বান্দরবানের রুমা উপজেলার মুনলাইপাড়ার কারবারি লিয়ান আং গত বছর ১০০ মণ কাজুবাদাম ফলিয়ে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা আয় করেছেন। লিয়ান একা নন, তাঁর পাড়ার ৫৩টি পরিবারে সবাই কম–বেশি কাজুবাদাম চাষের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা ছাড়াই চাষ করছেন বলে মূল্যবান এই কৃষিপণ্য থেকে কাঙ্ক্ষিত আয় হচ্ছে না তাঁদের।
কৃষি বিভাগের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বান্দরবানের রুমা উপজেলার পাশাপাশি থানচি, রোয়াংছড়ি ও সদর উপজেলায়ও কাজুবাদামের চাষ হচ্ছে। এই বাদাম চাষের জমির পরিমাণ ৩৫০ হেক্টর। প্রতি হেক্টরে দেড় থেকে দুই মেট্রিকটন বাদামের ফলন হয়। তবে চাষিদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা ও প্রক্রিয়াজাতকরণের কারখানা না থাকায় এই কৃষিপণ্যের সম্ভাবনা শতভাগ কাজে লাগানো যাচ্ছে না। চাষিরা বলছেন, কাঁচা বাদাম বিক্রি করে তাঁরা লাভের মুখ দেখলেও প্রক্রিয়াজাত করার ব্যবস্থা থাকলে আরও প্রচুর মানুষের কর্মসংস্থান হতো। বাগান–মালিকদের লাভও বেড়ে যেত কয়েক গুণ।
সারা দেশের মধ্যে একমাত্র পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় কাজুবাদামের চাষ হয়। রাঙামাটিতে কাজুবাদাম প্রক্রিয়াজাতকরণের ব্যবস্থা থাকলেও বান্দরবানে নেই। বিষয়টাকে বাদাম চাষিরা কৃষি বিভাগের উদ্যোগহীনতা হিসেবেই দেখছেন।
.
জেলায় ঠিক কী পরিমাণ কাজুবাদামের চাষ হয়—সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট কোনো তথ্য নেই কৃষি বিভাগের কাছে। তবে রুমা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান রুমায় এক হাজার মণ কাজুবাদামের ফলন হয় বলে দাবি করেন। কিন্তু ওই উপজেলার মুনলাইপাড়ার কারবারি (পাড়াপ্রধান) লিয়ান আং জানান, কেবল ওই পাড়ায় প্রায় দেড় হাজার মণ কাজুবাদামের ফলন হয়।
সম্প্রতি সরেজমিনে রুমা উপজেলার মুনলাই, বেথেলপাড়া ও বটতলিপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, চাষিরা সম্পূর্ণ নিজেদের উদ্যোগে বড় বড় কাজুবাদামের বাগান করেছেন। কোনো সরকারি-বেসরকারি সংস্থা থেকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি বলে চাষিরা অভিযোগ করেছেন। মুনলাইপাড়ার কারবারি লিয়ান আং বলেন, কাজুবাদামের ফলন হয় বর্ষাকালে। এ কারণে ওই ঋতুতে ফল আহরণ ও সংরক্ষণ অত্যন্ত কঠিন। বাগান–মালিকদের অনেকে ফল আহরণের প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানেন না এবং যত্নশীলও নন।
বেথেলপাড়ার একজন চাষি বলেন, আহরণ ও সংরক্ষণে যথাযথ প্রক্রিয়ায় যত্নশীল না হলে বাদামের রং কালো হয় এবং কয়েক মাসের মধ্যে পচে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। বাদামের মান ভালো না হলে দামও কম পাওয়া যায়।
থানচি উপজেলার রেমাক্রির বাসিন্দা রিয়ালদো বম বলেন, কাজুবাদাম ঠিকভাবে সংরক্ষণ করলে দীর্ঘদিন পরেও বাজারজাত করা যায়। এ জন্য দুর্গম এলাকাগুলোতে চাষিরা ফলের বাগান না করে কাজুবাদাম চাষে ঝুঁকছেন। এ কারণে রুমার পাশাপাশি থানচির রেমাক্রি, তিন্দু, বলীপাড়া, রোয়াংছড়ির রনিংপাড়া, পাইনখিয়াং পাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় কাজুবাদামের বাগান গড়ে উঠেছে।
জেলার কৃষি কর্মকর্তারা জানান, পূর্ণবয়স্ক কাজুবাদাম গাছ ১০ থেকে ১২ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। শীতের শেষ দিকে ও বসন্তে ফুল আসে। বর্ষায় ফল সংগ্রহ করা যায়। রোপণের পর গাছের বয়স তিন বছর হলে প্রথম ফুল এবং ফল আসে। গাছ থেকে সুস্থ ফল সংগ্রহ করে ভালোভাবে রোদে শুকিয়ে ভেজে প্যাকেটজাত করা হয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আলতাফ হোসেন বলেন, জেলায় ৩৫০ হেক্টর জমিতে কাজুবাদাম চাষ হয়ে থাকে। প্রতি হেক্টরে দেড় থেকে দুই মেট্রিক টন বাদামের ফলন হয়। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগে কাজুবাদাম সংরক্ষণে প্রযুক্তিগত দক্ষতা নেই স্বীকার করে আলতাফ হোসেন বলেন, যথাযথভাবে সংরক্ষণ না হওয়ায় এবং মান বজায় না থাকায় চাষিরা ভালো দাম পাচ্ছেন না।
ফার্মসএন্ডফার্মার/০৮ডিসেম্বর২০২০