সুস্থ ও মেধাবী জাতি গড়ার স্বার্থে প্রতিদিন ডিম খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ এমপি।
এদিকে ডিমকে একটি পরিপূর্ণ খাদ্য হিসেবে আখ্যায়িত করে পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা বলেছেন অপুষ্টি দূর করতে ডিম কার্যকর ভূমিকা রেখেছে। আজ ‘বিশ্ব ডিম দিবস’ উদযাপন উপলক্ষে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) আয়োজিত আলোচনা সভায় ডিমকে সবচেয়ে সাশ্রয়ী মূল্যের প্রাণিজ আমিষ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
অপুষ্টি দূর করার ক্ষেত্রে সরকারের সফলতার কথা উল্লেখ করে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি নারায়ণ চন্দ্র চন্দ এমপি বলেন, শিশুদের খর্বাকৃতি হওয়া এবং ওজন কমে যাওয়ার হার কমিয়ে আনা, পলিসি রিভিউ এবং নিউট্রিশন স্পেশিফিক ও নিউট্রিশন সেনসিটিভ ইন্টারভেনশন, সেফটি নেট প্রোগ্রাম চালু করাসহ যে সকল প্রতিশ্রুতি সরকার দিয়েছিল তার বেশিরভাগই পূরণ হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, যারা ডিম কম খাচ্ছেন তাদের বলব-পরিমাণ বাড়ান। আর সবাইকে বলব প্রতিদিন ডিম খান। ডিমের ফারদার প্রসেসিং শুরু করার জন্যও উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, নকল ডিম নিয়ে প্রচারণার কোন ভিত্তি নেই।
প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাকসুদুল হাসান খান বলেন, সব বয়সী মানুষের জন্যই ডিম একটি দরকারি খাদ্য।
তিনি বলেন, ডিমের মাথাপিছু কনজাম্পশন ১০৪টিতে উন্নীত করার লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মো. আইনুল হক বলেন, দেশের প্রতিটি পরিবারের পুষ্টি নিরাপত্তার লক্ষ্যে হাঁস-মুরগি ও গরু-ছাগল পালনকে উৎসাহিত করতে বেশকিছু প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, দাম এবং পুষ্টিগুণ বিবেচনায় বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবীতেই ডিমের চাহিদা বাড়ছে। তবে ২০২১ সালের চাহিদা পূরণ করতে হলে ডিমের উৎপাদন দ্বিগুণ করতে হবে।
বিপিআইসিসি’র সভাপতি মসিউর রহমান বলেন, ডিম ও পোল্ট্রি মুরগির মাংস নিয়ে ভোক্তাদের মাঝে অনেক ভুল ধারণা আছে, এগুলো দূর করতে এবং ইতিবাচক প্রচারণা বাড়াতে গণমাধ্যমের সহায়তা প্রয়োজন।
একাজে তিনি তথ্য মন্ত্রণালয়কে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। একইসাথে সরকারের স্কুল ফিডিং প্রোগ্রামে সেদ্ধ ডিম দেয়ার জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানান।
মসিউর বলেন, তৃণমূল খামারিদের রক্ষায় সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে, তাদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। শুধু মুখে বললে হবে না, প্রাণিসম্পদের মাঠ পর্যায়ের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারিকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে হবে। নিয়ম মেনে খামার না করলে প্রয়োজনে শাস্তির ব্যবস্থাও করতে হবে।
বাংলাদেশ ব্রেস্ট ফিডিং ফাউন্ডেশনের ট্রাস্ট্রি বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. এসকে রায় বলেন, গর্ভবতী মায়েদের জন্য ডিম একটি আদর্শ খাদ্য। মাত্র দু’টি ডিম একজন নারীর দৈনন্দিন প্রোটিন চাহিদার চার ভাগের এক ভাগ পূরণ করতে পারে।
তিনি বলেন, ডিমের কোলেস্টেরল সম্পর্কে যা বলা হয় তা সঠিক নয়। ডিমের কোলেস্টেরল ক্ষতিকর তো নয়ই বরং উপকারি। ডিমে যে চর্বি থাকে তার তিন চতুর্থাংশই হার্ট এবং রক্তনালীর জন্য উপকারি অসম্পৃক্ত চর্বি। অবশিষ্ট যে পরিমাণ সম্পৃক্ত চর্বি থাকে সেটিও ক্ষতিকর নয়।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পোল্ট্রি সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শওকত আলী বলেন, ডিম উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক ও টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায় এবং বার্ধক্যজনিত অন্ধত্ব প্রতিরোধ করে। শুধু তাই নয়, শর্করা কমিয়ে প্রতিদিন ডিম খেলে, মাসে ৩ পাউন্ড পর্যন্ত ওজন কমানো সম্ভব!
এনিমেল হেলথ কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি একেএম আলমগীর বলেন, প্রাণিজ আমিষের উৎসগুলোর মধ্যে ডিমের দাম সবচেয়ে কম। ডিমের প্রোটিন কোয়ালিটি এতটাই উন্নত যে, অন্যান্য খাদ্যের প্রোটিন কোয়ালিটি নির্ধারণ করার জন্যও ডিমের সাথে তুলনা করা হয়।
আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়- বিশ্ব ডিম দিবস উপলক্ষে সবক’টি বিভাগীয় শহরে পোল্ট্রি শোভাযাত্রা এবং আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। জেলা শহরগুলোতেও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় ডিম দিবস পালিত হচ্ছে। দরিদ্র জনগোষ্ঠী ও অনাথ শিশুদের মাঝে এক লাখ ডিম বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। ঢাকায় এসওএস শিশু পল্লী, স্যার সলিমুল্লাহ এতিমখানা এবং ঢাকা অরফানেজ সোসাইটি’র শিশুদের জন্য বিনামূল্যে ডিম দেয়া হয়েছে। দেশের ৬৪টি জেলায় এক লাখ পোস্টার লাগানো হয়েছে। এর পাশাপাশি ৫০ লাখ মোবাইল ফোন ব্যবহারকারির কাছে ডিম দিবসের বার্তা পৌঁছে দেয়া হয়েছে।
শুক্রবার সকালে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি মানিক মিয়া এভিন্যু হয়ে কৃষিবিদ প্রাঙ্গণে এসে শেষ হয়।
বিশ্ব ডিম দিবস উপলক্ষে কৃষিবিদ প্রাঙ্গণে সকাল ১০টা থেকে প্রতিটি ডিম ভর্তুকি মূল্যে মাত্র ৩ টাকায় বিক্রি শুরু হয়। ৫০ হাজার ডিম বিক্রির আগাম ঘোষণা দেয়া হলেও সাধারণ মানুষের আগ্রহের বিষয়টি উপলব্ধি করে ১ লাখ ডিম বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়। সকাল ৭টার দিক থেকে মানুষ কৃষিবিদের সামনে আসতে শুরু করে এবং ৮টার মধ্যেই কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটের এলাকা ছাড়িয়ে বহু দূর পর্যন্ত মানুষকে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। উদ্যোক্তাদের চেষ্টা ছিল সবাই যাতে ডিম নিয়ে ফিরতে পারেন। কিন্তু ডিম পাব কি পাব না এই আশংকায় উৎসুক মানুষের মাঝে উৎকণ্ঠা থেকে বিশৃঙ্খলা শুরু হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকা পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে হস্তক্ষেপ করেন। ফলে উদ্যোক্তারা ডিম দেয়া সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেন।
এ প্রসঙ্গে বিপিআইসিসি’র সভাপতি মসিউর রহমান বলেন, ডিম দিবস উপলক্ষে আমরা সাধারণ মানুষকে একটি বার্তাই দিতে চেয়েছি- তা হলো ডিম একটি পুষ্টিকর খাদ্য এবং সকলেরই ডিম খাওয়া দরকার। আমরা চেয়েছিলাম সাধারনণ মানুষ, বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষেরা যেন কম দামে পরিবারের জন্য এক মাসের ডিম কিনে নিয়ে যেতে পারেন। সেজন্যই সর্বোচ্চ ৯০টি ডিম দেয়ার সিদ্ধান্ত। কিন্তু বিশৃঙ্খলার কারণে সেটি আজ সম্ভব হয়নি। তবে আমাদের সিদ্ধান্তে আমরা বহাল আছি। পরবর্তীতে আলোচনা সাপেক্ষে হ্রাসকৃত মূল্যে বিক্রির ব্যবস্থা করা হবে।
দিনাজপুরের রামসাগর দিঘিতে মাছ শিকার উৎসব
কৃষিবিদ সিরাজুলের শাকসবজি বা ফলমূল বিষমুক্ত করার যন্ত্র উদ্ভাবন
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/এম