হাঁসের ডিমে ভাগ্য বদল যশোরের মহব্বতের

142

ভাগ্য বদলের জন্য মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমিয়েছিলেন যশোরের রায়পুরের মহব্বত আলী। কয়েক বছর সেখানে কাজ করেও ঘোরেনি ভাগ্যের চাকা। বছর দশেক আগে তিনি মালয়েশিয়ায় প্রবাস জীবন কাটিয়ে দেশে ফিরে আসেন। এর পর থেকে অনেকটা বেকার হয়ে পড়েন। বিদেশে উপার্জিত টাকাও আস্তে আস্তে খরচ হয়ে যাওয়ায় দিশাহারা হয়ে পড়েন। শেষমেষ মুক্তযোদ্ধা বাবার পরামর্শে মাত্র তিন বছরেই হাঁস পালনে বদলে গেছে তার জীবন। বর্তমানে প্রতিদিন তার খামার থেকে খরচ বাদ দিয়ে আয় হয় ১০ হাজার টাকা।

যশোরের বাঘারপাড়ার রায়পুর ইউনিয়নের সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ইরাদৎ হোসেনের ছেলে মহব্বত আলীর এক খামারেই পালন করছেন চার হাজার উন্নত জাতের হাঁস। সেই হাঁসের দুই হাজার হাঁস প্রতিদিন ডিম দেয়।

মুক্তিযোদ্ধা বাবার পরামর্শে তিন বছর আগে শুরু করেন হাঁস ও মুরগির চাষ। খুলনার সরকারি হাঁস ও মুরগির খামার থেকে ৩০০ হাঁসের বাচ্চা এনে শুরু করেন হাঁসের চাষ। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে তার খামারের পরিধি। এখন তার খামারে চার হাজার জিনডিং খাসি ক্যাম্বেল জাতের হাস রয়েছে। এসব হাঁসের মধ্যে দুই হাজার হাঁস প্রতিদিন ডিম দেয়।

মহব্বত আলী বলেন, ‘কোনো সরকারি বা বেরসরকারি সংস্থার সহযোগিতা ছাড়াই তিনি এ খামার গড়ে তুলেছেন। অত্যন্ত ব্যয়বহুল এ হাঁস চাষে আমাকে পরিবারের অনেক সদস্যই নিরুৎসাহিত করেছিলেন। কিন্তু আমি সাহস নিয়ে প্রথমে অল্প পুঁজি নিয়ে এ ব্যবসা শুরু করি। এখন আমি অনেক স্বাবলম্বী।’

খামারি মহব্বত আলী বলেন, উন্নত জাতের এ হাঁস ১৮ মাস পর্যন্ত ডিম দেয়। পাঁচ মাস থেকে শুরু করে ১৮ মাস পর্যন্ত একটানা ডিম দেয়। একটি ডিম পাইকার পর্যায়ে ১৩ থেকে ১৪ টাকায় বিক্রি হয়। তবে হাঁস চাষে প্রচুর খরচ বলে তিনি জানান। প্রতিদিন প্রায় ১৫ হাজার টাকার খাবার দিতে হয়। একই সঙ্গে শ্রমিক খরচ রয়েছে।

মহ্বত আলী আরও বলেন, এক হাজার হাঁসের বাচ্চা কিনতে খরচ হয় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। এরপর প্রতিদিন তার বিপুল ধান, গম বা ভুট্টা লাগে। এর বাইরে ওষুধ খরচ আছে। ওষুধ ও খাবার বাবদ প্রতিদিন ১৫ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। পরিণত বয়সে এক জোড়া হাঁস পাইকারি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়। সব খরচ বাদ দিয়েও মাসে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা আয় করেন বলে তিনি জানান।

মহব্বত আলীর এ হাঁসের খামারকে এগিয়ে নিতে তার পরিবারের সদস্যরাও দিনরাত নিরলস পরিশ্রম করে চলেছেন। তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা ইরাদৎ হোসেন বলেন, ছেলের এ অদম্য সাহস দেখে আমরা অনুপ্রাণিত। বিদেশের মাটিতে ঘাম ঝরিয়ে টাকা এনে নিজ বাড়ির আঙিনায় এমন একটা খামার গড়ে তা কাক্সিক্ষত পর্যায়ে নিয়ে যাবে, এটা সত্যিই বিরল দৃষ্টান্ত। আমরা পরিবারের সদস্যরা তার খামারের পরিচর্য়ায় নানাভাবে সহযোগিতা করে থাকি।