প্রবাসে থাকা মানুষটির মনে স্বপ্ন ছির ফলের বাগান করার। তাই তো দেশে এসে মনের সেই লালিত সপ্ন পূরন করেন আজিম উদ্দিন ভূঁইয়া। ৪ বছর প্রবাসী থাকাকালীন টেলিভিশন ও ইউটিউবে শাইখ সিরাজের কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন অনুষ্ঠান দেখতেন। সেই থেকেই কৃষির প্রতি ভালোবাসার সৃষ্টি, ইচ্ছে হয় দেশে ফিরে গড়ে তুলবেন আদর্শ ফলের বাগান।
যেই চিন্তা সেই কাজ, আজিম উদ্দিন ভূঁইয়া ফিরে এলেন দেশে গড়ে তুললেন স্বপ্নের বাগান। ঢাকার শহরে কসমেটিক্স ব্যবসা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করা তরুন যুবক লক্ষ্মীপুর পৌরসভার বাসিন্দা শাহ নেওয়াজ ভূঁইয়ার ছেলে। দেশে ফিরে প্রায় সাড়ে ৮ একর জমির ওপর গড়ে তোলেন ফলের বাগান। এখন তিনি পুরোদস্তুর একজন ফল চাষি।
আজিম ২০১৭ সালে রায়পুর উপজেলার দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের পূর্ব হাজিমারা গ্রামে সাড়ে ৮ একর জমি দশ বছরের জন্য ইজারা নেন। এ জমিতে তিনি ‘ভূঁইয়া ফ্রুটস গার্ডেন’ নামে একটি ফলের বাগান গড়ে তোলেন। যদিও স্থানীয়দের কাছে এটি ‘মাল্টা বাগান’ বলে পরিচিত। বর্তমানে এ বাগানে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার ফলের গাছ রয়েছে।
এর মধ্যে বারী-ওয়ান জাতের ১৫শ মাল্টা গাছ, থাই জাতের ২৫শ পেয়ারা গাছ, হিম সাগর জাতের এক হাজারটি আম গাছ এবং আপেল ও নারকেলি জাতের ৫শ বরই গাছ রয়েছে। আজিমের ফলের বাগানে দুইজন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করছেন। বাগান করার শুরুতে রাজশাহী থেকে এসব ফল গাছের কলম সংগ্রহ করেছিলেন আজিম।
ইতোমধ্যে এসব গাছ থেকে ফল আহরণ শুরু হয়েছে। যা স্থানীয় বাজারগুলোতে সরবরাহ করা হচ্ছে। ফলগুলো সু-স্বাদু হওয়ায় এর চাহিদা দিনদিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৭ সালে এসএসসি পাশ করার পর পড়ালেখা আর এগোয়নি এই তরুণ উদ্যোক্তা আজিমের। তখন মায়ের কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে রাজধানীতে পাড়ি জমান আজিম। সেখানে তিনি প্রায় ৩ বছর কসমেটিক্স ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এরপর ২০১০ সালে পরিবারের ইচ্ছায় দুবাই যান। মাত্র এক বছর পরই দেশে ফিরে আসেন। পরে ২০১৩ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় যাওয়ার সৌভাগ্য হয় তার। সেখানে তিন বছর প্রবাস জীবন কাটান।
এ সময় টেলিভিশন ও ইন্টারনেটের বদৌলতে শাইখ সিরাজের কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন অনুষ্ঠান দেখতেন আজিম। এভাবেই তিনি কৃষি কাজের প্রতি আকৃষ্ট হন। তখন থেকেই ফলের বাগান তৈরির স্বপ্ন তার। ২০১৬ সালে দেশে ফিরে নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ শুরু করেন আজিম। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালে সাড়ে ৮ একর জমির ওপর গড়ে তোলেন বিশাল এক ফলের বাগান। কোনো প্রশিক্ষণ ছাড়াই কেবলমাত্র ইন্টারনেটের মাধ্যমে ফলের বাগান তৈরির ধারণা নিয়ে এ উদ্যোগ নেন তিনি।
আজিম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, বিদেশের মাটিতে বসে আমি যে স্বপ্ন দেখেছি তা অনেকটাই বাস্তবায়িত হয়েছে। ইতোমধ্যে আমার বাগানের গাছগুলো থেকে ফল আহরণ শুরু হয়েছে। যদিও এবছর উৎপাদিত ফলের পরিমাণ স্বল্প। তবে আমি আশাবাদী, সব ঠিক থাকলে আগামী বছরগুলোতে ভালো ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, প্রথম বছর বাগানে শুধুমাত্র মাল্টা গাছের তিন হাজার কলম লাগাই। আমার অনভিজ্ঞতা ও সার-কীটনাশক ব্যবহারে অদক্ষতার কারণে সবগুলো গাছই মারা যায়। পরবর্তীতে মাল্টা, আম, বরই ও পেয়ারা গাছ লাগাই। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত আমার প্রায় ৪০ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. বেলাল হোসেন খাঁন বলেন, এ অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া ফল চাষের জন্য খুবই উপযোগী। এখানে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ নিয়ে পরিকল্পিতভাবে ফলের বাগান করে লাভবান হওয়া সম্ভব। বর্তমানে দেশে উৎপাদিত ফলের চাহিদা বেড়েছে। যে কারণে ফল চাষ খুবই লাভজনক বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ফার্মসএন্ডফার্মার২৪/জেডএইচ