বাংলাদেশে বেশির ভাগ সবজি চাষ হয় শীত মৌসুমে। এসব সবজির সব ধরনের সারের প্রয়োজন সমান নয়। কোনো কোনো সারের অভাবে অপুষ্টিজনিত বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দেয়। যেসব সার ফসলের জন্য কম লাগে কিন্তু একেবারেই ব্যবহার না করলে বা নির্ধারিত মাত্রায় ব্যবহার না করলে ফসলের জন্য সমস্যার সৃষ্টি হয় সেসব সারের মধ্যে বোরন অন্যতম। শীত মৌসুমে যেসব সবজি চাষ হয় তার মধ্যে কিছু কিছু সবজির বোরনের চাহিদা লক্ষ করা যায়। এসব সবজির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- বেগুন, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, বরবটি, মটরশুঁটি, মুলা, আলু, গাজর, শালগম, বীট, সরিষাশাক, পালংশাক, পেঁয়াজ ইত্যাদি।
মাটির ওপরের স্তরের তুলনায় নিচের স্তরে বোরন বেশি থাকে। বিশেষ করে বেলে বা বেলে দো-আঁশ মাটিতে সেচের পানির সাথে বোরন চুঁইয়ে মাটির নিচের দিকে চলে যায়। এ জন্য এ ধরনের মাটিতে বোরন সার প্রয়োগের চেয়ে পাতায় প্রয়োগ বেশি কার্যকরী। তবে অন্য ধরনের মাটিতে বিশেষ করে ভারী মাটি বা চুন মাটিতে বোরন বেশি লাগে। পাতায় প্রয়োগ করলে প্রতি লিটার পানিতে ১.৫ থেকে ২.০ গ্রাম এবং মাটিতে প্রয়োগ করলে তিন থেকে চার কেজি বোরন সার প্রয়োজন হয়। মাটিতে প্রয়োগের বেলায় মূল সারের সাথে বা প্রথমবার উপরি সার প্রয়োগের সময় প্রয়োগ করতে হয়। অন্য দিকে পাতায় ¯েপ্র করলে বীজ বোনার বা চারা রোপণের ২০ থেকে ২৫ দিন এবং ৪০ থেকে ৪৫ দিন পর করতে হয়।
বোরন পাতায় ¯েপ্র করার অসুবিধা হলো- অভাবজনিত লক্ষণ দেখা দেয়ার পর এটি যখন প্রয়োগ করা হয় তখন ফসলের বেশ কিছু ক্ষতি হয়। বোরনের অভাবে বাড়ন্ত আলুগাছের ডগার পাতা পুরু হয় ও কিনারা বরাবর ভেতরের দিকে গুটিয়ে কাপের আকৃতি ধারণ করে। আলুগাছের শিকড় ও গুটিয়ে যায়, গাছ দুর্বল হয়। আলু ছোট আকারের হয়। বোরনের অভাবে টমেটোর চারাগাছে সবুজ রঙের পরিবর্তে কিছুটা বেগুনি রঙ লক্ষ করা যায়। বাড়ন্ত টমেটোগাছের ডগার কুঁড়ি শুকিয়ে মরে যায়। পাতা ভঙ্গুর হয়। ফলের খোসা খসখসে হয়ে ফেটে যায়।
বোরনের অভাবে বেগুনগাছের বৃদ্ধি কমে যায়। ফুল সংখ্যায় কম আসে এবং ফুল ঝরা বৃদ্ধি পায়। ফল আকারে ছোট হয় ও ফেটে যায়। বোরনের অভাবে শিম ও বরবটির নতুন বের হওয়া পাতা কিছুটা পুরু ও ভঙ্গুর হয়। পাতার রঙ গাঢ় সবুজ ও শিরাগুলো হলুদ হয়ে যায়। শেষে পাতা শুকাতে শুরু করে, গাছে ফুল দেরিতে আসে ও শুঁটি বীজহীন হয়।
বোরনের অভাবে ফুলকপির চারার পাতা পুরু হয়ে যায় এবং চারা খাটো হয়। ফুল বা কার্ডের ওপরে ভেজা ভেজা দাগ পড়ে। পরে ওই দাগ হালকা গোলাপি এবং শেষে কালচে হয়ে ফুলটিতে পচন ধরে। পাতার কিনারা নিচের দিকে বেঁকে যায় ও ভঙ্গুর প্রকৃতির হয়। পুরনো পাতা প্রথমে সাদাটে এবং পরে বাদামি হয়ে কিছুটা উঁচু খসখসে দাগে পরিণত হয়।
বোরনের অভাবে বাঁধাকপির মাথা বাঁধা শুরু হওয়ার সময় দেখা যায় যে মাথা বাঁধছে না এবং ভেতরটি ফাঁপা হয়ে যায়। একেবারে ভেতরের কচি পাতাগুলো বাদামি রঙের হয় এবং পচন ধরে। কান্ডের ভেতরের মধ্যাংশ ফাঁপা হয় ও পচে যায়। কাটলে তা থেকে দুর্গন্ধ বের হয়।
বোরনের অভাবে বাড়ন্ত মটরশুঁটির কচি পাতা হলুদাভ হয়ে কিছুটা ভেতরের দিকে বেঁকে যায় এবং ডগা শুকিয়ে যায়। অন্যান্য পাতা আকারে ছোট ও পুরু হয়। পাতার শিরা সাদাটে ও শিরার মধ্যবর্তী অংশ হলুদ হয়ে যায়। বোরনের অভাবে গাজরের পাতা ছোট হয়। গাজর আকারে ছোট হয় ও ফেটে যায়। মুলার পাতা বেঁকে যায়, পাতার রঙ প্রথমে বাদামি ও পরে কালো হয়ে শুকিয়ে যায়। মাটির নিচে মুলার স্ফীত অংশের ভেতরের দিকে বাদামি থেকে কালো রঙের পচন ধরে। শিকড়ে ফাটল ধরে ও বৃদ্ধি কমে যায়। বোরনের অভাবে পেঁয়াজ পাতার আগার দিক শুকিয়ে যায়। পরে শুকনো অংশ নিচের দিকে বাড়তে থাকে এবং গোলাকার বা রিংয়ের মতো হয়ে যায়। গাছের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়। পেঁয়াজ কন্দের আকারও ছোট হয়। বোরনের অভাবে মরিচ বা মিষ্টিমরিচের কচি পাতা হলুদ হয়ে এবং ফুল বা কচি ফলও ঝরে পড়ে। গাছের বৃদ্ধি প্রায় বন্ধ হয়ে যায়।
বোরনের অভাব পূরণে যদি সময়মতো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, তাহলে ফসলের ভালো ফলন পাওয়া যায়। বোরন পরিমাণে যেমন খুব বেশি লাগে না, তেমনি বেশি প্রয়োগ করলেও উল্টা ফল দেয় অর্থাৎ বিষক্রিয়ার লক্ষণ দেখা দেয়। ফলন কমে যায়। মাটিতে যদি রকানো কারণে বোরনের পরিমাণ বেড়ে যায়, তাহলে জমিতে চুন প্রয়োগ করে কিংবা সেচ প্রয়োগের মাধ্যমে বোরন মাটির নিচের স্তরের দিকে নামানো যেতে পারে।
ফার্মসএন্ডফার্মার২৪/জেডএইচ