‘সুপারি অঞ্চল’ খ্যাত জেলা ঝালকাঠি। এ জেলার ৪৭১টি গ্রামে রয়েছে সুপারি বাগান। এ বছর আবহাওয়া অনুক‚লে থাকায় ৫৪টি গ্রামে সুপারির বাম্পার ফলন হয়েছে। এসব সুপারি জেলার চাহিদা মিটিয়ে পাঠানো হচ্ছে দেশের নানা প্রান্তে। একই সঙ্গে রপ্তানিও হচ্ছে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় দাম কম হওয়ায় হতাশ চাষিরা।
জানা গেছে, সদর উপজেলার ছত্রকান্দা, রাজাপুরের বাদুরতলা, সাতুরিয়ার লেববুনিয়াসহ জেলার ৮৯টি সাপ্তাহিক হাটে জেলা ও জেলার বাইরে থেকে ভিড় জমাচ্ছেন শত শত কৃষক ও পাইকার। কেনাবেচা হচ্ছে কোটি টাকার সুপারি। এসব সুপারি ভারত, চীন, থাইল্যান্ডে রপ্তানি হয়। যশোর ও বেনাপোলের কিছু ব্যবসায়ী ঝালকাঠি থেকে সুপারি কিনে তা ভারতে এবং চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা চীন ও থাইল্যান্ডে রপ্তানি করেন।
রাজাপুর উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ বছর রাজাপুর উপজেলার ৫৪টি গ্রামের ৩০০ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা সুপারির বাগানে বাম্পার ফলন হয়েছে। অনেকে আবার বাড়ির পাশে সুপারিগাছ লাগিয়েও ভালো ফলন পেয়েছে। এক যুগের মধ্যে এবার সবচেয়ে বেশি ফলন হয়েছে। তবে বর্তমানে স্থানীয় বাজারগুলোতে সুপারির দামও ভালো না থাকায় সুপারিবাগান মালিকরা হতাশায় ভুগছেন।
বাজারগুলোতে স্থানীয় হিসাব অনুযায়ী প্রতি কুড়ি (২১০টি সুপারিতে এক কুড়ি) সুপারি ২২০ থেকে ২৪০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে রাজাপুরের সুপারির সুখ্যাতি থাকায় পাইকারদের হাত ঘুরে বড় জাতের সুপারি দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে।
রাজাপুরের চাড়াখালি এলাকার সুপারির বাগান মালিক কিসমত ফরাজী বলেন, গত কয়েক বছরের চেয়ে এ বছর ফলন হয়েছে তিনগুণ। আর সুপারির আকারও হয়েছে অনেক বড়। দাম কম হলেও এ বছর আমি লক্ষাধিক টাকার সুপারি বিক্রি করতে পারব বলে আশা করছি।
একই গ্রামের রাসেল বেপারী বলেন, ‘আমার দুই একর জমিতে সুপারির বাগান রয়েছে। এ বছর সুপারির ফলন ভালো হয়েছে। কোনো পোকার আক্রমণও নেই। আমি এরই মধ্যে দুই লাখ টাকার সুপারি বিক্রি করেছি। বাগানে আরও সুপারি রয়েছে। বর্তমানে যে বাজারদর চলছে তা সন্তোষজনক না। এ বছর সুপারির দাম তুলনামূলক অনেক কম।’
রাজাপুরের বাঘরি বাজারে ভ্যানগাড়িতে করে সুপারি নিয়ে আসা মো. হাসান জানান, এক ভ্যানগাড়ি সুপারি এক হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। এগুলো পাইকাররা কিনে ঢাকা, খুলনা ও চট্টগ্রামের বাজারে বিক্রি করেন।
চট্টগ্রাম থেকে সুপারি কিনতে আসা পাইকার গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘আমরা এখান থেকে সুপারি কিনে ট্রাকযোগে চট্টগ্রাম নিয়ে যাই। সেখানে গিয়ে আড়তে সুপারির আকার নির্ধারণ করে বড় সাইজগুলো বিদেশে রপ্তানির জন্য মজুত করি এবং বাকিগুলো দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চালান করছি।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘এ বছর আবহাওয়া ও বৃষ্টিপাত সুপারি চাষের অনুক‚ল হওয়ায় এ অঞ্চলে ফলন ভালো হয়েছে, যা দেখে এলাকার মানুষ সুপারি চাষে আরও উৎসাহী হচ্ছে। সুপারিবাগান মালিকরা প্রতি বছরই সুপারি বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন। সুপারির ফলন বেশি হওয়ায় বাজার দর একটু কম আছে। জেলায় চলতি মৌসুমে ৭০০ হেক্টর জমিতে সুপারির আবাদ হয়েছে। লাভজনক বিধায় এ ফসলটি গ্রামীণ অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখছে।