কারো কাছে তিনি কিংবদন্তির নায়ক, যিনি বিশ্বের শতকোটি মানুষকে মুক্তি দিয়েছেন ক্ষুধার যন্ত্রণা থেকে। আবার কারো কাছে তিনি বৈষম্যের ধ্বজাধারী, গুটিকয়েকের সুবিধা আদায়ের পথপ্রদর্শক। তিনি নরম্যান বোরলগ, যাকে বলা হয় ‘সবুজ বিপ্লবের জনক’।
বলা হয়, বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের মতো বিশ্বের অনেক দরিদ্র দেশের কোটি কোটি মানুষকে দুর্ভিক্ষের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেয়ানোয় যাদের অবদান সবচেয়ে বেশি, তাদের মধ্যে একেবারে শীর্ষের আসনটি নরম্যান বোরলগের প্রাপ্য বলে মনে করেন ভক্তরা। আবার দেশে দেশে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ার পাশাপাশি কৃষিকে অতিমাত্রায় রাসায়নিকনির্ভর করে ফেলার মাধ্যমে দারিদ্র্যকে আরো ঘনীভূত করে তোলার জন্যও তাকে দায়ী করেন অনেকে। অর্থাৎ কারো কাছে তিনি নন্দিত নায়ক। আবার তাকে নিন্দিত খলনায়ক হিসেবে উপস্থাপন করতেও দ্বিধা করেন না অনেকে।
নরম্যান বোরলগ ১৯১৪ সালের ২৫ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়া অঙ্গরাজ্যের হাওয়ার্ড কাউন্টিভুক্ত ক্রেসকো শহরের কাছাকাছি এক খামারবাড়িতে জন্ম নেন। পিতা হেনরি অলিভার বোরলগ ও মাতা ক্লারা বোরলগের প্রথম সন্তান তিনি। যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম হলেও তার পূর্বপুরুষ ছিল নরওয়েজীয়।
শিশু বয়সেই কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন তিনি। পরিবারের মালিকানায় ছিল ১০৬ একর জমির ওপর গড়ে তোলা এক খামার। তাতে গবাদিপশু চরানোর পাশাপাশি শিকার করে বেড়াতেন বোরলগ। মাছ ধরতেও হতো নিয়মিত। মৌসুমে তাকে হাত লাগাতে হতো ভুট্টা ও ওটের মতো শস্য আবাদের কাজে। পারিবারিক খামারটিতে সাত বছর বয়স থেকে শুরু করে ১৯ বছর বয়সে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির আগ পর্যন্ত টানা খামারটিতে কাজ করে গেছেন তিনি।
হাওয়ার্ড কাউন্টির গ্রামীণ পরিবেশে বেড়ে ওঠা নরম্যান বোরলগ পড়াশোনা করেছেন খুবই নগণ্য এক স্কুলে। এতে শিক্ষক ছিল মোটে একজন। স্কুলভবনে কক্ষও ছিল মাত্র একটি। এইটথ গ্রেড পর্যন্ত এখানে পড়াশোনা করেছিলেন বোরলগ। ১৮৬৫ সালে নির্মিত ওই স্কুল ভবনটি বর্তমানে ‘প্রজেক্ট বোরলগ লিগ্যাসির’ আওতায় নরম্যান বোরলগ হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে রয়েছে।
পরবর্তী সময়ে ক্রেসকো হাইস্কুলে ভর্তি হন বোরলগ। প্রথমদিকে মনে হয়েছিল, তার যাবতীয় প্রতিভা খেলাধুলায়। স্কুলের ফুটবল, বেজবল ও কুস্তি টিমের নিয়মিত সদস্য ছিলেন তিনি। বিশেষ করে কুস্তিতে বেশ পারদর্শিতা দেখিয়েছিলেন তিনি। তার পারফরম্যান্সে মুগ্ধ হয়ে স্কুলের কুস্তি কোচ একবার তাকে ১০৫ শতাংশ নম্বর দিয়েছিলেন।
হাইস্কুল থেকে পাস করে বেরোনোর পর পারিবারিক খামার ছেড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন বোরলগ। মূলত পিতামহ নেলস ওলসন বোরলগের উৎসাহেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। পৌত্রের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সিদ্ধান্তে সমর্থন জানিয়ে দাদা নেলস ওলসন বোরলগ বলেছিলেন, ‘যদি তুমি ভবিষ্যতে তোমার পেট খালি রাখতে না চাও, তবে তোমার জন্য সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ হবে মাথাটাকে জ্ঞানে পূর্ণ করা।’
নরম্যান বোরলগ ইউনিভার্সিটি অব মিনেসোটায় ভর্তির জন্য পরীক্ষা দেন ১৯৩৩ সালে। ওই পরীক্ষায় প্রথমে উত্তীর্ণ হতে পারেননি তিনি। এর পরও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নতুন খোলা এক সাধারণ কলেজে দুই বছর মেয়াদি এক শিক্ষাক্রমে ভর্তি হন তিনি। ছয় মাস পরই ইউনিভার্সিটি অব মিনেসোটার অধীন কলেজ অব এগ্রিকালচারের ফরেস্ট্রি প্রোগ্রামে স্থানান্তরিত হন তিনি।
ইউনিভার্সিটি অব মিনেসোটার কুস্তি দলের সদস্য হিসেবেও জাতীয় পর্যায়ের এক প্রতিযোগিতার সেমিফাইনালে উঠেছিলেন তিনি। এছাড়া কুস্তির জনপ্রিয়তা বাড়ানোর জন্য গোটা অঙ্গরাজ্যের হাইস্কুলগুলোয় প্রচারণা কার্যক্রম চালিয়েছেন তিনি। কুস্তি থেকে জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ এক শিক্ষা নিয়েছিলেন বোরলগ। আর সেটি হলো প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে দৃঢ় হয়ে দাঁড়ানো। তার নিজের ভাষায়, ‘কুস্তি আমাকে অনেক মূল্যবান কিছু শিক্ষা দিয়েছে। আমার অনেক সময়েই মনে হয়েছে, আমি নিজের বলেই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারব। এটাই আমাকে কঠিন করে তুলেছে। বহুবার ওই শক্তির প্রয়োজন হয়েছে আমার। উঠে দাঁড়ানোর অবলম্বন হিসেবে এটি হয়তো যথার্থ নয়, কিন্তু কিছু করার নেই। আমি এ রকমই।’
বোরলগের শিক্ষাজীবন কণ্টকমুক্ত ছিল না মোটেও। অর্থের অভাবে মাঝেমধ্যেই তাকে লেখাপড়ায় বিরতি দিয়ে অন্য কাজ করতে হয়েছে। সিভিলিয়ান কনজারভেশন কোরের মতো পাবলিক ওয়ার্ক রিলিফ প্রোগ্রামে কাজ করেও অর্থসংস্থান করতে হয়েছে তাকে। সে সময় তার সঙ্গে অনেকেই ছিল, যাদের খাবারও ঠিকমতো জুটত না। পরে একসময় নরম্যান বোরলগ বলেছিলেন, ‘আমি দেখেছি, খাবার ওদের কীভাবে বদলে দিয়েছিল। বিষয়টি আমার মনে দাগ কেটে গিয়েছিল।’
১৯৩৭ সালে বনায়ন (ফরেস্ট্রি) বিষয়ের ওপর ব্যাচেলর অব সায়েন্স ডিগ্রি অর্জন করেন বোরলগ। এর কিছু সময় আগে প্রফেসর এলভিন চার্লস স্ট্যাকম্যানের এক ‘সিগমা সাই’ বক্তৃতায় যোগ দেয়ার অভিজ্ঞতা হয়েছিল তার। এ ঘটনা অচিরেই তার স্পষ্ট ছাপ ফেলতে যাচ্ছিল নরম্যান বোরলগের জীবনে, একই সঙ্গে বৈশ্বিক কৃষিতেও। স্ট্যাকম্যানের ওই বক্তৃতার শিরোনাম ছিল ‘দিজ শিফটি লিটল এনিমিস দ্যাট ডেস্ট্রয় আওয়ার ক্রপস’। এতে গম, ওট ও বার্লির মরিচা রোগ (rust) সম্পর্কে আলোকপাত করেছিলেন স্ট্যাকম্যান। এক ধরনের ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ দেখা দেয়। স্ট্যাকম্যান দেখিয়েছিলেন বিশেষভাবে উদ্ভিদ প্রজননের মাধ্যমে এ রোগ প্রতিরোধী জাতক তৈরি করা সম্ভব।
স্ট্যাকম্যানের এ গবেষণা বোরলগকে বেশ আগ্রহী করে তুলল। পরবর্তী সময়ে বোরলগ বনায়ন কর্মসূচিতে চাকরি নিলেন। সেখানে ব্যয়সংকোচনের নীতি প্রয়োগের ফলে চাকরি হারালেন তিনি। এ সময় স্ট্যাকম্যানের সঙ্গে দেখা করলেন বোরলগ। ফরেস্ট্রি প্যাথলজি বিষয় নিয়ে উচ্চশিক্ষার আগ্রহও প্রকাশ করলেন। স্ট্যাকম্যান বললেন, এর বদলে প্লান্ট প্যাথলজি নিয়ে পড়াশোনা করলে আরো ভালো করবেন বোরলগ। এরই ধারাবাহিকতায় স্ট্যাকম্যানের অধীনে বিষয়টির ওপর মাস্টার্স অব সায়েন্স ডিগ্রি অর্জন করলেন তিনি। ১৯৪২ সালে পিএইচডি করলেন প্লান্ট প্যাথোলজি ও জেনেটিকস নিয়ে।
১৯৪২-৪৪ সাল পর্যন্ত ডেলাওয়ারের উইলমিংটনের ডুপন্টে মাইক্রোবায়োলজিস্ট হিসেবে চাকরিরত ছিলেন বোরলগ। সে সময় প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে তাকে উষ্ণ ও লোনাপানি সহনশীল আঠা উদ্ভাবনের দায়িত্ব দেয়া হলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই তিনি তা করে ফেললেন। ডুপন্টের চাকরিতে অনেক সুযোগ-সুবিধা ও বেতন পেতেন তিনি। এর পরও ১৯৪৪ সালে তুলনামূলক কম বেতনে জেনেটিসিস্ট ও প্লান্ট প্যাথলজিস্ট হিসেবে মেক্সিকো সরকার ও রকফেলার ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে গৃহীত গম গবেষণা ও উৎপাদন কার্যক্রমে যোগ দেন নরম্যান বোরলগ।
প্রাথমিকভাবে মেক্সিকোয় কাজ করতে গিয়ে অনেক অসুবিধার সম্মুখীন হন বোরলগ। কৃষকরাও প্রথম প্রথম বিষয়টিকে ভালোভাবে নেয়নি। এছাড়া গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় সুবিধারও অভাব ছিল অনেক। এর মধ্য দিয়েই ১০ বছরের টানা গবেষণায় গমের রোগ প্রতিরোধী স্ট্রেইন উন্নয়ন করে চলেন তিনি। বোরলগের একটি আবিষ্কার ছিল শস্যের পিওর লাইন ভ্যারাইটিগুলোর রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম। এজন্য কয়েকটি ভিন্ন ভিন্ন পিওর লাইন জাতের মধ্যে ক্রস করানোর মাধ্যমে শস্যের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ানোয় উদ্যোগী হন তিনি। ১৯৫৩ সালের মধ্যে এ প্রযুক্তিকে আরো উন্নত করে তোলেন তিনি।
শিষের ভারে গমের নুয়ে পড়া ঠেকাতে এসব হাইব্রিড জাতে নতুন এক বৈশিষ্ট্য যোগ করেন বোরলগ। ‘ডোয়ার্ফিং’ নামে এক ধরনের প্রযুক্তির প্রয়োগে গমের কাণ্ডের আকার তুলনামূলক খাটো ও মোটা হয়ে আসে। এতে করে শস্যের ভারে গাছ নুয়ে পড়ার বিষয়টিকে প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়। ষাটের দশকের সূচনালগ্নের মধ্যেই গমের সেমি-ডোয়ার্ফ আকৃতির কিছু জাত ও রোগ প্রতিরোধী পিটিক ৬২ ও পেনজামো ৬২ নামে দুটি জাত উদ্ভাবনের কৃতিত্ব নিজের নামে করে নেন নরম্যান বোরলগ। ১৯৬৩ সালে এসে দেখা গেল, ক্ষেতে বোরলগ উদ্ভাবিত জাতের গম আবাদ করছেন মেক্সিকোর ৯৫ শতাংশ কৃষক। ১৯৬৩ সালে এসে দেখা গেল, দেশটিতে গমের উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ১৯৪৪ সালের (বোরলগ যে বছর মেক্সিকোয় যান) উৎপাদনের ছয় গুণ।
১৯৬৪ সালে টেক্সকোকোয় কনসালটেটিভ গ্রুপ অন ইন্টারন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল রিসার্চের (সিজিআইএআর) অধীন আন্তর্জাতিক ভুট্টা ও গম উন্নয়ন কেন্দ্রের (সিমিট) ইন্টারন্যাশনাল হুইট ইমপ্রুভমেন্ট প্রোগ্রামের পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। এখানে ১৫ বছর কাজ করেন তিনি।
সেখানে কর্মরত অবস্থায় বোরলগ ও তার দল ষাটের দশকের মাঝামাঝি উন্নয়নকৃত জাতগুলোর প্রচুর বীজ উপমহাদেশে পাঠাতে শুরু করেন। সে সময় গোটা উপমহাদেশেই দুর্ভিক্ষ ও খরার প্রকোপ ছিল নিয়মিত। নতুন আসা বীজগুলোর কল্যাণে এ অঞ্চলের খাদ্যোৎপাদন বাড়তে থাকে।
বাংলাদেশে গম গবেষণার সূচনার সঙ্গেও জড়িয়ে রয়েছে নরম্যান বোরলগের নাম। ১৯৬৫ সালে ঢাকায় আসেন তিনি। সে সময় দেয়া এক প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, প্রধান খাদ্যশস্যগুলোর আবাদে কোনো ব্যাঘাত না ঘটিয়েই বাংলাদেশে (তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তান) ১৫ লাখ হেক্টর জমি গমের জন্য বরাদ্দ করা সম্ভব।
বোরলগের উদ্ভাবিত জাতগুলোর কল্যাণে গোটা উপমহাদেশেই গম উৎপাদন বেড়ে যায়। ১৯৬৮ সালের মধ্যেই গমে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে ওঠে পাকিস্তান। ভারত এ স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে ১৯৭৪ সালে। বাংলাদেশে ফসলটির উৎপাদন শুরু হতে একটু বিলম্ব হলেও বর্তমানে দেশে ধানের পরই দ্বিতীয় প্রধান খাদ্যশস্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে গম।
শুধু উপমহাদেশ নয়, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর খাদ্যোৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গেও জড়িয়ে রয়েছে নরম্যান বোরলগের নাম। এরই স্বীকৃতি হিসেবে অভিহিত হন ‘সবুজ বিপ্লবের জনক’ হিসেবে। ১৯৭০ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার অর্জন করেন তিনি। ১৯৭৭ সালে জিতে নেন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম।
১৯৮৪ সালে টেক্সাস এঅ্যান্ডএম ইউনিভার্সিটিতে পড়ানো শুরু করেন নরম্যান বোরলগ। সেখানে ‘ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর অব ইন্টারন্যাশনাল এগ্রিকালচার’ খেতাবে ভূষিত হন তিনি। ১৯৯৯ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এখানেই শিক্ষকতা ও গবেষণা চালিয়ে গেছেন তিনি।
সমালোচনা
বোরলগকে নিয়ে সমালোচনাও রয়েছে অনেক। প্রায় ছয় দশক আগে ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে প্রায় সব দেশই বোরলগের উন্নয়নকৃত জাতগুলো সাদরে গ্রহণ করে নেয়। তথাকথিত সবুজ বিপ্লবের সবচেয়ে বড় প্রতিশ্রুতি ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর বিশ্বে ক্ষুধামুক্তির পাশাপাশি দারিদ্র্য বিমোচন ও গ্রামীণ অর্থনীতিকে সমৃদ্ধিশালী করে তোলা। কিন্তু বর্তমান সময়ে এসে দেখা যাচ্ছে, খাদ্যোৎপাদন বাড়লেও দারিদ্র্য বিমোচন বা গ্রামীণ অর্থনীতির সমৃদ্ধির কোনোটিই অর্জন হয়নি। এর পেছনেও বোরলগকে অনেকাংশেই দায়ী করা হয়।
প্রকৃতির নিয়মবিরুদ্ধ উপায়ে জেনেটিক ক্রসব্রিডিংয়ের বিষয়টি এমনিতেই বেশ বিতর্কিত। এছাড়া এতে শস্যের পক্ষে সব পুষ্টিগুণ ধরে রাখা সম্ভব হয় না বলেও অভিযোগ রয়েছে। হাইব্রিড জাতের শস্য আবাদে রাসায়নিক সার ও সেচের প্রয়োজন পড়ে প্রচুর। কীটনাশকও ব্যবহার করতে হয় অনেক। নিবিড় শস্য উৎপাদন ব্যবস্থার কারণে চাপ পড়ে জমির উর্বরাশক্তির ওপরও। ঘটে ভূমিক্ষয়। কমে যায় জিনগত বৈচিত্র্য। নেমে যায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর।
বোরলগের মৃত্যুর পর কানাডীয় লেখক ক্রিস্টোফার রিড বলেন, ‘ক্ষুদ্র কৃষকদের জীবনে এ ‘বিপ্লব’ যে সামাজিক ও প্রাতিবেশিক পরিবর্তন নিয়ে আসছিল, সে সময় তা সম্পর্কে খুব কম লোকই ভাবতে পেরেছিল। বোরলগের নতুন জাতগুলোর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবে জমির উর্বরতা কমেছে, জিনগত বৈচিত্র্য কমেছে, বেড়েছে ভূমিক্ষয় ও কীটপতঙ্গের আক্রমণ।’
তার ভাষ্যমতে, বোরলগের উচ্চফলনশীল বীজগুলো যে শুধু অনেক পরিমাণে সার দাবি করে তা নয়। এগুলো থেকে ফলন পেতে সেচে প্রচুর পানিও খরচ করতে হয়। সব মিলিয়ে কৃষকের ব্যয়ও বাড়ে অনেকখানি। এসবের কারণে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব হিসেবে দেখা যায় গ্রামীণ দারিদ্র্য বেড়েছে, বেড়েছে কৃষকের ঋণ ও সামাজিক বৈষম্য। ফলে দেখা যায়, শেষ পর্যন্ত বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়েছেন প্রচুর গ্রামীণ কৃষক।
বলা হয়, এখন পর্যন্ত বোরলগের উদ্ভাবনকে কাজে লাগিয়ে সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী হয়েছে মার্কিন এগ্রোবিজনেস ও এগ্রোকেমিক্যাল করপোরেশনগুলো।
বোরলগ সম্পর্কে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কড়া মন্তব্যটি এসেছে আলেকজান্ডার ককবার্নের কাছ থেকে। তার মতে, “এখন পর্যন্ত যারা শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন, তাদের মধ্যে হেনরি কিসিঞ্জারের পর সবচেয়ে বড় খুনিটির নাম নরম্যান বোরলগ, যার গমের স্ট্রেইনকেন্দ্রিক ‘সবুজ বিপ্লব’ শেষ পর্যন্ত হয়ে উঠেছে লাখো কৃষকের মৃত্যুর কারণ।” সূত্র: বি বি।
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪.কম/মোমিন