হাঁস কেন পালন করব না?

387

অনেকেই বলেন হাঁসপালন নিয়ে একটি পূনাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশকরেন।তাই আজকে লিখতে বসলাম। মানুষের ধারনা হাঁস অনেক খায় তাই হাঁস পালন লাভজনক না ।আমি বলছি হাঁস অনেক খায় না, আসলে হাঁসের স্বভাব হলো সারাক্ষন খাই খাই করে ।আমিতো ওদের বেশি খাওয়ানোর জন্য কত ভিটামিন খাওয়াই তবুও খেতে পারেনা ওরা একটু বেশি খেলে ডিমটা একটু বড় হয়।যতই খাওয়ান একটা হাঁস পাঁচ টাকার বেশি খাবার খেতে পারে না আর একটা ডিম দশটাকা।ঐদিকে একটা লেয়ার মুরগি চার টাকার খাবার খেলেও ওদের ডিমের দাম ও কম।একটা মুরগির ডিম অপেক্ষা একটা হাঁসের ডিম বড় তাই খাদ্যগুন ও বেশি। হাঁস আমরা কেন পালন করব না।

খোলামেলা পদ্বতিতে হাঁস পালনে ওরা নদি,নালা, খাল,বিল,মাঠ থেকে নানা রকম পোকামাকড় শামুক ও মাছ খেয়ে ৭০%খাবার নিজেরাই জোগারকরে নেয়। হাঁসের রোগবালাই নেই বললেই চলে যাও দুটো রোগ আছে তাও সরকার নামেমাত্র মূল্যে ভ্যাকগুলো দিচ্ছে,সময় মত দিয়ে দিল আর কোন ভয় থাকেনা।অন্যদিকে মুরগির ঔষধের পেছনে বহু খরচ আছে।হাঁসের ডিম বিক্রি করতে কোন জামেলা নেই খামারে আগেই অর্ডার থাকে কারন চাহিদা অনুযায়ি উৎপাদন নাই।হাঁসের মাংস নিয়ম অনুযারি সরিষাদিয়ে রান্না করলে গরুর মাংশ হতে অনেক সুস্বাধু।শীতকালে হাঁসের মাংসের চাহিতা অনেক বেশি।হাঁসপালনের জন্য মুরগির মত রাজপ্রসাধ লাগেনা।

অল্প খরচে কাঠ,বাশ,টিন,বা খরদিয়েও দিয়ে ও হাঁসের বাসস্থান তৈরি করা যায়।একটা মুরগির বাচ্চার দাম 40থেকে100টাকা আর একটা হাঁসের বাচ্চার দাম সরকারি প্রজনন কেন্দ্রে মাত্র ১২ টাকা।হাঁস পালন করতে হলে প্রথমেই তৈরী করতে হবে বাসস্থান ও ব্রোডিং হাউজ দুইশত হাস পালতে 30ফুট বাই 14ফুট 6ফুট উচ্চতার একটি ঘর হলেই হবে।ব্রোডিং এর জন্য ১০০ ওয়াডের চারটা বাল্প হলেই চলবে।

কোন জাতের হাঁস পালন করবেন এবং কোথায় পাবেন।বাংলাদেশে অধীক ডিম উৎপাদন কারি জাতের মধ্যে খাকি ক্যামবেল,জিনডিংও ইন্ডিয়ান রানার এতিনটাই প্রচলিত এগুলো বছরে প্রায় ৩০০ ডিমদেয় ও টানা আড়াই বছর পযন্ত ডিম দেয়। নারায়নগঞ্জে কুতুবপুর ও খুলনার দৌলদপুরে সরকারি হাঁসপ্রজনন কেন্দ্রে আগে বুকিং দিয়ে বাচ্চা সংগ্রহ করতে পারবেন এবং বাংলাদেশের অনেক বেসরকারি হ্যাচারি গরেউঠেছে সেখান থেকে ও বাচ্চা নিতে পারবেন দামটা একটু বেশি কারন সরকারি ভর্তুকি তারা পায় না। একদিন বয়সের হাঁসের বাচ্চা খামারে এনে প্রথমে গ্লুকোজ মিশ্রিত পানি খেতেদিবেন।

একঘন্টা পর নাস্রারি ফিড খেতে দিবেন।পরেরদিন অলভিটামিন যেমন রেনা ডব্লিও এস অথবা যেকোন ভালো কোম্পানির পানির সাথে মিশিয়ে তিনদিন খাওয়াবেন ।15দিন বয়সে বুকে চামরায় এক সিসিকরে ডাকপ্লে রোগের টিকা দিতে হবে ।30দিন বয়স থেকে গ্রোয়ার খাবার দিতে হবে।পয়তাল্লিশ দিনবয়সে ডাকপ্লে রোগের ভ্যাকসিন ভোষ্টার ডোজদিতে হবে।মনে রাখবেন যতবার ভ্যাকসিন করবেন ততবারই তিনদিন ভিটামিন দিতে হবে।হাঁসকে চল্লিশ দিন বয়সের আগে পানিতে ছাড়বেন না,তাহলে মূত্যুহার বেড়ে যাবে।হাঁসপালনে খাওয়া ছাড়াপানির কোন প্রয়োজন নেই শুধুমাত্র প্রজনন করাতে পানির প্রয়োজন।

৭০ দিন বয়সে ডাক কলেরা রোগের ভ্যাকসিন দিতে হবে এবং তার একমাস পরে আবার ভোস্টার ডোজদিতে হবে।সাধারনত দুইমাস বয়স হলেই নর মাদি চেনা যায় তখন নরগুলোকে আলাদাকরে ১৫ দিন বয়লার ফিড খাওয়ায়া মাংস হিসেবে বিক্রিকরে ফেলা ভালো।আর যারা প্রজনন করাবেন তারা দশটা মাদির সাথে একটা নর রাখবেন তাহলেই হবে। হাঁসির বয়স চারমাস হয়ে গেলে গ্রোয়ার ফিড বন্ধকরে লেয়ার ফিড দিতে হবে এবং খড়কুটা দিয়ে ঘরের এককোনে ডিম পাড়ার জায়গাকরে দিতে হবে।

মনে রাখবেন কোনহাঁস অসুস্থ হলে সঙ্গে সঙ্গে আলাদাকরে চিকিৎসা দিতে হবে ।ডিমপাড়া হাঁসকে অযথা না জেনে কোন ঔষধ খাওয়াবেন না ।প্রতিদিন সকাল বিকাল থাকার ঘরে জিবানুনাশক স্প্রে করতে হবে এবং খাবার ও পানিরপাত্র জিবানুনাশক দিয়ে ধুয়ে রোধে শুকিয়ে আবার পানিও খাবার দিতে হবে।আজকে কিছুটা লিখলাম চলমান থাকবে।

ফার্মসএন্ডফার্মার/০৭ফেব্রুয়ারি২০২১