সাতক্ষীরায় ৭৯ হাজার ৭৭৬ হেক্টর জমিতে লবণসহিষ্ণু ধান চাষ

25

সাতক্ষীরায় চলতি বোরো মৌসুমে বিস্তীর্ণ চিংড়ি ঘেরে ৭৯ হাজার ৭৭৬ হেক্টর জমিতে বোরো লবণসহিষ্ণু ধান আবাদ হয়েছে। জেলার উপকূলীয় অঞ্চলে বেশির ভাগ জমি লবণাক্ত। এই জমিতে নদীর লোনা পানি তুলে বিগত প্রায় চার দশক ধরে চিংড়ি চাষ করছে স্থানীয় কৃষক। বিগত বছরগুলোতে শুষ্ক মৌসুমে চিংড়ির উৎপাদন ভালো না হওয়ায় লবণসহিষ্ণু বোরো ধান চাষে ঝুঁকেছে কৃষক।

চলতি মৌসুমে জেলার সাতটি উপজেলায় ৭৯ হাজার ৭৭৬ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে, যা থেকে ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৭৭১ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। গত মৌসুমে চাষ হয়েছিল ৭৯ হাজার ৫২৬ হেক্টর জমিতে। এক বছরে ২৫০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ বেশি হয়েছে।

স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, এখানকার লবণাক্ত জমিতে বোরো ধান উৎপাদন করে লাভবান হচ্ছেন তারা। লোনা পানির মাছের ঘেরে চিংড়ি ছাড়া অন্য কোনো ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হয় না। সেখানে বর্তমানে লবণসহিষ্ণু ধান চাষ করছেন তারা। চিংড়ির পাশাপাশি শুষ্ক মৌসুমে ধান উৎপাদন করে বাড়তি আয় হচ্ছে।

সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (খামারবাড়ি) সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ মৌসুমে জেলার সাতটি উপজেলায় ৭৯ হাজার ৭৭৬ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে। এ থেকে ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৭৭১ টন চাল উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদরে ২৩ হাজার ২৫০ হেক্টর, কলারোয়ায় ১২ হাজার ৬৫৫, তালায় ১২ হাজার ১৫৫, দেবহাটায় ৬ হাজার ১২৫, কালিগঞ্জে ৬ হাজার ৯৪৬, আশাশুনিতে ৯ হাজার এবং শ্যামনগরে ২ হাজার ৩১০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। গত মৌসুমে জেলায় ৭৯ হাজার ৫২৬ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছিল। সে হিসাব অনুযায়ী চলতি মৌসুমে ২৫০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ বেড়েছে। এছাড়া গেল মৌসুমে বোরো চাল উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ১২ হাজার ৮২৫ টন।

আশাশুনি উপজেলার কাদাকাটি গ্রামের চিংড়ি চাষি আজমত আলী জানান, চলতি মৌসুমে তিনি ২৫ বিঘা জমিতে মাছের ঘেরে লবণসহিষ্ণু ২৬ জাতের বোরো ধান চাষ করেছেন। ফলন ভালো হয়েছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয় না ঘটলে ভালো ফলন পাওয়া যাবে।? বিঘাপ্রতি তার ৭ হাজার টাকা হারে ২৫ বিঘায় এক লাখ ৭৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে তার। ২৫ বিঘায় ৬২৫-৬৩০ মণ ধান উৎপাদন হবে। যার বাজার মূল্য কমপক্ষে ৭ লাখ টাকা। খরচ বাদে পাঁচ লাখ টাকার বেশি লাভ হবে তার।

দেবহাটা উপজেলার কুলিয়া ইউনিয়নের রাঙাশিসা গ্রামের মাছচাষি? আমিনুর রহমান জানান, তিনি ১২ বিঘা জমির চিংড়ি ঘেরে ব্রি-৬৭ জাতের বোরো ধান চাষ করেছেন তিনি। অন্যান্য জাতের ধানের চেয়ে বি-৬৭ লবণ সহ্য করতে পারে বেশি। রোগবালাই কম। বিঘায় সর্বনিম্ন ১৫ বস্তা করে ধান উৎপাদন হবে।

কৃষকরা বলছেন, চলতি মৌসুমে চিংড়ি ঘেরে বোরো ধান উৎপাদন করে আড়াই লাখ টাকার বেশি লাভ হবে তার। এটি বাড়তি লাভ। কারণ শুষ্ক মৌসুমে ঘেরে চিংড়ি উৎপাদন ভালো হয় না। চার মাসের ফসল হিসেবে ধান উৎপাদন বাড়তি লাভ। তাছাড়া লবণাক্ত জমিতে চিংড়ি ছাড়া আর কিছু চাষ করা সম্ভব ছিল না। কয়েক বছর ধরে লবণ পানির চিংড়ি ঘেরে বোরো ধান চাষ করছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (খামারবাড়ি) উপপরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরায় লবণসহিষ্ণু বিভিন্ন জাতের ধান উৎপাদন হচ্ছে। যেসব লোনা পানির মাছের ঘেরে চিংড়ি ছাড়া অন্য কিছু হতো না, সেখানে এখন ধান চাষ হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, চলতি মৌসুমে জেলায় বিনা-১০, ব্রি-৬৭, ৯৭, ৯৯ এবং বিএডিসির উদ্ভাবিত এসএল-৮ এইচ জাতের লবণসহিষ্ণু ধান চাষ হয়েছে। এসব জাত ১০-১৩ ডিএস পর্যন্ত লবণ সহ্য করতে পারে। জেলায় মোট বোরো ধানের ২০ শতাংশই লবণাক্ত জমিতে চাষ হয়েছে।