সময়মতো টিকা দিলে ক্ষুরা রোগের আক্রমণ প্রতিহত করা যায়

416

প্রাণীতে অত্যন্ত ছোঁয়াছে, তীব্র প্রকৃতির ভাইরাসজনিত রোগের মধ্যে ক্ষুরা অন্যতম। গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, হরিণ, হাতিসহ বিভক্তি ক্ষুরাবিশিষ্ট প্রাণীতে এ রোগের প্রাদুর্ভাব অত্যধিক। ছয় মাস বয়সের নিচের বাচ্চায় এ রোগটি মড়ক আকারে দেখা যায়। এ ছাড়া মহিষে এ রোগের তীব্রতা তুলনামূলক কিছুটা কম। বাংলাদেশের সব ঋতুতেই ক্ষুরা রোগ দেখা গেলেও সাধারণত বর্ষার শেষে এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি পরিলক্ষিত হয়।

লক্ষণ: পশুর শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়; জিহ্বা, দাঁতের মাড়ি, মুখ গহ্বর, পায়ের ক্ষুরের মাঝে ঘা বা ক্ষতের সৃষ্টি হয়। ক্ষত সৃষ্টির ফলে মুখ থেকে ফেনাযুক্ত লালা নির্গত হয়। কখনো বা ওলানে ফোসকা পড়ে। প্রাণী খোঁড়াতে থাকে এবং মুখে ঘা বা ক্ষতের কারণে খেতে কষ্ট হয়। অল্প সময়ে প্রাণী দুর্বল হয়ে পড়ে। এ রোগে গর্ভবতী গাভীর গর্ভপাত ঘটে। দুধালো গাভীর দুধ উৎপাদন মারাত্মকভাবে হ্রাস পায়। বয়স্ক গরুর মৃত্যুহার কম হলেও আক্রান্ত বাছুরকে বাঁচিয়ে রাখা খুবই কঠিন। অর্থাৎ ছয় মাস বয়সের নিচে আক্রান্ত বাছুরের ৯৫ শতাংশই মারা যায়।

চিকিৎসা: আক্রান্ত পশুকে সুস্থ প্রাণী থেকে আলাদা রাখতে হবে। অসুস্থ প্রাণীর ক্ষত পটাশমিশ্রিত পানি (০.০১ শতাংশ পটাশিয়াম পার ম্যাঙ্গানেট) দিয়ে ধুয়ে দিতে হবে। ফিটকিরির পানি ১০ গ্রাম প্রলেপ দিতে হবে। নরম খাবার দিতে হবে। প্রাণীকে শুষ্ক ও ছায়াযুক্ত স্থানে মেঝেতে রাখতে হবে। কোনো অবস্থায়ই কাদামাটি বা পানিতে রাখা যাবে না।

খাওয়ার সোডা ৪০ গ্রাম ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে পায়ের ঘা পরিষ্কার করে সালফানিলামাইড পাউডার লাগাতে হবে। মাছি থেকে সাবধান থাকতে হবে, যাতে পোকা না দিতে পারে। এ ক্ষেত্রে সালফানিলামাইড পাউডার ও নিগুভন পাউডার নারকেল তেল বা ভ্যাসলিনের সঙ্গে মিশিয়ে লাগানো সর্বোত্তম। আক্রান্ত গরু-মহিষকে ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য পেনিসিলিন অথবা অক্সিটেট্রাসাইক্লিন ইনজেকশন প্রয়োগ করতে হবে (ডাক্তারের পরামর্শক্রমে)। তবে সতর্ক থাকতে হবে শুধু গ্লুকোজ ইনজেকশন প্রয়োগ করা যাবে না।

রোগের বিস্তার: ক্ষুরায় আক্রান্ত পশুর লালা, ঘায়ের রস, মলমূত্র, দুধ ইত্যাদির মাধ্যমে এ ভাইরাস নির্গত হয়। এ ভাইরাস বাতাস ও খাদ্যের মাধ্যমে সংবেদনশীল পশুতে সংক্রমিত হয়। আক্রান্ত গরু ও মহিষের সংস্পর্শে এ ভাইরাস সুস্থ পশুতে সংক্রমিত হতে পারে। আক্রান্ত পশুর ব্যবহৃত দ্রব্যাদি ও পশুজাত দ্রব্যের (চামড়া, মাংস, দুধ ইত্যাদি) মাধ্যমে এ ভাইরাস এক স্থান থেকে অন্য স্থানে এমনকি বাতাসের মাধ্যমে এক দেশ থেকে অন্য দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

প্রতিরোধে বিধিব্যবস্থা: রোগ যাতে না ছড়ায় সেজন্য আক্রান্ত প্রাণীকে সুস্থ হতে আলাদা করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। সুস্থ গবাদি প্রাণীকে বছরে দুবার প্রতিষেধক টিকা দিতে হবে। ক্ষুরা রোগীসহ যে কোনো মৃত প্রাণীকে ৪-৫ ফুট মাটির নিচে পুঁতে ফেলতে হবে, কোনোক্রমেই খোলা স্থানে ফেলে রাখা যাবে না। ছয় মাসের কম বয়সের বাচ্চাকে অসুস্থ গাভীর দুধ খাওয়ানো যাবে না এবং আলাদা স্থানে রাখতে হবে। ক্ষুরা রোগের টিকা স্থানীয় উপজেলা ও জেলা হাসপাতালে পাওয়া যায়, যা সময়মতো দিলে এ রোগের আক্রমণ প্রতিহত করা যায়।

ফার্মসএন্ডফার্মার/০৭সেপ্টেম্বর২০