সাধারণ মানুষের মাঝে পুষ্টি সচেতনতায় কাজ করছে ‘ভিলেজ নিউট্রিসন’

504

Village Nutrition দেশের সাধারণ মানুষ, স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রী, গ্রামের খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষ, গার্মেন্ট শ্রমিক, নিম্ন আয়ের মানুষ, পিছিয়ে পড়া ও অবহেলিত বিশাল জনগোষ্ঠির মাঝে পুষ্টি সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে কাজ শুরু করেছে।

তারই অংশ হিসেবে বিগত ২৭/১১/২০২২ তারিখ রোববার ভিলেজ নিউট্রিশন ও জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়, গাজীপুরের যৌথ আয়োজনে শাহীন স্কুল, গাজীপুর শাখার ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকদের নিয়ে পুষ্টি সচেতনতা বৃদ্ধির প্রচারণা কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠিত হয়।

ভিলেজ নিউট্রিশনের চীফ কো অর্ডিনেটর মো. মশিউর রহমান খান এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির আলোচনা করেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, গাজীপুর ডা. এস. এম. উকিল উদ্দিন। বিশেষ অতিথির আলোচনা করেন কৃষিবিদ মো. আক্তারুজ্জামান, কনসালটেন্ট, এডিএসএল, পুষ্টিবিদ সোনিয়া সাবরীন সোমা, পরামর্শক, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ঢাকা, মো. হুমায়ুন কবির, প্রিন্সিপাল, গাজীপুর টেকনিকেল এন্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজ, মো. মফিজ উদ্দিন মাফি, পরিচালক, শাহীন স্কুল, গাজীপুর শাখা।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ভিলেজ নিউট্রিশনের সিইও মো. শফিকুল ইসলাম, ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন চীফ প্রোগ্রামার মিজানুর রহমান হেলাল। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন নেচার কেয়ার ম্যানু. ইন্ডা. লি. এর সেলস ম্যানেজার মো. মাহবুব আলম।অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআনের অংশবিশেষ তেলাওয়াত করেন তানজিমুল উম্মাহ ক্যাডেট মাদরাসার শিক্ষক হাফেজ মো. সাদিক আবদুল্লাহ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডা. এস. এম. উকিল উদ্দিন বলেন-আজ পুষ্টি নিয়ে আলোচনা করছি, পুষ্টি আমাদের দরকার। শরীরে পুষ্টি না থাকলে আমরা মেধা শূণ্য জাতি হয়ে যাব। মেধা শূণ্য জাতি হলে, মেধা অন্য দেশ থেকে ধার করতে হবে। পুষ্টির জন্য দুধ, ডিম, মাছ, মাংস খেতে হবে। আগে কিছু ভুল ধারণা ছিল, কোনো কোনো রোগে চিকিৎসক দুধ, ডিম খাওয়া বারণ করতেন। এখন আর সে অবস্থা নেই। বর্তমান বিশ্বে ডিম, দুধ, পোলট্রি মিট ও মাছ নিয়ে ব্যাপক গবেষনা হয়। বিশ্ব ডিম দিবস, বিশ্ব দুধ দিবস, বিশ্ব মাংস দিবস আছে এ জন্যে যে, এগুলোর গুণাগুনের প্রচার প্রপাগান্ডা বাড়ানোর জন্যে। এবারের বিশ্ব ডিম দিবসের স্লোগান ছিল-প্রতিদিন একটি ডিম, পুষ্টিময় সারাদিন। আমরা যদি ১টি ডিম খাই তাহলে সারাদিন সুস্থ থাকব। পুষ্টিতে ভরপুর থাকব। ডিম খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। আমাদের মায়েদের পেটে যখন বাচ্চা আসে, তখন তাদেরকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহের জন্যে বাহির থেকে নানারকম ফল-মূল, ঔষধ-পত্র, ভিটামিন, মিনারেল খাওয়ানো হয়।

তিনি বলেন-ডিম আল্লাহ তায়ালার এমন একটি বিষ্ময়কর সৃষ্টি। তা হলো ডিম থেকে একটি পরিপূর্ণ বাচ্চা বের হয়ে আসে। তার জন্যে বাহির থেকে ডিমের ভিতরে কোনো কিছু সরবরাহ করতে হয় না। ডিমের ভিতরে প্রয়োজনীয় সকল প্রকার পুষ্টি উপাদান থাকায় আমরা প্রতিদিন ১টি ডিম খাব। দুধ, ডিম, মাছ ও মাংস উৎপাদনে কেহ কোনো সমস্যা করতে না পারে, এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে না পারে সে জন্যে সরকার আমাদেরকে রেখেছে। আমরা সে দায়িত্ব পালন করছি। দুধ, ডিম, মাছ ও মুরগির মাংস এখন অনেক নিরাপদ খাবার। আমি উকিল উদ্দিন আজ দুপুরে যে খাবার খেলাম, আপনারা যে খাবার খেলেন তাও কোনো প্রকার টেস্ট করা হয়নি। কিন্তু মাছ, মরগি ও গবাদি পশুর খাদ্য তৈরিতে ব্যবহৃত কাঁচামাল একাধিকবার পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ফিড মিলে দেয়া হয়। ফিড তৈরির পর বাজারজাত করার আগে, মান ঠিক আছে কিনা, তা আবারও পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখে, পরে সরবরাহ করা হয়। ফিড মিলে সাইনটিস্ট আছে, আমাদের সরকারী অফিসে সাইনটিস্ট আছে। তারা নিয়মিত পরীক্ষা নিরীক্ষা চালায়। সুতরাং কোনো সন্দেহ না রেখে দুধ, ডিম, মাছ, মাংস আমরা খেতে পারি। আমাদের এসব পণ্য নিরাপদ। অভিভাবকদের প্রতি আমার একটি অনুরোধ সকালে বাচ্চাদেরকে নাস্তায় ১টি ডিম দিতেই হবে। ছাত্র-ছাত্রীরা তোমরা যারা পড়াশুনায় বেশি সময় দেও, আমরা যারা কাজ কর্মে ব্যস্ত থাকি তাদের সকালে ১টি ও বিকেলে ১টি ডিম খেতে হবে। অভিভাবকদের বলব পরবর্তি প্রজন্মকে রক্ষার জন্যে দুধ, ডি, মাছ ও মাংস নিয়মিত খেতে হবে। পুষ্টি সচেতনতা বৃদ্ধির জন্যে এ ধরনের প্রচারণা করায় আমার পক্ষ থেকে, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও সরকারের পক্ষ থেকে, Village Nutrition কে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে অনলাইনে যুক্ত থেকে বক্তব্য রাখেন দেশের খ্যাতনামা কৃষিবিদ আক্তারুজ্জামান। তিনি বলেন-গ্রামীন পরিবেশে আপামর জনগোষ্ঠির পুষ্টি চাহিদা পূরণে এবং সকলে পুষ্টিতে ভরপুর থাকবে এমন প্রত্যাশিত সচেতনতা বৃদ্ধির প্রচারণা প্রোগ্রাম Village Nutrition নিয়েছে। যার সাথে আমি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আপনারা যারা এ শুভ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে এ অনুষ্ঠানকে সুন্দর ও সার্থক করতে সময় দিয়েছেন তাদেরকে আমি বিশেষভাবে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। শুধু আমাদের দেশে নয় প্রোটিন চাহিদা আজ সারা বিশ্বে। বিশেষ করে আমাদের দেশে প্রান্তিক পর্যায়ে মা, শিশু ও বয়স্ক লোকেরা পুষ্টিহীনতায় ভোগে। তাদের খাদ্যের মধ্যে অবশ্যই প্রয়োজনীয় প্রোটিন থাকতে হবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে স্বল্প মূল্যে প্রোটিন পাব কিসে? আপনার হাতের কাছেই সহজে পাওয়া যায় এবং দামে সস্তা এমন পণ্য দুধ, ডিম, মাছ ও পোলট্রি মিট ছাড়া আর কি আছে? আমি একজন কৃষিবিদ। আমার কাজ হচ্ছে এদেশের পোলট্রি শিল্প, মৎস্য শিল্প ও ডেইরি শিল্পকে এগিয়ে নেয়ার জন্যে বৈজ্ঞানিক পরামর্শ দান। যাতে আমার দেশের সাধারণ মানুষ স্বল্প মূল্যে নিরাপদ প্রানিজ আমিষ পেতে পারে। ভিটামিন১২, দামি এমাইনো এসিড, কোলিন, ভালো কোলেস্টরেল অর্থাৎ HDL ডিমে আছে। মিথুইনিন, লাইসিন, ট্রিপটোফেন, থিউনিন এগলো খুব দামি এমাইনো এসিড যা সহজেই ১টি ডিমে পাবেন। আপনার হার্টকে যদি সুস্থ রাখতে চান, তাহলে ডেইলি ১টি বা ২টি ডিম খান। বিজ্ঞানিরা সেটিই প্রতিষ্ঠিত করেছে।

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি পুষ্টিবিদ সোনিয়া সাবরীন সোমা বলেন-পুষ্টি বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, পরীক্ষার দিন সকাল বেলা হরলিকস, কেক আরো কত কি আমরা বাচ্চাদেরকে খেতে দেই। কিন্তু ইহা বাচ্চার তেমন কোনো কাজে লাগে না। বাচ্চা মায়ের পেটে থাকা অবস্থায় মাকে ডিম, দুধ, মাছ ও মাংসের মত প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে। বাচ্চার বয়স ২ থেকে ৫ বছর চলাকালীন আরো বেশি যত্মবান হতে হবে। স্কুল Going বাচ্চার জন্যে পুষ্টির বিষয়টা আরো দরকারী। ডিমকে আমরা Super Food বলছি। শরীরের প্রতিদিনের প্রোটিনের যে চাহিদা তা ডিম খেলে অনেকটা পূরণ হয়। যদি সুস্থ থাকতে চান প্রতিদিন ডিম খান। প্রয়োজনে ২টি ডিম খান। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস রোগিও ডিম খেতে পারবে। মুরগীর মাংস শরীরকে সুস্থ রাখে। মাছ শরীরের জন্যে খুবই দরকারী।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ৭১ টিভির সিনিয়র সাংবাদিক ইকবাল হোসেন বলেন-ভালো ছাত্র হওয়া ও পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে হলে এখন থেকেই নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। আমাদের জানতে হবে কি কি খাদ্যে বেশি করে পুষ্টি পাওয়া যায়। যেমন-ডিম, দুধ, মাছ, মাংস ও শাক-সব্জিতে প্রচুর পুষ্টি রয়েছে। এগুলো আমাদেরকে নিয়মিত খেতে হবে। তোমরা যারা ছোট তারা মা-বাবাকে বলে নিয়মিত ডিম, দুধ, মাছ ও পোলট্রি মিট খাবে।

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি প্রিন্সিপাল হুমায়ুন কবির বলেন-Village Nutrition এমন একটি উদ্যোগ নিয়ে সারাদেশের মানুষের পুষ্টি সচেতনতার জন্যে যে অভিযান শুরু করেছে, আমি এ কাজকে স্বাগত জানাই। আমি বিশ্বাস করি একজন মানুষ জন্মের পর থেকে যতদিন বেঁচে থাকবেন, ততদিন তাঁর শরীর গঠন, মেধার বিকাশ, চিন্তা চেতনা এবং একজন পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে সুস্থ থাকার জন্যে সুষম খাবারের কোনো বিকল্প নেই। Village Nutrition যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে চমৎকার উদ্যোগ। তার প্রথম পদক্ষেপ হলো স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে পুষ্টি সচেতনতা সৃষ্টি করা।

তোমরা যারা ছোট্ট শিশু, বড় হবে ঠিক। তোমরাই হবে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, লেখক, কবি, হবে বৈজ্ঞানিক। আজকে যারা ফুলের কলি, কালকে হবে ফুল। তোমরাই একদিন ভুলিয়ে দিবে, এ সমাজের ভুল। সুন্দর এ ছন্দ বলার মধ্য দিয়ে বক্তব্য শুরু করেন অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি শাহীন স্কুল, গাজীপুর শাখার পরিচালক মো. মফিজ উদ্দিন মাফি।

তিনি বলেন-আমরা সকলেই জানি স্বাস্থ্য সকল সুখের মূল। লেখাপড়ায় মন বসানো, নিয়মিত পড়াশুনা করতে চাইলে তোমাদের ভালো স্বাস্থ্য থাকতে হবে। আর ভালো স্বাস্থ্যের জন্যে পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। আমরা কুসংস্কার বিশ্বাস করব না। আমরা পরীক্ষার মধ্যেও ডিম খাব। ডিমে রয়েছে প্রচুর প্রোটিন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক, শিক্ষক ও অতিথিবৃন্দকে ১টি সিদ্ধ ডিম, এক গ্লাস কুসুম গরম দুধ দিয়ে আপ্যায়ণ করা হয়। অনুষ্ঠানে Village Nutrition কর্তৃক ফুল দিয়ে সাজানো সেলফি জোনে ছবি তুলে ছাত্র-ছাত্রীরা আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে ওঠে।

অনুষ্ঠানে Village Nutrition কর্তৃক নির্মিত মো. শফিকুল ইসলাম রচিত নাটিকা মায়ের পুষ্টি বড় পর্দায় প্রদর্শন হয়।
সম্পূর্ণ অনুষ্ঠানটি ভিডিও ধারণ করা হয়। যা খুব শীঘ্রই Village Nutrition এর ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত হবে। চোখ রাখুন Village Nutrition এর পর্দায়।

ফার্মসএন্ডফার্মার/ ২৮ নভেম্বর, ২০২২