সরাসরি কৃষকের কাছ হতে ডিজিটাল পদ্ধতি ধান বেচাকেনায় অ্যাপ

514

78293425_2617107278367039_1234982300815458304_n
ধান বেচাকেনায় এবার ডিজিটাল পদ্ধতি চালু হতে যাচ্ছে। স্মার্টফোন ব্যবহার করে কৃষক ঘরে বসেই ‘কৃষকের অ্যাপ’-এর মাধ্যমে ধান বিক্রি করতে পারবেন। নিবন্ধন, বিক্রয়ের আবেদন, বরাদ্দের আদেশ ও মূল্য পরিশোধের সনদ- সব তথ্যই মিলবে এসএমএসের মাধ্যমে। আগামী বোরো মৌসুমে চালও বেচাকেনা হবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে। এতে সময়, খরচ ও হয়রানি- সবই কমবে এবং প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে ধান-চাল সংগ্রহ করা যাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্নিষ্টরা।

জানা যায়, ‘কৃষকের অ্যাপ’ ব্যবহারের জন্য শুরুতেই এটি স্মার্টফোনে ডাউনলোড করতে হবে। এর পর জাতীয় পরিচয়পত্র ও মোবাইল নম্বর দিয়ে নিবন্ধন সম্পন্ন করে সরকারি গুদামে ধান বিক্রির আবেদন করা যাবে। নিবন্ধনের দিন থেকেই কৃষক ধান বিক্রির আবেদন করতে পারবেন। প্রথমবারের মতো শুরু হওয়া ডিজিটাল মাধ্যম কৃষকের অ্যাপে নিবন্ধনের শেষ তারিখ ৭ ডিসেম্বর। ধান বিক্রির আবেদনের শেষ তারিখ ১৫ ডিসেম্বর। এ বিষয়ে কৃষক সার্বিক সহযোগিতা পাবেন কাছের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ও ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তাদের কাছে। আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে প্রকৃত কৃষকের তালিকা তৈরি হবে লটারির মাধ্যমে। এর পর সংশ্নিষ্ট উপজেলায় ক্রয় লক্ষ্যমাত্রা ও কৃষকের সংখ্যার ভিত্তিতে উপজেলা সংগ্রহ ও মনিটরিং কমিটি ধান কিনবে।

তবে অভ্যন্তরীণ খাদ্যশস্য সংগ্রহ নীতিমালা ২০১৭ অনুযায়ী একজন কৃষকের কাছ থেকে সর্বনিম্ন ১২০ কেজি (তিন বস্তা) এবং সর্বোচ্চ তিন টন (সাড়ে ২৭ মণে এক টন ধরা হয়) ধান কেনা যাবে। কৃষকের ধানের মূল্য তার নিজস্ব ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে পরিশোধ করা হবে। প্রথম পর্যায়ে ১৬ জেলার ১৬টি উপজেলায় শুরু হচ্ছে এ কার্যক্রম। এ জন্য সংশ্নিষ্ট জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), কৃষি কর্মকর্তা, খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা, খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ প্রতি উপজেলায় আট কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে খাদ্য অধিদপ্তর।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মোসাম্মৎ নাজমানারা খানুম সমকালকে বলেন, আসন্ন আমন মৌসুমে পরীক্ষামূলক এ কার্যক্রম সফল হলে আগামী বোরোতে অ্যাপের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ধান কেনা হবে। কমপক্ষে ৬৪ জেলার ৬৪টি উপজেলায় এভাবে ধান কেনার পরিকল্পনা রয়েছে। একই সঙ্গে অ্যাপের মাধ্যমে পরীক্ষামূলকভাবে চালও বেচাকেনা শুরু হবে।

কতজন কৃষকের কাছ থেকে কী পরিমাণ ধান কেনা হবে- জানতে চাইলে মহাপরিচালক বলেন, এ বিষয়ে উপজেলা সংগ্রহ ও মনিটরিং কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে। তবে সংশ্নিষ্ট জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ ব্যাপারে দিকনির্দেশনা দেওয়া হবে।

সংশ্নিষ্ট একাধিক উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, কৃষকের অ্যাপে ধান কেনার বিষয়ে উপজেলায় মাইকিং করা হচ্ছে। স্থানীয় পর্যায়ের পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হবে। এটি প্রচারের জন্য ভিডিও ডকুমেন্টারি করে টেলিভিশনেও প্রচার করা হবে। ইতোমধ্যে প্রায় সব কৃষক এ বিষয়ে জেনে গেছেন।

প্রথম পর্যায়ে যেসব উপজেলায় শুরু হচ্ছে :সাভার, গাজীপুর সদর, ময়মনসিংহ সদর, জামালপুর সদর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ, বরিশাল সদর, ভোলা সদর, নওগাঁ সদর, বগুড়া সদর, রংপুর সদর, দিনাজপুর সদর, ঝিনাইদহ সদর, যশোর সদর, হবিগঞ্জ সদর ও মৌলভীবাজার সদর।

আসন্ন আমন মৌসুমে আগামীকাল বুধবার থেকে প্রতি কেজি ২৬ টাকা দরে ৬ লাখ টন ধান কিনবে সরকার। এবার সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে সরকারের ধান কেনার খবরে খুশি হয়েছেন প্রকৃত কৃষকরা। তবে এর প্রক্রিয়া কী হবে, সে প্রক্রিয়া কতটা স্বচ্ছ হবে এবং ন্যায্যমূল্য পাবেন কি-না- এমন অনেক প্রশ্ন উত্তরাঞ্চলের কৃষকদের। বিশেষ করে অশিক্ষিত প্রান্তিক কৃষকরা অ্যাপের মাধ্যমে সঠিকভাবে ধান বেচতে পারবেন কি-না, তা নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। কারণ তাদের অনেকের স্মার্টফোন ও ব্যাংক হিসাব নেই।

খাদ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, চালকল মালিক গোষ্ঠীর কারণে কৃষকদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার অভিযোগ ওঠে প্রতি বছর। সে জন্য এখন কৃষকের কাছ থেকে চালের বদলে সরাসরি ধান কেনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ধীরে ধীরে সারাদেশে অ্যাপের মাধ্যমে প্রকৃত কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা হবে। সরকার গত বছর চালকল মালিকদের কাছ থেকে ৮ লাখ টন চাল কিনেছিল। আর চালকল মালিকরা ধান কিনেছিল কৃষকের কাছ থেকে। কিন্তু চালকল মালিকদের একচেটিয়া ব্যবসার কারণে গত বছর ধানের ন্যায্য দাম না পেয়ে কৃষকরা দেশের বিভিন্ন জায়গায় রাস্তায় ধান ফেলে প্রতিবাদ করেছিলেন। অতীতের পরিস্থিতি বিবেচনা করে এবার সরকার চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা অনেক কমিয়ে এনেছে। অ্যাপের মাধ্যমে প্রকৃত কৃষকের কাছ থেকে চাল কেনার উদ্যোগ নিয়েছে। সরকারের হিসাবে প্রতি কেজি আমন ধান উৎপাদনে এবার খরচ পড়েছে ২১ টাকা ৫৫ পয়সা। সেটা বিবেচনা করে তারা ধানের দাম কেজিতে ২৬ টাকা নির্ধারণ করেছে, যাতে কৃষকের কিছুটা লাভ থাকে ।

ফার্মসএন্ডফার্মার/১৫মার্চ২০