সাতক্ষীরার তালা উপজেলায় গ্রীষ্মকালিন ভিয়েতনামি মধুমালা জাতের হলুদ রঙের তরমুজ চাষে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন চাষিরা।
মালচিং পদ্ধতিতে মাচায় চাষকৃত তরমুজ চাষে আশানুরূপ ফলনে হাসি ফুটেছে চাষীর মুখে।একই সঙ্গে বেশ লাভেরও আশা করছেন তারা।
তালা উপজেলার তেঁতুলিয়া ও ভায়ড়া গ্রামের কৃষকের ক্ষেতের মাচায় ঝুলছে হলুদ রঙের শত শত তরমুজ। ভিয়েতনামের মধুমালা জাতের হলুদ রঙের এসব তরমুজের অধিকাংশই বাজারজাতের সময় হয়ে গেছে বলে জানান স্থানিয় চাষিরা। তরমুজ চাষে বিঘা প্রতি সবমিলিয়ে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।
তরমুজ চাষী লিয়াকত মহলদার বলেন, আমি প্রথমবারের মতো দেড় বিঘা জমিতে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ করেছি। এজন্য মে মাসের শেষ সপ্তাহে বীজ রোপন করি। ইতোমধ্যে আমার ক্ষেত তরমুজে ভরে গেছে। তরমুজ বিক্রিও শুরু করেছি।তিনি জানান স্থানীয় একটি এনজিও তাকে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি উচ্চমূল্যের ফসল হিসেবে তরমুজ চাষের জন্য বীজ, মালচিং পেপার, জৈব সার, ফেরোমন ফাঁদ এমনকি চাষাবাদের জন্য নগদ টাকাও দিয়েছে। আমরা প্রথমে একটু সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগলেও এখন দেখছি আসলেই গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ অত্যন্ত লাভজনক।
তিনি আরো বলেন, মাচানে প্রায় ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ২৫০টি তরমুজ ধরেছে। এসব তরমুজের একেকটির ওজন দুই কেজির ওপরে। সে হিসেবে আড়াই-তিন টন তরমুজ উৎপাদিত হবে।ইতোমধ্যে পাইকাররা এসে দরদাম করে গেছে। তারা ৩৫-৪০ টাকা কেজি দিতে চায়।সে হিসেবে বিঘা প্রতি অন্তত দেড় থেকে দুই লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করতে পারবেন বলে জানান তিনি। এতে অন্যান্য ফসলের তুলনায় কমপক্ষে কয়েকগুণ অধিক লাভের আশা করছেন তিনি।
লিয়াকত মহালদারের মতো তেঁতুলিয়া ও ভায়ড়া গ্রামের অনেক কৃষকই গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ করেছেন। তেঁতুলিয়া গ্রামের তরমুজ চাষী রফিকুল ইসলাম বলেন, সাধারণত ধান ও পাট উঠতে চার মাসের অধিক সময় লাগে। সেখানে তরমুজ ওঠে ৫৫ থেকে ৬০ দিনে। তরমুজে লাভ ধান বা পাটের চেয়ে কমপক্ষে পাঁচ থেকে ছয় গুণ। আমরা এর পরপরই এই মাচাতেই শসা লাগাবো। তা-ও দুইমাসের মধ্যে বিক্রয়যোগ্য হয়ে যাবে। অর্থাৎ একবার ধান বা পাট উঠতে যে সময় লাগে, তাতে একবার তরমুজ একবার শসা চাষ করা যায়।
তাল উপজেলার অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা শুভ্রাংশু শেখর দাশ বলেন, তালার ভায়ড়া ও তেঁতুলিয়া গ্রামে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে সাফল্য পাওয়া গেছে। স্থানীয় কৃষকদের উচ্চমূল্যের ফসল হিসেবে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে উদ্বুদ্ধ করা হয়। প্রথমবারেই তারা উল্লেখযোগ্য সফলতা পেয়েছে। আশা করি মালচিং পদ্ধতিতে মাচায় গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষের প্রযুক্তি এই এলাকায় আরও সম্প্রসারিত হবে। সরকারের কৃষি বিভাগও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়েছে। গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষের এই প্রযুক্তি আগামীতে আরও সম্প্রসারিত হবে বলে আশা করছি।