হাওরাঞ্চলে ধান ও মাছের সমৃদ্ধির লক্ষ্যে নদী খনন

338

নদী খনন

হবিগঞ্জ : জেলার হাওর এলাকা আজমিরীগঞ্জ উপজেলার কৃষকদের মাঝে এখন আনন্দ বিরাজ করছে। দীর্ঘদিনের দাবির পর পানি উন্নয়ন বোর্ড ভরাট হয়ে যাওয়া বশিরা নদী খনন কাজ শুরু করায় তাদের মাঝে এই আনন্দ। এখন আবার সেখানে দেশীয় মাছের প্রাচুর্য্য দেখা দিবে এবং আগাম বন্যা থেকে বোরো ফসল রক্ষা পাবে এই প্রত্যাশা এলাকার জনসাধারনের।

আজমিরীগঞ্জ উপজেলার কাকাইলেও গ্রামে গেলে দেখা যায়, এক্সাভেটর দিয়ে বশিরা নদীতে চলছে খনন কাজ। দীর্ঘদিন যাবত এই নদীতে পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে। স্থানীয় লোকজন উৎসাহ নিয়ে দেখছে খনন কাজ। খননের পর মাটি দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ভেরিবাঁধ নির্মাণের কাজ। নদীর চারদিকে বিশাল হাওরে কৃষকরা ব্যস্ত বোরো ধানের জন্য জমি প্রস্তুত করতে। খননকৃত এলাকার একদিকে রয়েছে পুরো কাকাইলছেও ইউনিয়ন। প্রকল্প এলাকার মাঝেই রয়েছে হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার মুরাদপুর ইউনিয়ন এবং কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার বৈরাকী ইউনিয়ন।

আজমিরীগঞ্জে’র কাকাইলছেও গ্রামের কৃষক আব্দুল মান্নান বলেন, বশিরা নদী খনন হলে তারা সহজেই পানি সেচ দিতে পারবেন। এতে করে তাদের ধান উৎপাদনের খরচ অনেক কমে যাবে। নদী এবং হাওরে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। বর্ষায় নৌকা চলাচলে বিঘ্ন ঘটবে না। ফলে তারা ব্যাপকভাবে উপকৃত হবেন। এই প্রকল্প গ্রহণের জন্য তিনি সরকারকে ধন্যবাদ জানান।

একই গ্রামের কৃষক বাচ্চু মিয়া জানান, হাওরের ফসলের উপর ভিত্তি করেই তাদের সারা বছর চলতে হয়। কিন্তু অনেক সময় পাকা ধান তোলা যেত না আগাম বন্যার জন্য। সেচের জন্য করতে হয় অনেক কষ্ট। নতুন প্রকল্প গ্রহণ করায় এখন তাদের ফসল রক্ষা পাবে এবং খরচও কমে যাবে।

কৃষব আব্দুন নুর জানান, হাওরের মাঝেই সংগ্রাম করে তাদেরকে বাঁচতে হয়। কিন্তু হাওরবাসীর দুঃখ দেখার কেউ নেই। বশিরা নদী খনন করার উদ্যোগ গ্রহণে এখন তারা স্বচ্ছলতার স্বপ্ন দেখছেন। ফসলের অনিশ্চয়তায় অনেকেই পেশা ছেড়ে শহরে চলে গেছেন। এখন আর কেউ শহরে না গিয়ে এলাকায় থেকে কাজ করার চেষ্টা করবেন। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে আবার সবাই নতুন আশায় মাঠে নামবেন।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ১৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে বশিরা নদী খনন কাজ শুরু হয়েছে। তবে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রকল্পের কাজ উদ্বোধন হয়নি। নদীর ১৭.৫ কিলোমিটার খনন করা হবে। একই সাথে ডুবন্ত বাঁধ তৈরি করা হবে ১৪ কিলোমিটার। জলকাঠামো থাকবে দু’টি। একটি রেগুলেটর এবং একটি কজ ওয়ে। কজ ওয়ের ফলে নৌকা চলাচলের জন্য কোন বাঁধ কাটতে হবে না। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে আগাম বন্যা থেকে রক্ষা পাবে সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর জমির ফসল। পাশাপাশি সেচের আওতায় আসবে ৭ হাজার হেক্টর জমির ফসল।

হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী এম এল সৈকত জানান, বশিরা নদী ভরাটের ফলে আগাম বন্যায় হাওরের পাকা ফসল অনেক সময় তলিয়ে গেছে। কৃষকরা সেচের জন্য ব্যয় করত একর প্রতি ৩ হাজার টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে একর প্রতি সেচের খরচ হবে ৮শ’ থেকে এক হাজার টাকা। পাশাপাশি বাড়বে মাছের উৎপাদন। রক্ষা পাবে জীব বৈচিত্র্য। শুকনো মৌসুমে সেচের জন্য অভাব হবে না পানির। তৈরী করতে হবে না দীর্ঘ ড্রেন। ফলে ধান উৎপাদনের খরচও সাশ্রয় হবে।

তিনি আরও জানান, এই প্রকল্পে হবিগঞ্জের ২ উপজেলার দুটি ইউনিয়ন এবং কিশোরগঞ্জের একটি উপজেলার একটি ইউনিয়নের অন্তত ৫০ হাজার কৃষক উপকৃত হবেন।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, নতুন এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বানিয়াচং আজমিরীগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের অন্তত ৪০টি গ্রামের লোকের স্বচ্ছলতা আসবে। আগাম বন্যায় তলিয়ে যাবে না ফসল। আবার পানি নিষ্কাশনেরও সুযোগ থাকবে। বোরো ধানের পাশাপাশি মাছ, হাস ও গবাদিপশুপালনসহ কৃষিভিত্তিক বিভিন্ন কর্মকান্ড বৃদ্ধি পাবে।বিএসএস

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন