সবজি উৎপাদনের দিক দিয়েও বেগুন বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রধান সবজি

947

বেগুন সাধারনত শীতকালের সব্জী । তবে সারা বছর ধরেই এর চাষ করা যায়। শীর্ষ স্থানীয় সব্জী সমুহের মধ্যে বেগুন অন্যতম। বাংলাদেশের ব্যাপক জনসাধারণ বেগুন খেতে পছন্দ করে । সব্জী উৎপাদনের দিক দিয়েও বেগুন বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রধান সবজি। বাজারে বেগুন দুই রঙের দেখা যায়। সাদা এবং বেগুনী । তবে বেগুনী রঙের বেগুন খেতে বেশি সুস্বাদু । ছাদে সহজেই বেগুন চাষ করা যায়। তবে যেহেতু বেগুনে রোগবালাই এবং পোকার আক্রমন বেশী তাই বেগুন চাষে কিছুটা সতর্কতা অবলম্বন করতে হয় ।

চাষ পদ্ধতি: এটেঁল দো-আঁশ ও পলি দো-আঁশ মাটি বেগুন চাষের জন্য বেশী উপযোগী। এই মাটিতে বেগুনের ফলন বেশী হয়। বেগুন চাষের জন্য প্রথমে বীজতলায় চারা করে পরে তা টব বা ড্রামে রোপণ করতে হবে । ছাদে অল্প সংখ্যক চারা উৎপাদনের জন্য বীজতলা হিসেবে কাঠের বাক্স, প্লাস্টিকের ট্রে, গামলা অথবা হাফ ড্রাম ব্যবহার করা যেতে পারে । বীজতলার পানি যাতে দ্রুত নিষ্কাশিত হতে পারে সে ব্যবস্থা রাখতে হবে। জৈবসার মিশ্রিত বেলে দোআঁশ মাটি দিয়ে বীজতলার পাত্রটি ভরতে হবে। অতঃপর উক্ত পাত্রে বেগুনের বীজ বোনা যেতে পারে। বেগুনের বাগান সাধারণত বিভিন্ন ধরণের রোগ দ্বারা আক্রান্ত হয়। এসব রোগের অধিকাংশই বীজ বাহিত। তাই বীজ বপনের আগে বীজ শোধন করে নেয়া দরকার। বীজতলায় বীজ বপনের পূর্বে ভাল কোন ছত্রাকনাশক এমনভাবে মিশাতে হবে যাতে সব বেগুনের বীজে ভালভাবে লাগে। অতঃপর শোধনকৃত বীজ ৫/৬ ঘন্টা ছায়াতে শুকিয়ে বীজতলায় বপন করতে হবে। বীজ বোনার পর মাটি হাত দিয়ে সমান করে দিতে হবে এবং চেপে দিতে হবে। বীজ বপনের একমাস পর বেগুনের চারা ছাদে লাগানোর উপযোগী হয়। চারা বীজতলা থেকে উঠানোর কয়েকঘন্টা আগে বীজতলায় পানে দেয়া প্রয়োজন। যাতে সহজে চারা উঠানো যায়। চারা উঠানোর সময় লক্ষ্য রাখতে হবে চারার শিকড় যাতে বেশী কাটা না পড়ে এবং শিকড়ের সাথে কিছুটা মাটি থাকে। তবে বীজতলার চারা উঠানোর ১৫-২০ দিন পূর্বেই চারা গাছ লাগানোর প্রস্তুতমূলক কাজটি সেরে নিতে হবে । ছাদে বেগুনের চারা লাগানোর জন্য ১০-১২ ইঞ্চি মাটির টব সংগ্রহ করতে হবে।

টবের তলার ছিদ্রগুলো ইটের ছোট ছোট টুকরা দিয়ে বন্ধ করে দিতে হবে। এবার ২ ভাগ এঁটেল দোআঁশ বা পলি দোআঁশ মাটি, ১ ভাগ গোবর, ২০-৩০ গ্রাম টি,এস,পি সার, ২০-৩০ গ্রাম পটাশ সার, একত্রে মিশিয়ে ড্রাম বা টব ভরে পানিতে ভিজিয়ে রেখে দিতে হবে ১০-১২ দিন । অতঃপর মাটি কিছুটা খুচিয়ে দিয়ে আবার ৪-৫ দিন এভাবেই রেখে দিতে হবে। যখন মাটি ঝুরঝুরে হবে তখন বেগুনের চারা উক্ত টবে রোপন করতে হবে। বিকাল অথবা রাতে চারা লাগাতে পারলে ভাল হয় । চারা গাছটিকে সোজা করে লাগাতে হবে। সেই সাথে গাছের গোড়ায় মাটি কিছুটা উচু করে দিতে হবে এবং মাটি হাত দিয়ে চেপে চেপে দিতে হবে। যাতে গাছের গোড়া দিয়ে বেশী পানি না ঢুকতে পারে। একটি সোজা কাঠি দিয়ে গাছটিকে বেধে দিতে হবে। চারা লাগানোর পর প্রথমদিকে পানি কম দিতে হবে। আস্তে আস্তে পানি বাড়াতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন গাছের গোড়ায় পানি জমে না ।

অন্যান্য পরিচর্যা: টবের মাটি কয়েকদিন পর পর হালকা নিড়ানি দিয়ে আলগা করে দিতে হবে । যাতে বেগুন গাছে আগাছা জন্মাতে না পারে। সেই সাথে মাটি কিছুটা আলগা করে দিলে গাছের শিকড়ের ভাল বৃদ্ধি হয়। বেগুনের ফল ধরা শুরু করলে সরিষার খৈল পচা পানি পাতলা করে গাছে ১৫-২০ দিন অন্তর অন্তর নিয়মিত দিতে হবে।

রোগবালাই: বেগুনের সবচেয়ে ক্ষতিকর পোকা হল ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা । এছাড়াও বেগুনে জাব পোকা, বিছা পোকা, পাটা মোড়ানো পোকা ও লাল মাকড় আক্রমণ করে থাকে। রোগবালাইয়ের মধ্যে ঢলে পড়া আর গোড়া পচা অন্যতম। এছাড়াও ফল পচা রোগে বেগুনের অনেক ক্ষতি করে। বেগুনের রোগবালাই এবং পোকামাকড়ের হাত থেকে রক্ষা পেতে হলে মাঝে মাঝে বেগুন গাছে ভাল কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক একত্রে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে ।

ফার্মসএন্ডফার্মার/১২আগস্ট২০