বুলবুলের আঘাতে সাতক্ষীরার সুন্দরবন সংলগ্ন উপকুলীয় উপজেলা আশাশুনি ও শ্যামনগরে ১৩ হাজার কাঁচা ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত ও ৩৩ হাজার ৪৬০টি কাঁচা ঘরবাড়ি আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে এবং ১৬ হাজার ২০০ হেক্টর ফসলের ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল এবং জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার। এছাড়া উপকূলীয় উপজেলায় শত শত বিঘা মৎস্য ঘের ও ফসলি জমি বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে উপকূলীয় অঞ্চলের নরম (সপ্ট) কাঁকড়া প্রজেক্টের।
এছাড়া সাতক্ষীরার দু’টি পানি উন্নয়ন বোর্ডের চুনা, খোলপেটুয়া ও কপোতাক্ষ নদের ১১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধে ব্যাপক ফাটল ও ভাঙন দেখা দিয়েছে। তবে দক্ষিণ দিক থেকে পশ্চিম দিক দিয়ে প্রবাহিত ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে সাতক্ষীরায় প্রাণহানির কোন ঘটনা ঘটেনি।
জানা গেছে, উপকূলীয় এলাকা শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলায় কাঁচাঘর বাড়ি, মৎস্য ঘের ও ফসলি জমিও রাস্তঘাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এসব অঞ্চলে প্রায় শতকারা ১০ ভাগ ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট লণ্ডভণ্ড ও ধসে পড়েছে। একই সাথে তলিয়ে গেছে চিংড়ি ঘের। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের ১০ ও ৯ নং সুরা, চাঁদনিমূখা, দাঁতিনাখালী, পাশ্বেমারিসহ এখানকার ১৫টি গ্রাম। এছাড়া বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের কলবাড়ী, দাঁতনেখালি, পশ্চিমপুড়াটলা, নীলডুমুর, দুর্গাবটি গ্রামে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এসব অঞ্চলে রাস্তার পাশের গাছ পড়ে ঘরবাড়ি চাপা পড়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সূত্র মতে, ভোর রাত ৪টা থেকে এ অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় শুরু হয় এবং ভোর ৫টার দিকে প্রবল বেগে প্রায় ৮০ থেকে ৯০ কিলোমিটার গতি বেগে তা দক্ষিণ দিক থেকে পশ্চিম দিক দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে। পরবর্তী ঝড় সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত প্রবাহিত হওয়ার পর তা বন্ধ হয়। বেলা বাড়ার সাথে সাথে ২৭০টি আশ্রয় ও সাইক্লোন শেল্টার থেকে লোকজন তাদের ঘরে ফিরে যান। উপকূলীয় এ অঞ্চলের ৬ লাখ মানুষের বসবাস। এর মধ্যে শনিবার রাত পর্যন্ত ১ লাখ ৮৫ হাজার মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে মানুষ আশ্রয় নেয়।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল জানান, ২২ হাজার স্বোচ্ছাসেবক, বিজিবি, র্যাব, পুলিশ, নৌবাহিনী ও ১০০ জন সেনা সদস্য উপকূলীয় এলাকায় জানমাল রক্ষায় কাজ করছেন।
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কামরুজ্জামান জানান, ঝড়ের দাপটে গাবুরা ইউনিয়নের ৮০ শতাংশ কাঁচা ও আধাপাকা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। দুর্গাবাটি, দাঁতিনাখালি ও চৌদ্দরশি বাঁধ মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তিনি আরও জানান, নদীতে এ সময় ভাটা থাকলেও ঝড়ের তাণ্ডবে নদীর পানি ৫ থেকে ৬ ফুট বেড়ে বেড়িবাঁধ পর্যন্ত ছুঁয়ে যায়। রাস্তায় গাছ পড়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পুরো এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। মোবাইল নেটওয়ার্ক সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এছাড়া গাবুরা, পদ্মপুকুর, আটুলিয়া, কাশিমারিসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের শত শত চিংড়ি ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে।
বুলবুলের আঘাতে কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। তবে সকালে আশ্রয় কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফেরার সময় গাবুরায় আবুল কালাম নামের এক ব্যক্তি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এ ছাড়া বাড়িঘর পড়ে কয়েকজন আহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের উপ-পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, রাত তিনটা থেকে ৫টা পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৮০ থেকে ৯০ কিলোমিটার।
ফার্মসএন্ডফার্মার২৪/জেডএইচ