সাতক্ষীরায় শিম চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের

716

2017-12-30_4_611409

সাতক্ষীরা: জেলার বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপকভাবে চাষ হচ্ছে শীতকালীন সবজি শিম। উন্নত বীজ, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে চাষিরা বেশ লাভবান হচ্ছেন। অন্যান্য ফসলের চেয়ে বেশি লাভ হওয়ায় কৃষকরা দিন দিন শিম চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। মূলত শীত মৌসুমে শিমের চাষ বেশি হয়ে থাকে। শুধু শীত মৌসুমে নয়, বছরের অধিকাংশ সময়ই এখন শিমের চাষ করা সম্ভব হচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ ও বিভিন্ন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের যৌথ প্রচেষ্টায় সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকায় সারা বছর ধরে চাষ হচ্ছে এ সবজি। চলতি মৌসুমে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে জেলায় শিমের ফলন বেড়েছে। স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিভিন্ন বাজারে ভাল দামে বিক্রি হচ্ছে। আর তাই চলতি মৌসুমে শিম চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন এমনই একজন কৃষক সদর উপজেলার বিহারীনগর গ্রামের মো. আব্দুল বারিকের ছেলে কৃষক মো. মিজানুর রহমান।

শিম চাষি মিজান জানান, বেসরকারি সংস্থা সিনজেনটা থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি ৫ কাটা জমিতে শিম চাষ শুরু করেন। তিনি বলেন, জমি চাষ, পরিচর্চা ও কীটনাশক ব্যবহার সম্পর্কে প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি লাভবান হয়েছেন। রাসানয়িক সারের পরিবর্তে জৈব সার ব্যবহার করেছেন। প্রতি মৌসুমে তার এ জমিতে খরচ হয় ২ থেকে আড়াই হাজার টাকা। সেখানে তিনি শিম বিক্রি করেন প্রতি সপ্তাহে প্রায় আড়াই হাজার টাকা। খরচ বাদে তার প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা লাভ হয়ে থাকে। সারা বছর তিনি শিমসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করে হয়েছেন স্বাবলম্বী।

ইউনিয়ন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা কিরন্ময় সরকার জানান, চলতি মৌসুমে ঝাউডাঙ্গা ও বল্লী ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে আবাদি জমিতে, ঘের ভেড়ি, ও বসত বাড়ির আঙিনায় মাঁচা পদ্ধতিতে শিম চাষ করা হচ্ছে। অল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় প্রান্তিক চাষিরা এখন শিম চাষে ঝুঁকছেন। ফলনও আগের চেয়ে তুলনামূলক বেশি হওয়ায় চাষিদের শিম চাষে উৎসাহ বেশি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কাজী আব্দুল মান্নান জানান, অনেকেরই পছন্দের সবজির তালিকায় আছে শিমের নাম। এটি খুবই সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। শিম, শিমের বিচি এবং শিমের পাতাও শাক হিসেবে খাওয়া যায়। শিমের বিচিতে রয়েছে উচ্চমানের ফাইবার প্রোটিন, যা শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজন। এতে কোনো কোলেস্টেরল নেই। এনার্জি বা শক্তির জন্য শিমে রয়েছে শতকরা ২০ ভাগ প্রোটিন ও উচ্চমাত্রার কার্বোহাইড্রেট। প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও আয়রনও রয়েছে এতে। শিম থেকে প্রাপ্ত ফাইবার একাধারে ওজন কমায়, শক্তি জোগায় ও ক্রনিক রোগ দূর করে। শিমে থাকা ভিটামিন বি হার্টের রোগ কমায়, ক্যানসার ও জন্মগত ত্রুটি প্রতিরোধে সাহায্য করে। শস্য ব্যবস্থাপনা ও শস্য বিন্যাস প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে দেশকে খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণতা অর্জন করার লক্ষ্যে তারা কৃষকদেরকে বছরের ১২ মাসই জমিতে ফসল ফলাতে উদ্বুদ্ধ করছেন। আর এরই অংশ হিসেবে তারা কৃষকদের মাঝে বিভিন্ন সবজি চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে দিচ্ছেন প্রশিক্ষণ। আধুনিক চাষ পদ্ধতি ব্যবহার করে কৃষকরা যেমন লাভবান হচ্ছেন; তেমনি হচ্ছেন স্বাবলম্বী।

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন