সিরাজগঞ্জে খিরার বাম্পার ফলন খুশি কৃষকরা

192

উত্তরাঞ্চলের শয্যভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত সিরাজগঞ্জের মাঠের পর মাঠে আবাদ হয়েছে খিরার। উপযোগী আবহওয়া থাকায় খিরার বাম্পার ফলনও হয়েছে। দাম ভালো পাওয়ায় খুশি কৃষকেরা। এই খিরার চাহিদা রয়েছে সারাদেশেই। প্রতিদিন প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ টন খিরা যাচ্ছে ঢাকাসহ বিভিন্ন আড়তে। ফলন ভালো হওয়ায় মৌসুমি খিরার হাট বসেছে প্রায় ১৫টি স্থানে। এ বছর জেলায় ৬৬৬ হেক্টর জমিতে খিরার আবাদ চাষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষি বিভাগ।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় মোট ৬৬৬ হেক্টর জমিতে খিরা চাষ হয়েছে। এর মধ্যে তাড়াশে ৪৩৯, উল্লাপাড়ায় ২০৪, কাজিপুরে ৫, বেলকুচিতে ৫, কামারখন্দে ৪, রায়গঞ্জে, শাহজাদপুরে ১ ও সদরে ৬ হেক্টর জমিতে খিরা চাষ হয়েছে। এর মধ্যে তাড়াশ উপজেলায় সবচেয়ে বেশি চাষাবাদ হয়েছে। অনুরূপ দাম পাওয়া গেলে এক বিঘা জমির খিরা ৫৫ থেকে ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি করা যাবে।

অল্প খরচে বেশি লাভের আশায় কৃষকেরা বেশি আগ্রহী হয়ে উঠছেন খিরা চাষে। খিরার বড় হাট এখন লাহিড়ী মোহনপুর ইউনিয়নের চরবর্ধনগাছা। এখানে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খিরা বেচাকেনা চলে। সপ্তাহে ৭ দিনই বসে এই হাট। চাষিরা ৯শ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত প্রতিমণ খিরা বিক্রি করছেন। বিক্রির জন্য কৃষকদের দিতে হয় না কোনো খাজনা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার তাড়াশ উপজেলার কোহিত, সড়াবাড়ি, তালম সাতপাড়া, সাচানদিঘি, সান্দুরিয়া, খোসালপুর, বারুহাস, নামো সিলট, দিঘুরিয়া, দিয়ারপাড়া, খাসপাড়া, তেঁতুলিয়া, ক্ষীরপোতা, বরগ্রাম গ্রামের বিশাল সবুজে সমারোহ মাঠের পর মাঠ খিরার আবাদ হয়েছে। খিরার বিক্রি করার জন্য দিঘরীয়া এলাকায় মৌসুমি ব্যবসায়ীরা গড়ে তুলেছে আড়ত। প্রতিদিন ভোর থেকে বিভিন্ন গ্রামের কৃষকরা খিরা আড়তে আনতে শুরু করেন। আর আড়ত থেকে জেলাসহ বিভিন্ন জেলার পাইকাররা খিরা কিনতে আসেন। প্রতিদিন শত শত মেট্রিক টন খিরা বেচাকেনা হচ্ছে। দুপুরের পর শুরু হয় ট্রাক লোড। পরে ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ট্রাকে চলে যায়। এবার এ আড়তগুলো থেকে প্রতিদিন প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ টন খিরা যাচ্ছে ঢাকায়।

দিয়ারপাড়া গ্রামের খিরাচাষি করিম হোসেন বলেন, গত মৌসুমে ৬ বিঘা জমিতে খিরা চাষ করেছিলাম। আবহাওয়ার কারণে খুব একটা লাভের মুখ দেখিনি। এবার ১০ বিঘা জমিতে চাষ করেছি। ফলনও বাম্পার হয়েছে। দামটাও খুব ভালো পেয়েছি।

বারুহাস ইউনিয়নের দিঘড়িয়া গ্রামের বর্গাচাষি ক্ষুদ্র কৃষক ফজর আলী বলেন, গত বছর ১৫ শতাংশ জমির খিরা বিক্রি করে বেশ লাভ হয়েছিল। এবারও ২৫ শতাংশ জমি বর্গা নিয়ে খিরার চাষ করেছি। ফলন খুবই ভালো হয়েছে এবং দামও ভালো পাচ্ছি।

সান্দ্রা গ্রামের কৃষক হোসেন আলী বলেন, আমি তিন বছর ধরে খিরার চাষ করে আসছি। আগে এই আবাদ কম হতো। কিন্তু অন্যান্য ফসলের চেয়ে খিরা চাষে অধিক লাভের কারণে প্রতি বছর কৃষকের আগ্রহ বাড়ছে।

উল্লাপাড়ার চলনবিল গ্রামের কৃষক আক্কাস আলী বলেন, প্রতি বছর আমি ধান ও সরিষা চাষ করি। এবার আড়াই বিঘা জমিতে খিরা চাষ করেছি। প্রতি বিঘায় ১০০ থেকে ১২০ মণ ফলন হয়েছে। বর্তমান বাজারে খিরা ৯শ থেকে ১ হাজার টাকায় প্রতিমণ বিক্রি হচ্ছে। বাজার দর এ রকম থাকলে আড়াই বিঘা জমিতে প্রায় ৪০ হাজার টাকা লাভ হবে।

এ বিষয়ে আড়তদার ফজলুল করিম বলেন, গত বারের তুলনায় এবার খিরার দ্বিগুণ আমদানি হয়েছে। ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত খিরায় আড়ত ভরে যায়। চাহিদাও বেড়েছে, দামও ভালো। এক বস্তা খিরার দাম ৯শ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই খিরা জেলাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা এসে কিনে ট্রাক লোড করে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাচ্ছে।

ঢাকা থেকে আসা পাইকার আলতাব ও সোহরাব আলী বলেন, খিরার প্রচুর আমদানি হয়েছে, কিন্তু দাম কমেনি। তবুও এক ট্রাক কিনেছি। ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (উপপরিচালক) বাবলু কুমার সূত্রধর বলেন, জেলার ফসলি জমিতে খিরা চাষের জন্য উপযোগী। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে সার্বক্ষণিক কৃষকদের খিরা চাষে উৎসাহ ও পরার্মশ দিয়ে সহযোগিতা করে আসছেন। চলতি মৌসুমে জেলায় ৬৬৬ হেক্টর জমিতে খিরা চাষ করা হয়েছে। যা গত বছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭৫ হেক্টর বেশি চাষ হয়েছে বলে তিনি জানান।