ভোরের শিশির জমা ঘাস মাড়িয়ে কাধে লাঙল নিয়ে কৃষক তার একজোড়া গরু নিয়ে ছুটেছে তার জমির উদ্দেশ্যে। বাংলাদেশের গ্রামের কথা মনে হলে এই একটা আবছা কল্পনা ভেসে আসে আমাদের মস্তিষ্কে। কিন্তু প্রযুক্তির উৎকর্ষতা বাপ-দাদাদের আমলের জমি চাষের সেই গরু লাঙল এর জায়গায় আমাদের দিয়েছে ট্রাক্টার আর পাওয়ার ট্রিলার।
ঝিনাইদহের জেলা প্রাচীন কাল থেকেই চাষাবাদ ও ফসল উৎপাদনের এক অপার সম্ভাবনার স্থান। জেলার বারোবাজারের সবজি, বালিয়াডাঙ্গার ফুল চাষ, দুলাল মুন্দিয়ার পান, কোলা – কালা এলাকার ধানের আবাদ সবসময়ই কালীগঞ্জের কৃষিতে দারুণ ভূমিকা রেখে চলেছে। আর এই চাষাবাদ করতে প্রয়োজন হয় চাষ জমি কর্ষনের। আর সেই কাজটি করা হতো লাঙল গরু দিয়ে। আজ থেকে পনেরো বা বিশ বছর পিছনে ফিরে দেখলে দেখা যেতো এলাকার প্রতিটি চাষীর ঘরে লাঙল গরু ছিলো। যা চাষীরা তাদের সন্তানের মত ভালো বাসতো ও যত্ন নিতে। বর্তমানে সেই লাঙল গরুর জায়গাটি দখল করে নিয়েছে ট্রাক্টর।
অল্প সময়ে অধিক জমি চাষাবাদ করা যায় বলে আজ ট্রাক্টরের কদর অনেক বেশি। জেলায় ইরি মৌসুম কে সামনে রেখে শুরু হয়েছে জমি চাষ। দিন রাত এক করে যন্ত্র গুলো চষে বেড়াচ্ছে মাঠের পর মাঠ কৃষি জমি। তারপরও এখনো দেখা মিলছে গ্রাম বাংলার সেই আইকনিক লাঙল গরু দিয়ে জমি চাষ। হয়ত আরো পাঁচ দশ বছর পরে পরবর্তী প্রজন্ম হয়ত লাঙল চিনবে শুধু বইয়ের পাতায় কিংবা জাদুঘরের ছবিতে। এখন আর চোখে পড়ে না গরুর লাঙল দিয়ে চাষাবাদ। জমি চাষের প্রয়োজন হলেই অল্প সময়ের মধ্যেই পাওয়ার টিলারসহ আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে চালাচ্ছে জমি চাষাবাদ।তাই যারা লাঙল গরু খাটিয়া জমি চাষ কে পেষা হিসাবে নিয়েছিলো তারাও এখন পেশা বদলি করে অন্য পেশায় ঝুঁকছেন। ফলে দিন দিন কমে যাচ্ছে গরু, লাঙল, জোয়াল দিয়ে জমিতে হাল চাষ। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ঝনঝনিয়া গ্রামের কৃষক আইয়ুব হোসেন জানান, আধুনিক যন্ত্রপাতির থেকে গরুর লাঙলের চাষ বেশ ভাল হয়।জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি ও ফসলের চাষাবাদ করতে সার, কীটনাশক সাশ্রয় পায়। কষ্ট হলেও গরু দিয়ে হাল চাষ করতে খুব ভালো লাগত। এখন মনে পড়লেই কষ্ট হচ্ছে।
প্রযুক্তির এই যুগে লাঙল দিয়ে চাষাবাদ গ্রামীণ ঐতিহ্যকে স্মরণ করিয়ে দেয়। ফিরে পাব না আর সেই পুরনো দিনগুলো। এভাবেই ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের গ্রামবাংলার ঐতিহ্য।
ফার্মসএন্ডফার্মার/১১ডিসেম্বর২০২০