গত ৩ বছরে ক্রমাগত বেড়ে দেশের সবজি উৎপাদন আড়াই কোটি টন ছাড়িয়েছে। কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের হর্টিকালচার উইংয়ের হিসেবে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশের ১০ লাখ ৬৩ হাজার ৩৮৫ হেক্টর জমিতে ১ কোটি ৯৯ লাখ ৮৪ হাজার ৩৩৪ মেট্রিক টন গোল আলুসহ বিভিন্ন ধরণের সবজি উৎপাদন হয়। চাষের গতি বজায় থাকায় পরের বছর ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশের ১০ লাখ ৭৭ হাজার হেক্টর জমিতে সবজি উৎপাদন হয় ২ কোটি ২৩ লাখ ৬৭ হাজার ৩৩০ মেট্রিক টন। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ১১ লাখ ৬৯ হাজার ৩২৬ হেক্টর জমিতে ২ কোটি ৫৬ লাখ ২৫ হাজার ২১৫ মেট্রিক টন সবজি উৎপাদন হয়।
বেগুন, টমেটো, সীম, ফুল কপি, বাঁধা বা পাতা কপি, মূলা, শীতলাউ, চাল কুমড়া, মিষ্টি কুমড়া, পটল, বরবটি, শসা, ঝিঙ্গা, ডাটা, গোল আলু, পানিকচু, কাকরোল, ওলকপি, গাজর, ঢেঁড়শ, লালশাক, চিচিংগা, পুঁইশাক, গীমা কলমি, পালং শাক, ধনিয়া পাতা, ক্ষিরা, কাকরোল, শালগম, মটরশুটি, পেঁপে, মানকচু, কচুর লতি ও ধুন্ধলসহ ৫০ এরও বেশি ধরণের সবজি হয়ে থাকে।
গত ২০১৫-১৫ অর্থ বছর থেকে ২০১৭-১৮ অর্থ বছর পর্যন্ত দেশে বেগুন, টমেটো, সীম, ফুল কপি, বাঁধা কপি, মূলা, শীত লাউ, বরবটি, গোল আলু, গাঁজর, ঢেঁড়শ, লাল শাক ও পালং শাকসহ সব ধরণের সবজিরই আবাদ ও ফলন বেড়েছে। ২০১৫-১৫ অর্থ বছরে দেশে ১৯ লাখ ৬৭ হাজার ৫৭৮ টন বেগুন, ১৩ লাখ ৬০ হাজার ২০৫ মেট্রিক টন টমেটো, ৫লাখ ৭৫ হাজার ৮১৪ মেট্রিক টন সীম, ৯ লাখ ১৬ হাজার ৭০৩ টন ফুল কপি, ১ কোটি ৭ লাখ ৭৮ হাজার ৮৩৫ মেট্রিক টন বাঁধা কপি, ১৩ লাখ ২৫ হাজার ৩২১ মেট্রিক টন মূলা, ১১ লাখ ১৮ হাজার ৪৫২ টন শীত লাউ উৎপাদন হয়।
২০১৭-১৮ অর্থবছরে উৎপাদনের গতি বেড়ে হয় বেগুন ২৭ লাখ ৭৯ হাজার ৬৮৫ মেট্রিক টন, টমেটো ১৫৮৮৯২০ মেট্রিক টন, সীম ৭১৭৯৬৯ মেট্রিক টন। সফল কৃষিজীবী পাবনার মো. আব্দুল বারী (কপি বারী) ও মো. জাহিদুল ইসলাম (গাজর হাবিব) জানালেন, বর্তমানে জমির লিজ, কৃষি শ্রমিকের মজুরি ও বীজের দাম অনেক বেশি তবুও বাঁধাকপি, ফুলকপি, গাজরসহ বিভিন্ন ধরনের সবজিতে কৃষকের কিছুটা লাভ হচ্ছে।
কৃষক আলহাজ¦ শাহজাহান আলী (পেঁপে বাদশা) বলেন, অপ্রত্যাশিত বন্যায় ক্ষতিতে পাবনার ঈশ^রদি ও লালপুর অঞ্চলের সবজি সরবরাহে কিছুটা ভাটা পড়েছে। তবে এতে সার্বিকভাবে সবজি উৎপাদন কমবেনা। বরং বাড়বে। ধান ও পাটসহ অন্যান্য ফসলে লাভ কম হওয়ায় কৃষকরা সবজি চাষের দিকে ঝুঁকছে। সবজি চাষে খরচ বাদ দিয়ে মোটামেটি লাভ করা যাচ্ছে। বর্তমানে এক বিঘা জমির গাজর ৮০ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ টাকায় বেচে কৃষক ৪০,০০০ থেকে ৫০,০০০ টাকা লাভ করতে পারছে।
মানুষের আগ্রহ বেড়ে যাওয়ায় দেশের সবজির বাজার প্রায় সারা বছরই চাঙ্গা থাকছে। এতে বাড়তি খরচ করেও উৎপাদিত সবজির কিছুটা ভাল দাম পাচ্ছে কৃষক। মূলতঃ এ কারণেই বাড়ছে সবজি চাষের জমি ও উৎপাদন। কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের হর্টিকালচার উইংয়ের পরিচালক কৃষিবিদ ডক্টর মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সবজি চাষের গতি ক্রমাগত বাড়ছে। চলতি অর্থবছরেও চাষের এ গতি বজায় রয়েছে, উৎপাদনও আরও বাড়বে।
ফার্মসএন্ডফার্মার২৪/জেডএইচ