সোনাগাজীতে ৫৭০ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ

158

ফেনীর সোনাগাজীর উপকূলীয় চরাঞ্চলে চলতি মৌসুমে ৫৭০ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন ফল তরমুজ চাষ করা হয়েছে । সোনাগাজী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন মজুমদার জানিয়েছেন এ হতে কৃষকের আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫০ কোটি টাকা। তিনি আরো জানান, গত মৌসুমে ২৬ কোটি টাকার তরমুজ বিক্রি করা হয়েছিল।

সোনাগাজীতে তরমুজ চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা। গত বছরগুলোতে তরমুজে ব্যাপক লাভ হওয়ায় এবার আবাদ আরও বেড়েছে। মাঠে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা।

কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, নভেম্বর শেষ থেকে তরমুজ চাষের মৌসুম শুরু হয়। তবে ব্যাপক চাহিদা তৈরি হওয়ায় জমির ইজারামূল্যও কয়েক গুণ বেড়ে গেছে।

সোনাগাজী উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়ন, চরচান্দিয়া, চরদরবেশ ইউনিয়ন, সোনাগাজী সদর ইউনিয়ন, আমিরাবাদ ইউনিয়নের ১০টি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, এখন তরমুজ আবাদের মহাযজ্ঞ চলছে। চাষিদের ব্যস্ততায় ক্ষেত ঘিরে প্রাণচাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। অনেক মাঠেই বীজ রোপণ হয়ে গেছে। বেশির ভাগ জায়গায় জমি প্রস্তুতির শেষ পর্যায়ের কাজ চলছে। দু-এক জায়গায় আবার চারা বাড়তে শুরু করেছে। সার, পানি ছিটানো আর বীজ রোপণে ব্যস্ত সময় পার হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলাতে ৫৭০ হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছর চাষাবাদ হয়েছে ৩৪৫ হেক্টর জমিতে ও ২০২১ সালে ১১৭ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। ক্রমান্বয়ে চাষাবাদের পরিমাণ বাড়ছে।

সোনাগাজী দক্ষিণ চরদরবেশের কৃষক মাইন উদ্দিন জানান, গত বছর ৯ একর জমির তরমুজ বিক্রি করে ১১ লাখ টাকা পেয়েছেন। এ বছর আবাদের পরিমাণ বাড়িয়ে ১৫ একর জমিতে ঠেকেছে। তিনি বলেন, দাম থাকলে তরমুজে ব্যাপক লাভ। এবার মানুষ তরমুজের পেছনে উঠেপড়ে লেগেছে। কোথাও কোনো জমি ফাঁকা থাকছে না।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আমন ধানের বীজ বোনা থেকে শুরু করে ফসল ঘরে তুলতে ৬ মাস সময় লাগে। প্রতি বিঘা আমন উৎপাদনে ১০-১২ হাজার টাকা খরচ হয়। এক বিঘা জমির ধান বিক্রি হয় সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকায়। সে ক্ষেত্রে প্রতি বিঘায় আমন আবাদে লাভ হয় সর্বোচ্চ ৮-৯ হাজার টাকা। অন্যদিকে তরমুজে ফল সংগ্রহ পর্যন্ত সময় লাগে সর্বোচ্চ আড়াই মাস। প্রতি বিঘায় খরচ হয় ১৪-১৫ হাজার টাকা। এতে তরমুজ বিক্রি হয় ৫০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকায়। যদিও এবার খরচ কিছুটা বাড়বে।

আমিরাবাদ ইউনিয়নের ইউপি সদস্য শামীম জানান, এ মৌসুমে আমরা ১৪ জন মিলে ১৫০ একর জমিতে তরমুজ চাষ শুরু করেছি। জমির মালিকদের কাছ থেকে ৩ মাসের জন্য শতক প্রতি ১০০ টাকা করে লিজ নেই। পুরো জমিই এক ক্ষেত। ১ কোটি ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে আমরা এ চাষাবাদ শুরু করেছি।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র নাথ জানান, ১ বিঘা জমি পরিমাণ প্রদর্শনী বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া অন্য কোন সুবিধা আমাদের না থাকায় দেওয়া সম্ভব হয়নি।

সোনাগাজী অঞ্চলের তরমুজ যাচ্ছে বিভিন্ন জেলায়। সোনাগাজী তরমুজ চাষি সলিম ও জহির জানান, এখান থেকে তরমুজ সরাসরি ফেনী শহর, চট্টগ্রামের ফলমন্ডি, ফিরিঙ্গী বাজার, চকরিয়া, পটিয়া, সাতকানিয়া যায়। সেখানকার আড়তদাররা আমাদের সাথে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়। তারা বলেন, আমরা নোয়াখালীর সুবর্ণচরের বাসিন্দা, এ এলাকায় দীর্ঘ ৩-৪ বছর তরমুজ আবাদ করে আসছি।