সৈয়দপুরে ঝুট কাপড়ে হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য

100

উত্তরের বাণিজ্যিক শহর নীলফামারীর সৈয়দপুরে গড়ে উঠেছে ঝুট কাপড়ের ছোট-বড় কয়েকশ কারখানা। ঝুট কাপড় দিয়ে তৈরি নানা ধরনের পোশাক স্থানীয় বাজারের গণ্ডি ছাড়িয়ে ভারত, নেপাল, ভুটানসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। দামে কম ও মানে ভালো হওয়ায় এখানকার পোশাকের চাহিদা বাড়ছে। আর এই শিল্পকে ঘিরে কর্মসংস্থান হয়েছে হাজারো মানুষের। তবে কারখানা গড়ে তোলার মতো পর্যাপ্ত স্থান না থাকা ও পুঁজি সংকটের মতো প্রতিবন্ধকতাও রয়েছে। রপ্তানির বাজার সম্প্রসারণসহ আরও কিছু উদ্যোগ নেয়া গেলে এই শিল্প অনেক বেশি সম্ভাবনাময় হয়ে উঠবে আশা করছেন উদ্যোক্তারা। খবর: ঢাকা পোস্ট।

সৈয়দপুর শহরের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলে কানে আসবে মেশিনের শব্দ। এসব কারখানায় তৈরি হচ্ছে প্যান্ট, হাফপ্যান্ট, থ্রিপিস, থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্ট, শার্ট, জ্যাকেটসহ বিভিন্ন পোশাক। স্থানীয় কারিগররাই এসব পোশাকে জুড়ে দিচ্ছেন আকর্ষণীয় সব ডিজাইন। এসব পোশাক বেচাকেনার জন্য রয়েছে নির্দিষ্ট মার্কেট।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ঝুট কাপড় থেকে ব্যবহার-উপযোগী পোশাক তৈরির কর্মযজ্ঞ চলছে এইচ আর গার্মেন্টস নামে একটি পোশাক কারখানায়। বছরজুড়েই নানা ধরনের পোশাক তৈরি করেন কারিগররা। তাদের একজন আব্দুল কাদের। প্রশিক্ষণ না থাকলেও প্রথমে শ্রমিক হিসেবে কাজ শিখে এখন হয়েছেন কারিগর। প্রতিদিন ঝুট কাপড় দিয়ে তৈরি করছেন আট থেকে ১০টি জ্যাকেট।

কারিগর আব্দুল কাদের বলেন, আমার এলাকার এক মামার কাছে কাজটা দেখে শিখেছি। এখন কাজ করছি। শীতকালে জ্যাকেট ও টাউজার তৈরি করি, আর গ্রীষ্মকালে ফুলপ্যান্ট ও থ্রি-কোয়ার্টার তৈরি করি। এভাবে মোটামুটি দিন ভালো যাচ্ছে।

সৈয়দপুরে ছোট-বড় মিলিয়ে গড়ে উঠেছে ৪০০-৫০০ গার্মেন্ট কারখানা। আর এসব কারখানায় কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার শ্রমিক-কারিগরের। ঢাকা থেকে কেজিপ্রতি ঝুট কাপড়সহ নানা উপকরণ সংগ্রহ করেন গার্মেন্ট মালিকরা। এরপর চাহিদা অনুযায়ী তৈরি করেন পোশাক। জ্যাকেট ছাড়াও তৈরি হচ্ছে টি-শার্ট, হুডি ও প্যান্ট। দেশের বাজার ছাড়াও এখানকার তৈরি পোশাক রপ্তানি হচ্ছে ভারত, নেপাল ও ভুটানে। এমনকি হাত বদল হয়ে ভারত থেকে এসব পণ্য রপ্তানি হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যেও। প্রতি বছর শুধু তৈরি পেশাক থেকেই সৈয়দপুরের রপ্তানি বাজার প্রায় ২৩ লাখ ডলার আর দেশের বাজার অন্তত ২০০ কোটি টাকা।

ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে রপ্তানির ক্ষেত্রে সোনামসজিদ, সোনাহাট ও বুড়িমারী এই তিন স্থলবন্দর ব্যবহার করছেন তারা। তবে চিলাহাটি স্থলবন্দরের কার্যক্রম চালু করা গেলে খরচ অনেক কমে আসবে।

এইচ আর গার্মেন্টসের ম্যানেজার মো. সুজন আলী বলেন, আমাদের পণ্যগুলো বিশেষ করে সোনাহাট, সোনামসজিদ ও বেনাপোল স্থলবন্দরে দিয়ে পাঠানো হয়। এতে খরচ বেশি পড়ে যায়। পাশে আমাদের একটা স্থলবন্দর আছে চিলাহাটি। যদি এই বন্দরটা চালু থাকত তাহলে আরও খরচ কম পড়ত। এটা যাতে দ্রুত চালু করা হয়, সেজন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানাচ্ছি।

তবে এই শিল্পকে ঘিরে একটি আলাদা গার্মেন্ট পল্লি করার দাবি দীর্ঘদিনের। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিল্পের উন্নয়নে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতাসহ ব্যাংকিং সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করতে পারলে দ্রুত এই শিল্পের প্রসার ঘটবে এবং দেশীয় প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে।

রপ্তানিমুখী ক্ষুদ্র গার্মেন্ট মালিক সমিতির সহসভাপতি আরশাদ আমির পাপ্পু বলেন, সারা সৈয়দপুরের মধ্যে পাঁচশ’র বেশি কারখানা ও পাঁচ হাজারের বেশি শ্রমিক খাটছে। এটা যদি এক জায়গায় একটা গার্মেন্ট পল্লি হয়, তাহলে সবার সুবিধা হবে।

নীলফামারী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি প্রকৌশলী এসএম শফিকুল আলম ডাবলু বলেন, সরকারি ও ব্যাংকিং পৃষ্ঠপোষকতা বাড়িয়ে যদি এসব কারখানাকে একত্রে এক জায়গায় বসিয়ে দিয়ে একটা গার্মেন্ট পল্লি তৈরি করা যায়, তাহলে এটা সমৃদ্ধ হবে।