে।

 

মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) রাজশাহী পবা উপজেলার খরখড়ি বাইপাসের খুচরা ও পাইকারি বাজার ঘুরে শীতের কয়েক ধরনের সবজি দেখা গেছে। এরমধ্যে ফুলকপি প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা, ধনেপাতা একটি ৩০ টাকা ও এক কেজি ১২০ টাকা, মূলা প্রতিকেজি ৩৫ টাকা, টমেটো প্রতিকেজি ৮৫ টাকা, শিম প্রতিকেজি ২০০ টাকা ও পালংকশাক প্রতিকেজি বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকা দরে।

 

বাইপাসের সবজি ব্যবসায়ী আব্দুর রসিদ বলেন, তুলনামূলক নতুন সবজির দাম বেশি হয়। তিনি প্রতি ২৫০ গ্রাম শিম বিক্রি করছেন ৫০ টাকায়। সেই হিসেবে শিমের কেজি ২০০ টাকা। তিনি এই বাজারে পাইকারে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা দরে শিম কিনেছেন।

তিনি বলেন, শিম, ফুলকপি, টমেটো ছাড়া অন্য সবজিগুলো দাম কমই আছে। এই সবজিগুলো বাজারে নতুন উঠেছে। তাই চাহিদা বেশি। একই সঙ্গে দামও একটু বেশি রয়েছে। এই সবজিগুলো আবার শীতের সময়ে ভরা মৌসুমে কম দামে পাওয়া যাবে। তখন প্রচুর আমদানি থাকবে বাজারে।

 

সাইফুন নাহার নামের এক গৃহবধূ এসেছেন সবজি কিনতে। তিনি জানান, আগাম সবজির সাধারণত দাম বেশি হয়। অনেকেই কেনেন। তার মতে আগাম সবজি প্রথম এক দুই দিন ভালো লাগে। তার পরে আর ভালো লাগে না। তবে মৌসুম অনুযায়ী যে সবজিগুলো পাওয়া যায় সেগুলো দামেও কম। আবার প্রকৃত স্বাদ পাওয়া যায়।

সাজ্জাদ হোসেন নামের এক ক্রেতা জানান, সবজি চাষে মৌসুমগত ব্যাপার থাকে। যেমন খরিপ-১ ও খরিপ-২। এই মৌসুমের মধ্যে আবহাওয়াগত বিষয়ও থাকে। আবহাওয়া ও মৌসুমগত বিষয়ের ওপরে বিভিন্ন সবজির চাষ হয়। তবে কয়েক বছর থেকে অসময়ে অন্য মৌসুমের সবজি পাওয়া যাচ্ছে। যেটা আগে পাওয়া যেত না। এই চাষিরা আগাম চাষ করছেন না। তারা এক মৌসুমের সবজি অন্য মৌসুমে অধিক মুনাফার জন্য চাষ করে বিক্রি করছেন।

 

তিনি আরো বলেন, যেমন ফুলকপি। ফুলকপি শীতের সবজি। কিন্তু এই সবজিটা বর্ষায় পাওয়া যাচ্ছে। তুলনামূলক দামও বেশি। আবার স্বাদের মধ্যে কমতি রয়েছে। অরেকেই আছেন এখনকার ফুলকপি খান না। তারা শীতের সময়ের ফুলকপি খাবেন বলে জানান। দাম বেশি হওয়ায় চাষি ও বিক্রেতা খুশি থাকলেও ক্রেতা খুশি হতে পারছেন না। কারণ অন্য সবজির চেয়ে শীতের সবজি বেশি দামে কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের।

 

চাষি হাসানুজ্জামান বলেন, শীত এখনও আসেনি। শীতের সবজি বাজারে আসতে এখনও ১৫ থেকে ২০ দিন বাকি রয়েছে। এখন বাজারে যে শীতের সবজিগুলো পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলো শীতের আগাম চাষের সবজি। মৌসুমে কোন সবজি চাষে যে পরিমাণের খরচ হয়, সে  তুলনায় ৫০ শতাংশ বেশি খরচ হয়। কেনো না মৌসুমের আগে বা পড়ে কোন সবজি চাষ করতে গেলে সেচ কিনটাশক বাবদ খরচ বেড়ে যায়।

 

তিনি বলেন, বর্তমানে বাজারে ফুলকপি পাওয়া যাচ্ছে। এর দামও বেশি। এগুলো শীতের সবজি হলেও আগাম বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। তবে এই ফুলকপিগুলো আকারে ছোট, ওজনে কম। একেকটি ফুলকপি কমবেশি ২৫০ গ্রামের মতো। এই ফুলকপিগুলো শীতের সময়ের হলে আকারে আরও বড় হতো। একই সঙ্গে ওজনেও বেশি হতো। মৌসুমের ফুলকপিগুলো ওজনে এক থেকে দেড় কেজি পর্যন্ত হয়।

 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কীটনাশক বিক্রেতা জানান, অসময়ের সবজির তুলনামূলক কীটনাশক বেশি প্রয়োগ করতে হয়। এতে সময়ের তুলনায় খরচ বেশি হয়। তবে এবছর বর্ষা কম হয়েছে। তাই পচন রোগে আক্রান্ত কম হয়েছে। শীতের এই সবজি চাষে চাষীরা তুলনামূলক দাম ভালো পায়।

পবা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারজানা তাসনিম বলেন, পবা উপজেলায় ৯২৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন সবজি চাষ হয়েছে। এরমধ্যে মূলা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম  পাওয়া যাচ্ছে। আগাম সবজি চাষে তুলনামূলক খরচ বেশি হলেও ভালো দাম পান চাষীরা। তাই অনেক চাষি আগাম শীতের সবজি চাষ করেন।

 

এবিষয়ে কথা বলতে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোজদার হোসেনের মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি। তাই এবিষয়ে তার কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।