কাউকে মারার ক্ষমতা নেই তার, একদমই নির্বিষ। কিন্তু তার ক্ষিপ্রতা বিষধর সাপকে হার মানায়। সব সাপ দেখতে গোল, কিন্তু এই সাপ রেগে গেলে নিজেকে একেবারে চ্যাপ্টা আকার ধারণ করতে পারে। সাপটির নাম দুধরাজ।
এই সাপের ইংরেজী নাম- Copper Headed Trinket Snake, বৈজ্ঞানিক নাম- Coeloganathus Boie। অত্যন্ত সুন্দর এই দুধরাজ একটি নির্বিষ সাপ। নামে দুধরাজ হলেও সে যেমন দুধ দেয় না, তেমনি দুধ খায়ওনা। শুধু দুধরাজ কেনো পৃথিবীর কোনো সাপ চুষে কিছু খেতে পারে না। কারণ সাপের জিহ্বা ভাগ করা থাকে। তাই দুধরাজও দুধ খেতে পারে না।
নির্বিষ সাপরা সাধারণত শান্ত প্রকৃতির হয়। তবে দুধরাজ খুবই হিংস্র প্রকৃতির। সে রেগে গেলে বা ভয় পেলে তেড়ে এসে কামড় বসায়। তবে এদের কামড়ে মানুষ মারা যায় না, কারণ বিষ নেই। এক সময় প্রচুর দেখা গেলেও বর্তমানে তেমন একটা দেখা মেলে না; কারণ মানুষ সাপ দেখলেই মেরে ফেলে।
প্রচলিত একটি ভ্রান্ত ধারণা আছে যে এই সাপ গরু বা ছাগলের উলান থেকে দুধ খেয়ে ফেলে তাই এই সাপকে দেখলেই গ্রামের মানুষ মেরে ফেলে। যদিও কোন সাপেই দুধ খায় না কারণ সাপের জিহ্বা এমনভাবে বিভক্ত দুধ চুষে খাওয়া সম্ভব নয়। এই সাপ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় যে কাজ করে, তা আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষই জানেন না। দুধরাজের প্রিয় খাবার ইঁদুর।
কৃষি বিভাগের তথ্য মতে ইঁদুর প্রতি বছর প্রায় হাজার কোটি টাকার রবিশস্য খায়। কিন্তু দুধরাজ খায় ইঁদুর। এতে কৃষকের উপকার হয়। ইঁদুর ছাড়াও দুধরাজের প্রিয় খাবারের তালিকায় আছে গিরগিটি, কাঠবিড়ালি এবং পাখির বাচ্চা।
দুধরাজ সম্পর্কে ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার ও গবেষক আদনান আজাদ আসিফ বলেন, এই সাপটি নির্বিষ। কিন্তু তার ক্ষিপ্রতা বিষধর সাপকে হার মানায়। সব সাপ দেখতে গোল, কিন্তু দুধরাজ সাপ রেগে গেলে নিজেকে একেবারে চ্যাপ্টা আকার ধারণ করতে পারে।
তিনি বলেন, একটা সময় দেশের সব জায়গায় এদের দেখা গেলেও বর্তমানে তেমন দেখা যায় না। আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য সাপ বাঁচিয়ে রাখা জরুরি। পরিবেশে ভারসাম্য রক্ষার স্বার্থে সাপ রক্ষা করতে হবে।
বন্যপ্রাণি বিশেষজ্ঞ ড. মনিরুল এইচ খান বলেন, পৃথিবীর কোন সাপই দুধ চুষে খেতে পারে না। গরুর উলুনে এক ধরনের পোকায় কামড় দেয় যার ফলে কামড়ের দাগ পড়ে কিন্তু সাধারণ কৃষক এই দাগ দেখেই ভ্রান্ত ধারণা থেকে প্রচার করে সাপে গাভীর দুধ খায়।
সাপটি সম্পূর্ণভাবে বিষমুক্ত, বিপুল অংকের রবি ফসল বাঁচাতে এই সাপের প্রজনন বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা উচিত। এর জন্য তার আবাসস্থল ধ্বংস এবং প্রজনন সমস্যা দূর করতে হবে।
ফার্মসএন্ডফার্মার২৪/জেডএইচ