হিমায়িত মাছ রপ্তানির ক্ষেত্রে মাইক্রোবায়োলজিক্যাল পরীক্ষার ফি দ্বিগুণেরও বেশি বাড়িয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এতে হিমায়িত মাছ রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন রপ্তানিকারকরা।
অভিযোগ রয়েছে, মাছ রপ্তানিকারকদের সঙ্গে কোনো আলাপ না করেই মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা একতরফাভাবে ফি বাড়িয়েছেন।
জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে হিমায়িত মাছ রপ্তানির আগে প্রতিটি চালান থেকে নমুনা প্রেরণ করে মাইক্রোবায়োলজিক্যাল এবং অ্যান্টিবায়োটিক পরীক্ষা করার নিয়ম রয়েছে। মৎস্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষে মৎস্য পরির্দশন ও মাননিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এই পরীক্ষাগুলো করে থাকে।
রপ্তানিকারকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, হিমায়িত মাছ রপ্তানির ক্ষেত্রে মাইক্রোবায়োলজিক্যাল ছয়টি পরীক্ষা এবং অ্যান্টিবায়োটিক পরীক্ষা বাধ্যতামূলক। প্রতিটি চালান থেকে অন্তত পাঁচটি নমুনা পরীক্ষা করতে হয়। এত দিন মাইক্রোবায়োলজিক্যাল ছয়টি পরীক্ষার জন্য সাত হাজার ৫০০ টাকা ফি নির্ধারিত ছিল।
গত ২৪ ডিসেম্বর মৎস্য মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনের (এসআরও) মাধ্যমে এসব পরীক্ষার ফি বাড়িয়ে দ্বিগুণেরও বেশি করা হয়েছে।
রপ্তানিকারকরা জানান, বর্তমানে রপ্তানিযোগ্য প্রতিটি চালানের পাঁচটি করে নমুনা পরীক্ষার জন্য খরচ হচ্ছে ১৮ হাজার ৭৫০ টাকা। অ্যান্টিবায়োটিক পরীক্ষার ফি ১৮ হাজার ৫০০ টাকা অপরিবর্তিত রয়েছে। এসব পরীক্ষার ফির সঙ্গে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাটও রয়েছে।
রপ্তানিকারকরা অভিযোগ করে বলেন, আগে মাইক্রোবায়োলজিক্যাল ছয়টি পরীক্ষার জন্য একটি রিপোর্ট দেওয়া হতো। এখন এই ছয়টি পরীক্ষা পৃথকভাবে ফি দিয়ে করতে হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চট্টগ্রামের একজন রপ্তানিকারক বলেন, ‘সরকারের রাজস্ব বাড়াতে এখন নানাভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে ফি আদায় করছে। এতে রপ্তানিকারকরা বিড়ম্বনায় পড়ছেন। বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে রপ্তানি মূল্য নির্ধারণ করতে হয়। রপ্তানি পণ্য পরীক্ষার জন্য এত ফি দিতে হলে রপ্তানি ব্যয় বেড়ে যায়। এতে করে হিমায়িত মাছের বাজার হারানোর শঙ্কা থাকে আমাদের।’
বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা ফি বাড়ানোর সময় স্টেকহোল্ডার বা মাছ রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশন নেতাদের সঙ্গে মৎস্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা কোনো আলোচনাই করেননি বলে অভিযোগ করেন মাছ রপ্তানিকারকরা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএফইএ) পরিচালক দুদুল কুমার দত্ত বলেন, ‘মাছ রপ্তানি করতে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের প্রতিযোগিতা করতে হয়। বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষার ফি বাড়ানোর কারণে আমাদের ‘ওভারহেড কস্ট’ বেড়ে যায়। ইউরোপের অনেক দেশে মাছ রপ্তানির ক্ষেত্রে কিছু কিছু পরীক্ষা না করালেও চলে। কিন্তু মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ওই সব পরীক্ষা করাতে বাধ্য করেন রপ্তানিকারকদের। এতেও খরচ বৃদ্ধি পায়।’ তিনি আরো বলেন, ‘সরকার মাছ রপ্তানির জন্য একদিকে সাবসিডি (ভর্তুকি) দেয়, অন্যদিকে পরীক্ষার ফি বাড়িয়ে আমাদের খরচ বাড়ায়। এ জন্য আমরা অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে এই বর্ধিত ফি কমানোর দাবি জানিয়েছি।’
কয়েক বছর ধরে হিমায়িত চিংড়ি ও অন্যান্য মাছ রপ্তানির পরিমাণ কমছে উল্লেখ করে ব্যবসায়ীরা জানান, মাছ রপ্তানি বাড়ানোর উদ্যোগ না নিয়ে সরকার উল্টো বিভিন্ন ফি বাড়িয়ে মাছ রপ্তানিকে বাধাগ্রস্ত করছে। এসব কারণে চলতি অর্থবছরও মাছ রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
বাংলাদেশ নন-পেকার এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বাবুল আকতার বলেন, ‘মাছ রপ্তানির অবস্থা এমনিতেই খারাপ। প্রতিবেশীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় আমরা টিকতে পারছি না। এর পরও বিভিন্ন পরীক্ষার ফি বাড়িয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর। মাছ রপ্তানি বাড়াতে হলে সরকারের এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।’
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন