গিফট জাতের তেলাপিয়া দেশে বিদ্যমান অন্যান্য তেলাপিয়ার চেয়ে ইতোমধ্যে শতকরা ৫০-৬০ ভাগ উৎপাদনশীল বলে এটি নিঃসন্দেহে পোনা উৎপাদন ও চাষের জন্য একটি উৎকৃষ্ট জাত। তবে তেলাপিয়া মাছ চাষে অসুবিধা হলো এ প্রজাতির মাছ পুকুরে ডিম দিয়ে বাচ্চা উৎপাদন করে ফলে পুকুরে পোনার আধিপাত্য দেখা যায় এবং মাছের উৎপাদন কম হয়। এ সমস্যা হতে উত্তোরণের জন্য পুকুরে মনোসেক্স তেলাপিয়ার চাষ করতে হবে। এখানে উল্লেখ্য যে, পুরুষ তেলাপিয়ার বৃদ্ধির হার স্ত্রী তেলাপিয়া অপেক্ষা ৩০% বেশী।
তেলাপিয়া চাষের সুবিধা:
- উচ্চ ফলনশীল মাছ।
- পুকুরে ১ মিটার গভীরতায় ২-৪ মাসেই বিপণনযোগ্য হয়।
- চার মাস অন্তর অন্তর বছরে কমপক্ষে তিনটি ফলন চক্র তোলা অনায়াসেই সম্ভব।
- যে কোন খাবার এরা পছন্দ করে।
- সহজে রোগাক্রান্ত হয় না।
তেলাপিয়া চাষের জন্য উপযোগী মাটি ও পানি:
পুকুরের পানিতে গুনাগুন নির্ভর করে মাটির গুনাগুন, পারিপার্শ্বিক অবস্থা, জলবায়ু ও ভৌগলিক অবস্থানের উপর।
- পুকুরের মাটিতে পর্যাপ্ত কাদা থাকতে হবে। কর্দমাক্ত মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমান বেশি থাকে। এই জৈব পদার্থ প্লাংকটন জন্মের সহায়ক।
- পুকুর নির্বাচনের পূর্বে অবশ্যই মাটির গুনাগুন পরীক্ষা করতে হবে। অম্ল মাটি বা দুর্গন্ধযুক্ত এটেল মাটি কখনই মাছ চাষের জন্য উপযুক্ত নয়। কারন এ ধরনের পুকুরে কখনই মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য জন্মায় না।
- পুকুরে পানির গভীরতা কমপক্ষে ১.৫ মিটার থেকে ৩ মিটার পর্যন্ত হতে পারে। দুই মিটার গভীরতা মাছ চাষের জন্য উত্তম।
- পানির স্বচ্ছতা ২৫-৩৫ সেন্টিমিটার হলে পুকুরের উৎপাদন ক্ষমতা বেশি হয়।
গিফট তেলাপিয়ার খাদ্য প্রস্তুত, সংরক্ষণ ও প্রয়োগ পদ্ধতি:
গিফট তেলাপিয়া চাষের ক্ষেত্রে ভাল পেতে হলে আমিষ সমৃদ্ধ খাবার সরবরাহ করতে হয়। আকারভেদে এ মাছের আমিষ চাহিদা ৩০-৩৫%। যেহেতু তেলাপিয়া সর্বভুক সেহেতু এরা যে কোন প্রকার খাদ্য খেতে অভ্যস্থ। সহজলভ্য প্রচলিত যে কোন খাদ্য উপাদান যেমন- চালের কুঁড়া, গমের ভুষি, সরিসার খৈল, ফিশমিল গিফট তেলাপিয়ার খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়। চাষকালীন সময়ে গিফট তেলাপিয়ার রেণু পোনারচেয়ে তুলনামুলকভাবে কম আমিষ সমৃদ্ধ খাদ্যের প্রয়োজন হয়। এ পর্যায়ে অপেক্ষাকৃত বেশী উৎপাদন পাওয়ার লক্ষ্যে মজুদ পুকুরে ২৫% আমিষ সমৃদ্ধ খাদ্য প্রয়োগ ভাল ফলন পাওয়া যায়। চলবে…..