“সিন্ডিকেট থামাও, জীবন বাঁচাও” খাতুনগঞ্জ অভিমুখী পদযাত্রায় ক্যাব চট্টগ্রাম নেতৃবৃন্দ

152

আইন প্রয়োগে শিথিলতা ও স্থানীয় প্রশাসনের আশ্রয়-প্রশ্রয়ের কারনে কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী বারবার পেয়াঁজসহ নিত্যপণ্যের বাজারে কারসাজি, মজুত ও অতিমুনাফাসহ নানা কারসাজি করছেন। আর যারা এগুলো দেখার দায়িত্ব তাঁরা দেখেনি বা কোন অভিযোগ পাই নাই এভাবে নানা অজুহাতে বিষয়টিকে পাশকাটানোর কারনে ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া হয়ে ভোক্তাদের পকেট কাটছে। ব্যবসায়ীরা একবার পেয়াঁজ, একবার আলু, একবার আদা-মসলা, আরেকবার স্যালাইন আবার ডাবের মতো পণ্য নিয়ে কারসাজি করে মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাত্রাকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। আবার আইন প্রয়োগে চেহারা ও রাজনৈতিক পরিচয় দেখে ব্যবস্থা নেবার কারনে আইনের স্বাভাবিক গতি বারবার ব্যহত হচ্ছে। যার কারনে পুরো বছর জুড়ে কোন না কোন পণ্যের কৃত্রিম কারসাজি লেগেই থাকে। আর সংকট হলেই প্রশাসন বলেই বেড়ান সাড়াশি অভিযান হবে বলে হুংকার দিলেও শেষ পর্যন্ত খুচরা দোকানে লোক দেখানো কিছু অভিযান পরিচালনা করে বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের সদিচ্ছাকে কার্যত ব্যর্থ করে দিচ্ছেন। যার কারনে বানিজ্য মন্ত্রী স্থানীয় প্রশাসনকে বারবার বাজার তদারকিতে সম্পৃক্ততা বাড়ানোর নির্দেশনা দিলেও সেগুলো কাগজে কলমেই থেকে যাচ্ছে। মাঠ পর্যায়ে তার কোন সুফল আসছে না। ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩ইং ক্যাব চট্টগ্রামের উদ্যোগে দেশের বৃহত্তম পাইকারী বাজার খাতুনগঞ্জ অভিমুখি “সিন্ডিকেট থামাও, জীবন বাঁচাও” শীর্ষক পদযাত্রায় ক্যাব চট্টগ্রাম নেতৃবৃন্দ উপরোক্ত অভিযোগ করেন।

ক্যাব যুব গ্রæপ চট্টগ্রাম মহনগরের সভাপতি আবু হানিফ নোমানের সঞ্চালনায় পদযাত্রায় সংহতি জানান ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, ন্যাপ কেন্দ্রিয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিটুল দাস গুপ্ত, ক্যাব সদরঘাটের শাহীন চৌধুরী, ক্যাব পাঁচলইশের সাধারন সম্পাদক মোহাম্মদ সেলিম জাহাঙ্গীর, প্রশিকার গীতা রানী দত্ত, ক্যাব জামালখানের সালাহউদ্দীন, ক্যাব পাহাড়তলীর হারুন গফুর ভুইয়া, ক্যাব কোতোয়ালীর ডাঃ ফজলুল হক সিদ্দিকী, ক্যাব মোহরার রুবি খান, ক্যাব চকবাজারের আবদুল আলীম, তৃণমূল জনসগঠনের আবুদল মোতালেব মাস্টার, ক্যাব যুব গ্রুপের রাসেল উদ্দীন, মোহাম্মদ রায়হান, নিলয় বিশ্বাস, আবরারুল করিম নেহাল, আশফাকুর রহমান, খালেদ সাইফুল্লাহ, রাইসুল ইসলাম, আরাফাত চৌধুরী, সালমান রুশদি, সাইমন হোসেন প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, কোন কারন ছাড়াই কিছু দিন পর পর বৈধ আমদানির ছাড়পত্র, এলসি খোলার কাগজপত্র ছাড়া আমদানিকারকের কমিশন এজেন্ট, আড়তদার পরিচয়ে কিছু পেঁয়াজসহ ভোগ্যপণ্য ব্যবসায়ীরা জনগনকে জিম্মি করে বাজারে অস্থিরতা সৃষ্ঠি করছেন। দেশের চাহিদার সিংহভাগ দেশীয় উৎপাদন দিয়ে মেটানো সম্ভব হলেও ব্যবসায়ীরা আমদানিকৃত পেঁয়াজ বিক্রিতে স্বাচ্ছ্যন্দ। কারন পেপারলেস ব্যবসা হবার কারনে আমদানিকৃত পেয়াঁজ নিয়ে ক্রেতাদের সহজেই বোকা বানানো যায়। ২০১৯ সালেও এ সমস্ত ব্যবসায়ীরা একই কায়দায় পেয়াঁজের বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছিলো। এবারও তারা একই কায়দায় ক্রেতাদের পকেট কাটছে। প্রশাসন অভিযান পরিচালনা করলেই ধর্মঘটসহ নানা হুমকি প্রদান করছে। অপকর্মের হোতাদের বিরুদ্ধে কঠিন শাস্তির পরিবর্তে জামাই আদরের কারনে তারা বার বার এ ধরনের অপকর্ম করে যাচ্ছে।

নেতৃবৃন্দ আরও বলেন মানুষের জনদুর্ভোগ লাগবে কার্যকরী ও বিকল্প ব্যবস্থা হিসাবে ভ্রাম্যমান আদালত, সমন্বিত বাজার তদারকি কার্যক্রম একটি উদ্ভাবনী মডেল চলমান ছিলো। যেখানে জেলা-উপজেলা প্রশাসন সফল ভাবে নেতৃত্ব প্রদান করলেও বর্তমানে এধারাটি আর নিত্যভোগ্য পণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখা, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতের মতো অতিজনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিতে না নিয়ে ভিন্নখাতে প্রভাহিত হচ্ছে। ফলে সাধারন মানুষের জীবন-জীবিকায় দুর্ভোগ লাগবের বিষয়গুলি গৌণ হয়ে যাচ্ছে। ফলে সরকারের অনেক উদ্ভাবনী উদ্যোগের সফল তৃণমূল মানষ উপভোগে সম্ভব হচ্ছে না।

বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, গুটিকয়েক অসাধু ব্যবসায়ী খাদ্য সিন্ডিকেট করে মানুষের খাদ্য নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছেন। মানুষরূপী এসমস্ত মূল্য সন্ত্রাসীদেরকে সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে বয়কটে সংঘবদ্ধ হওয়া দরকার। মানুষ সচেতন হলে এভাবে জনগনের পকেট কেটে, আবার তারা দানবীর সাজার জন্য সমাজের মুল ¯্রােতধারায় চলে আসা বন্ধ হবে। রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ মাদ্রাসায় অনুদান দিয়ে বাহবা খুড়াঁয়। বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও মিডিয়াগুলো তাকে আবার সাদা মনের মানুষ বলে প্রচার করেন। অথচ তার আয়ের উৎস কি কেউ জানার চেষ্টা করেও না। একারনে তারা একবার জনগনের পকেট কাটার জন্য খাদ্যপণ্যসহ বিভিন্ন ব্যবসায় লগ্নি করেন। আবার দলীয় এমপি, নেতা হবার জন্য আরেকবার লগ্নি করেন। তাদেরকে আশ্রয় পশ্রয় না দিলে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা এভাবে বিষফোড়া হয়ে জাতির জন্য হুমকি হতে পারতো না। তাই এখন সময় এসেছে জনগনকে সংগঠিত হয়ে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তোলা।

বক্তারা আরও বলেন, দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন একটি পক্ষ ক্ষমতায় থাকা, অপর পক্ষ ক্ষমতায় যেতে মরিয়া হলেও সাধারন মানুষের দুঃখ দুর্দশা ও ভোগান্তির বিষয়ে কোন টু-শব্দ পর্যন্ত নেই। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় টিসিবি ও খাদ্যবিভাগের ওএমএস এর পণ্য সংগ্রেহে লম্বা লাইনে ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে রীতিমতো যদ্ধে লিপ্ত থাকলেও জনদরদী নেতাদের ও তথা কথিত ব্যবসায়ী রাজনীতিবিদদের তাদের কথা ভাববার সময় নেই। ফলে ভোটের আগেই এক পক্ষ নির্বাচিত হবার গ্যারান্টি নিয়ে মাঠে নামতে চরম প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। সেখানে সাধারন মানুষের জীবন জীবিকার নিশ্চিয়তার দাবি তাদের কানে পৌঁছায় না। সাধারন মানুষ এখন রাজনীতির মুল নিয়ামক নয়, একটা সময় গুন্ডা, মটর সাইকেল রাজনীতির নিয়ামক হলেও বর্তমানে সরকারের প্রশাসনিক যন্ত্রই মুল চালিকা শক্তিতে পরিনত হওয়ায় সাধারন মানুষের স্বার্থ বারবার জলাঞ্জলিতে যাচ্ছে। যার কারনে ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংরক্ষনের দায়িত্বে নিয়োজিত বানিজ্য মন্ত্রণালয়কে ভোক্তা স্বার্থের বিষয়টি দেখভাল করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বিষয়গুলি অনেকটাই বিড়ালকে মাছ পাহারা দেবার মতো। ফলে ব্যবসায়ীরা মুক্ত বাজার অর্থনীতির নামে একবার পেঁয়াজ, একবার চাল, একবার মসলা, একবার সয়াবিন এভাবে পুরো বছর জুড়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্য পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরী করে জনগনের পকেট কাটছে। দেশের ভোক্তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের বার্ষিক চাহিদা নিরুপণ, উৎপাদন, যোগান, বাজারজাতকরণে প্রতিবন্ধকতা নিয়ে অনুসন্ধান, ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণে চিন্তা করার সময় বানিজ্য মন্ত্রনালয়ের থাকে না।