এক ব্যক্তির একাধিক কাজ পাওয়া বন্ধ ও অপেক্ষাকৃত ছোট ও নবীন ঠিকাদারকে কাজ পাবার সুযোগ করে দেবার জন্য সরকারী ক্রয় আইন ও বিধি সংশোধনের নির্দেশনা প্রদানের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। বর্তমান সরকারি ক্রয় আইন ও বিধিমালায় একব্যক্তি একাধিক কাজ পাবার সুযোগ থাকায় অনেক ঠিকাদার এককভাবে যাবতীয় কাজগুলি নিয়ন্ত্রণ করে অন্যদেরকে বঞ্চিত করে আঙ্গুল ফুলে বট বৃক্ষে পরিনত হবার সুযোগ তৈরী হচ্ছে। একই সাথে এনজিও ও সামাজিক অলাভজনক খাতে পৃথক ক্রয়নীতি না থাকায় ব্যবসায়িদ ধারায় ক্রয় নীতির কারনে অলাভজনক খাতে ব্যবসায়িক ধরার উত্থান বন্ধে পৃথক আইন প্রণয়নের দাবি জানান। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারী ক্রয় আইন ও বিধি সংশোধনের নির্দেশ প্রদান করায় মাননীয় প্রধান মন্ত্রীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন দেশের ক্রেতা-ভোক্তাদের জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষনকারী প্রতিষ্ঠান কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ(ক্যাব)।
সরকারী ক্রয় আইন ও বিধি পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন, ২০০৬ এবং পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা ২০০৮ সংশোধন করে এক ব্যক্তির কাজ পাওয়া বন্ধে ও অপেক্ষাকৃত নবীন ঠিকাদারদের কাজে সুযোগ করে দেবার নির্দেশনা প্রদানের জন্য মাননীয় প্রধান মন্ত্রী বরাবরে প্রেরিত এক বার্তায় ক্যাব নেতৃবৃন্দ বলেন পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন, ২০০৬ এবং পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা ২০০৮ এর ফলে গুটি কয়েক লোক যাবতীয় সরকারী টেন্ডারগুলি নিয়ে সিন্ডিকেট করার সুযোগ ছিলো। আর অপেক্ষাকৃত নবীন ও ক্ষুদ্র ঠিকাদারদের কাজ পাবার সুযোগ ছিলো না। ফলে সরকারী ক্রয় আইন ও বিধি সংশোধনের বিষয়ে বেশ কিছু নাগরিক প্রতিষ্টানের পক্ষে দাবি উত্থাপন করা হলেও সরকার বিষয়টি আমলে নেয়নি। যার খেসারত দিতে হচ্ছে বর্তমান সরকারকে। কারন এই ক্রয় বিধি ও আইনের কারনে সরকারী কেনা-কাটায় সিন্ডিকেট তৈরী হচ্ছে এবং যা সরকারী দপ্তরগুলিতে অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রবেশের মূল সুতিকাগার। তাই কোন সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে সিন্ডিকেট তৈরীতে সহায়ক ব্যবস্থা রাখা উচিত নয় এবং সকল পর্যায়ের ঠিকাদারদের কাজ পাবার ইতিবাচক পরিবেশ রাখা উচিত। সেকারনে মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর নির্দেশনা সরকারী দপ্তরগুলিতে দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধে অনেক সহায়ক হবে বলে মন্তব্য করেন ক্যাব নেতৃবৃন্দ।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন বিদ্যমান ক্রয় আইনে বৈধভাবেই বেশিরভাগ কাজই বড় ঠিকাদাররা পাবার সুযোগ আছে। আবার একজন ঠিকাদার একাধিক কাজও পেতে পারেন। ফলে অপেক্ষকৃত ছোট এবং নতুন ঠিকাদারদের কাজের সুযোগ ছিলো না। একই সাথে কেন্দ্রিয় ভাবে ক্রয় বিষয়টিকে পরীবিক্ষন করার জন্য পৃথক কোন পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটি করা যায় কিনা তা ভেবে দেখার পরামর্শ প্রদান করেন। কেন্দ্রিয় ভাবে একটি কর্তৃপক্ষ তৈরী হলে ঠিকাদারদের বিলের জন্য সরকারি অফিসে ঘুরাঘুরিসহ নানা হয়রানির বিষয়ে প্রতিকার চাইতে পারবেন। আর সেটা হলে সরকারের ক্রয় সংক্রান্ত ব্যয় সাশ্রয় হবে। যা জাতীয় অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখতে পারবে বলে আশা করেন।
নেৃতবৃন্দ আরও বলেন এনজিও ও অলাভজনক খাতে ও ক্রয়ের ক্ষেত্রে পৃথক ক্রয়নীতি না থাকায় ব্যবসায়িক খাতের মতো পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন, ২০০৬ ও নীতি অনুসরণ করার কারনে পুরো সামাজিক সেক্টরটি ব্যবসায়িক ধারার উত্থান ও প্রসার ঘটেছে। ফলে সামাজিক উন্নয়নের বিষয়টিতে মানবিকতার চেয়ে বানিজ্যই মূখ্য হয়ে দাড়িয়েছে। যা পুরো দেশের মানবিক কার্যক্রম ও মানবিক উন্নয়ন সূচকে নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার ঘটছে। পাবলিক প্রকিউরমেন্ট এ্যাক্ট এর মাধ্যমে অনেকগুলি প্রকল্পে এনজিও নিয়োগ করা হচ্ছে, যেখানে সাধারন ব্যবসায়ী ফার্মের ন্যায় এনজিও নিয়োগের কারনে টেন্ডারে অভিজ্ঞ এনজিও গুলিই নির্বাচিত হচ্ছে। ফলশ্রুিততে স্থানীয় সামাজিক উদ্যোগ ধারুন ভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বিভিন্ন বহুজাতিক দাতা সংস্থার অর্থায়নে বিভিন্ন প্রকল্পে এনজিও নিয়োগে বিডিং এর নামে প্রকল্পে নিয়োগ পেতে ৩০-৪০% পর্যন্ত ঘুষ প্রথা চালু, সামাজিক ব্যবসার নামে এনজিওকে বানিজ্যিকীকরণে স্বার্থান্বেষী মহলের অপচেষ্ঠা বন্ধ, এনজিওদের ঠিকাদারদের মতো পে-অর্ডার, প্রকল্পের সম পরিমান ব্যাংক গ্যারান্টি প্রদান বন্ধ করা উচত। একই সাথে সরকারি প্রকল্পে এনজিও নিয়োগে স্থানীয় উদ্যোগকে উৎসাহিত করা, স্থানীয় এনজিও নিয়োগের বিধান নিশ্চিত করা, বড় ধরনের ক্ষুদ্র ঋনের তহবিল, বিশাল আকারের স্থাপনা, গুটি কয়েক ব্যবসায়ী এনজিও কর্তৃক সিন্ডিকেট করে সকল সরকারী বেসরকারী তহবিল নিয়ন্ত্রণে কায়েমী চক্রান্ত বন্ধ করার উদ্যোগ নেবার আহবান জানান।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারন সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, ক্যাব মহানগরের সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, সাধারন সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, যুগ্ম সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম, ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি আলহাজ্ব আবদুল মান্নান প্রমুখ।
ফার্মসএন্ডফার্মার২৪/জেডএইচ