সাভারের জামসিংয়ের জয় পাড়ার বদ্ধ একটি ঘরে মাশরুম চাষ করছেন ২২ বছরের মেয়ে ফাতেমা আকতার। আপন মনে প্লাস্টিকের একটি বোতল দিয়ে মাশরুমগুলোর গায়ে পানি ছিটাচ্ছে। খবর বিবিসি বাংলার।
একেবারে সাধারণ একটি দৃশ্য হলেও একটু খেয়াল করলে বোঝা যায় আর দশটা সাধারণ মেয়ের মতো নয় মাশরুমে পানি ছিটানো মেয়েটি।
দু’টি পা গোড়ালি থেকে বাঁকা, সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছেন না। হাতগুলোও দুর্বল। তারপরেও শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে তিনি পানি ছিটিয়ে যাচ্ছেন মাশরুমের মাচায়।
আসুন শোনা যাক তার জীবনের গল্প।
ছোট বেলা থেকে সেরিব্রাল পালসি রোগে আক্রান্ত ফাতেমা আকতার। স্বাভাবিক চলাফেরায় অক্ষম। তার বয়স যখন দশ বছর তখন তাকে আর তার মাকে ফেলে বাবা চলে যায় বাবা। প্রতিবন্ধী শিশুকে নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েন ফাতেমার মা।
আর এখন সেই প্রতিবন্ধী ফাতেমা মাসে ৫ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা আয় করছেন ঘরে বসে। ২০১৬ সালে একটি এনজিওর সহায়তায় ১৫ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে মাশরুম চাষ শুরু করেন তিনি।
প্রতি কেজি ২শ-৩শ টাকা দরে দিনে ৩-৪ কেজি পর্যন্ত মাশরুম বিক্রি করেন ফাতেমা। এ পর্যন্ত ১২ হাজার থেকে ১৩ হাজার টাকা জমা হয়েছে তার।
নিজের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে ফাতেমা বলেন, “আমি নিজের টাকা দিয়ে নিজে আনন্দ করতে পারি, নিজের ইচ্ছা মতো চলতে পারি। এক একটা (মাশরুমের) প্যাকেট কিনি ১৫ টাকা দিয়ে, আর প্রতি প্যাকেট থেকে ৪০ টাকার মাশরুম বিক্রি হয় তাতে আমার ২৫ টাকা লাভ হয়।”
পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়ার সুযোগ হয়েছিল ফাতেমার। প্রতিদিন রিকশায় করে স্কুলে আনা নেয়ার মতো সামর্থ্য না থাকায় পরে আর স্কুলে যাওয়া হয়নি। স্কুলে যাওয়া বন্ধ হলে বাসায় বসে কাপড় সেলাইয়ের কাজ শিখেন ফাতেমা, কিন্তু দীর্ঘক্ষণ এক নাগাড়ে বসে থাকার মতো শারীরিক সামর্থ্য না থাকায় সেটাও খুব ভালো ভাবে করতে পারেন না তিনি। পরে মাশরুম চাষ করে সফলতার মুখ দেখেন তিনি।
শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়েও মাত্র ২২ বছর বয়সে স্বাবলম্বী হওয়া ফাতেমা আকতার বলেন, “আমার ছোটকাল থেকে ইচ্ছে ছিল আমি অনেক পড়ালেখা করবো। নিজের পায়ে দাঁড়াবো, নিজের যোগ্যতা সবাইকে দেখাবো। ভিক্ষা করার কোন ইচ্ছা আমার ছিল না। মানুষজন আমাকে লাথি-উষ্ঠা দিবে-এটা মেনে নিতে পারতাম না। তাই আয়ের একটা উপায় খুঁজে নিয়েছি।”
তিনি বলেন, “আমি অনেক সফল হয়েছি, আমার অনেক ভালো লাগে এখন। আমি মনে করি চেষ্টা থাকলে সবই করা সম্ভব।”
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন